Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমাদের কি করনীয়


<<<সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমাদের কি করনীয়?>>>
===========================
সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমরা অনেকে শির্কি ও বিদআতি কাজ করে থাকি যেমন তাবিজ জুলানো, ঘড়ে এই কাজ করা যাবেনা ঐটা ধরা যাবেনা কুলক্ষণ ভেবে থাকি তা থেকে দূরে থাকি, বাচ্চা আল্লাহ দিয়েছে, সেই আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখি, এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সুন্নতি পদ্ধতি কি তা জানার চেষ্টা করি এবং সেই মোতাবেক আমল করি।


সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে কোন কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে, আল্লাহ পাকের নিকট সেই বাচ্চার সুস্থতার জন্য দোয়া করা।

وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।

#সন্তান-সন্ততি আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। এটি যে কত বড় দান, তা কেবল সেই দম্পতিই জানে, যাদের আল্লাহ এই নেয়ামত থেকে মাহরূম রেখেছেন।

#আল্লাহ বলেন:

“তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা, তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।“

(( সূরা শূরা/৪৯-৫০))))

#যার কোলে ও যার ঘরে এই নেয়ামতের আগমন ঘটবে, সেই সৌভাগ্যবান। আর তার জন্য ইসলাম দিয়েছে কিছু উপদেশ কিছু আদেশ যা প্রমাণ করে যে ইসলাম একটি সর্বজনীন সামাজিক ধর্ম এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। আমরা এখানে তারই কিছুটা বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।

১,,- যে এই আশিসে ধন্য হবে, তাঁকে অভিনন্দন প্রদান করা: আল্লাহ বলেন:

وَ بَشَّرُوهُ بغلامٍ عليمٍ
“ অতঃপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিলো।“

((যারিয়াত/২৮))

তাছাড়া ইসলামে প্রত্যেক আনন্দদায়ক বিষয়ে অভিনন্দন জানানো প্রমাণিত। যেমনটি কাআব ও তাঁর দুই সাথীর তওবা কবুলের ঘটনায় উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের তওবা কবূল করলে এবং এ বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবাগণ তাদের অভিনন্দন জানান।

((বুখারী ও মুসলিম)))

অভিনন্দন জানানোর সময় এই দুয়া বলা ভাল:

‘‘বারাকাল্লাহু লাকা ফিল্ মাওহূবি লাকা, ওয়া শাকারতাল ওয়াহিবা, ওয়া বালাগা আশুদ্দাহু, ওয়া রুযিকতা বিররাহু”।

অর্থ: ‘‘আল্লাহ তোমার জন্য এই সন্তানে বরকত দান করুন, সন্তান দানকারী মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন, সন্তানটি পূর্ণ বয়সে পদার্পণ করুক এবং তার সদাচারণ লাভে তুমি ধন্য হও”।

((হিসনুল মুসলিম বাংলা/১৬২)))

##দেশ ও সমাজে যদি নবজাতককে হাদিয়া দেওয়ার প্রথা থাকে তাহলে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয় বরং সমাজের রীতি অনুযায়ী শিশুকে হাদিয়া দেওয়া অবৈধ নয়।

((ইবনে উসাইমীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ২/৩২৮)))

২,,,#কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট না হওয়া: কারণ তাও আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট হওয়া যেমন ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া তেমন জাহেলী যুগের লোকদের প্রথা সমর্থন করা। কারণ তারা মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মন্দ মনে করতো। আল্লাহ বলেন: “তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়।“

(( নাহল/৫৮)))

#৩- বাচ্চার কানে আযান দেওয়া: আবু রাফে তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:

” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর পুত্র হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি, যখন ফাতেমা (রাযি:) তাকে জন্ম দেয়।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন।

((তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, অনুচ্ছেদ নং ১৫, হাদীস নং ১৫৫৩))

অন্য কিছু হাদীসে বাম কানে ইকামতের বর্ণনা এসেছে কিন্তু সেই হাদীসগুলি নিতান্তই দুর্বল।

((দেখুন, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯০)))

#তাই সুন্নত হচ্ছে, নবজাতকের কানে আযান দেয়া। ডান কানে আযান আর বাম কানে একামন এমনটি নয়।

