>>> হালাল উপার্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে হবে <<<
নবী রাসূলগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানো ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।
রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন;
مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَم كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আর নিশ্চয় আল্লাহর নাবী দাঊদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (সহীহুল বুখারী: ২০৭২; ২০৭৩)
.
আবূ হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন;
لأنْ يَحْتَطِبَ أَحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ أَحَدًا فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ
তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ী সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া উত্তম, কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে। কেউ তা দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। (সহীহুল বুখারী: ২০৭৪)
.
যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ أَحْبُلاً، فَيَأْخُذَ حُزْمَةً مِنْ حَطَبٍ فَيَبِيعَ، فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهِ وَجْهَهُ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أُعْطِيَ أَمْ مُنِعَ
তোমাদের কেউ রশি নিয়ে লাকড়ীর আটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তা’আলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চাইতে উত্তম! লোকজনের কেউ তা দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। (সহীহুল বুখারী: ২০৭৫)
.
ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত;
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ وَالْمَسْأَلَةَ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى فَالْيَدُ الْعُلْيَا هِيَ الْمُنْفِقَةُ وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের উপর থাকা অবস্থায় সদাকাহ কর ও ভিক্ষা করা হতে বেঁচে থাকা আর ভিক্ষা করা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেনঃ উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের। (সহীহুল বুখারী: ১৪২৯)
.
>>> নিজের উপার্জন সর্বোত্তম জীবিকা <<<
রাফে বিন খাদীজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ؟ قَالَ عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন উপার্জন সবচেয়ে বেশি পবিত্র?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হল, যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়।’’ (আহমাদ: ১৭২৬৫; ত্বাবারানী: ৪২৮৫; হাকেম: ২১৬০; সহীহুল জামে: ১০৩৩)
.
>>> নিজের সন্তানও নিজের উপার্জন <<<
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
وَلَدُ الرَّجُلِ مِنْ كَسْبِهِ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِهِ، فَكُلُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
কোনো ব্যক্তির সন্তান তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত বরং তার সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পদ থেকে ভোগ করতে পারো। (আবূ দাউদ; ৩৫২৯)
.
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلْتُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ وَإِنَّ أَوْلاَدَكُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ
তোমাদের নিজেদের উপার্জনই সর্বোত্তম জীবিকা আর তোমাদের সন্তানগণও তোমাদের নিজস্ব উপার্জন। (তিরমিজী: ১৩৫৮, সহীহ)
.
আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত;
أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي مَالًا وَوَلَدًا، وَإِنَّ وَالِدِي يَحْتَاجُ مَالِي؟ قَالَ: أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ، إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদও আছে সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেনঃ তুমি এবং তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন খাবে। (আবূ দাউদ: ৩৫৩০)
>> হালাল উপার্জনে বারাকত লাভ হয় <<<
উপার্জনে বরকত লাভ করতে হলে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেকেই বারাকাত মন্ডিত করেন। এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের বারাকাত নষ্ট করে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ يَأْخُذْ مَالاً بِحَقِّهِ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ وَمَنْ يَأْخُذْ مَالاً بِغَيْرِ حَقِّهِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ
যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তাকে এর মধ্যে বারাকাত দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি অসৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে; সে অনেক খাচ্ছে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারছে না। (সহীহ মুসলিম: ২৩১১)
0 Comments