প্রকাশ থাকে যে অনেক আলেমের মতে নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার হাদীসগুলির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তাই তারা এই আযান দেয়াকেও অবৈধ বলেছেন। আর অনেকে হাদীসগুলি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা হওয়ায় ও পৌনঃপুনিক ভাবে উম্মতের মাঝে আমলটি সচল থাকায় জায়েজ বলেছেন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।

((বিস্তারিত দেখুন, আউলাদ আউর ওয়ালেদাইন কি কিতাব/৭৭-৭৮))

#বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আযান দিতে হবে। যেন তার কানে আল্লাহর মহত্ব বিষয়ক প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে এবং শয়তান দূরে চলে যায় ।

৪,,,#তাহনীক করা: খেজুর চিবিয়ে পানির মত করে শিশুর মুখে দেয়া যেন এর কিছুটা তার পেটে প্রবেশ করে। এটাকেই তাহনীক বলা হয়। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোন মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়।

((নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯, ফাত্হুল বারী, ৯/৭২৮))

#তাহনীক সৎ ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া উত্তম।

((নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯))

#তাহনীক করা সুন্নত। আবু মুসা (রাযি:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘‘আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তার নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তার জন্য বরকতের দুয়া দেন, তার পর বাচ্চাকে আমাকে ফিরিয়ে দেন।“

((বুখারী, অধ্যায়, আক্বীক্বা, অনুচ্ছেদ নং ১, হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম নং ২১৪৫))

#তাহনীক সুন্নত এর কারণ যাই হোক বর্তমান মেডিকেল তথ্যানুযায়ী এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সাধারণত: নবজাতকের বিশেষ করে তার ওজন যদি ২.৫ কে.জির কম হয় তাহলে এমন শিশুর মধ্যে গ্লুকোজ স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়।

এই তাহনীক করার মাধ্যমে শিশুর এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।

((ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর, ফাতাওয়া নং ১০২৯০৬))

#৫- বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো: মাতৃদুগ্ধ পান করা বাচ্চার অধিকার। তাছাড়া এই দুধ পান করার লাভ এবং এর গুরুত্ব বর্তমান মেডিকেল ও সমাজে দারুণ ভাবে স্বীকৃত। আল্লাহ বলেন: “আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।“

((বাক্বারা/২৩৩))

#৬- প্রথম দিনে বাচ্চার নামকরণ: বাচ্চার নাম যেমন জন্মের সপ্তম দিন অর্থাৎ আক্বীক্বার দিন নির্ধারণ করা সুন্নত তেমন প্রথম দিনেও নাম রাখা বৈধ।

#নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

” وُلد لي الليلةَ غلامٌ فسمّيته باسمِ أبي إبراهيم “
“রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তার নাম ইব্রাহীম রেখেছি”।

(( বুখারী , অধ্যায় জানাযাহ, হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম, অধ্যায়, ফাযাইল হাদীস নং ২৩১৫)))

৭-,,,,সপ্তম দিনে আক্বীকা ও নামকরণ: সেই জন্তুকে আক্বীকা বলা হয়, যা বাচ্চার জন্মে সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হয়”।

(ফাতহুল বারী,৯/৭২৬)))

বাচ্চার আক্বীকা এমন ‌এক প্রকার কুরবানী, যা সন্তান অর্জন কালে আল্লাহর এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হয়।

((ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ,২/৩২৬)))

#ক-

আক্বীকার বিধান: আক্বীকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই যে ব্যক্তি আক্বীকা করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন অবশ্যই আক্বীকা করে। আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর আক্বীকা জরুরী নয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” مع الغلامِ عقيقةٌ فأهريقوا عنه دماً و أميطوا عنه الأذى “

অর্থ: ‘‘বাচ্চার আক্বীকা আছে। তাই তোমরা তার পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তার মাথার চুল পরিষ্কার কর।

((বুখারী, আক্বীকা, নং৫৪৭১))

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: ‘‘প্রত্যেক বাচ্চা তার আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”।

((সহীহ ইবনে মাজাহ,অধ্যায়, যাবাইহ, নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ))
===

#আল্লাহ যেন আমাদের কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করার তৌফীক এনায়েত দান করে এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে বিদআতি আমল বাদ দিয়ে সুন্নাহ পদ্ধতি মোতাবেক কাজ সম্পাদন করতে পারি।




Post a Comment

0 Comments