Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সন্তানের উপর পিতামাতার হক

>>> সন্তানের উপর পিতামাতার হক ১ম পর্ব <<
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের পরিচয়ঃ
পিতামাতার বাধ্য বা অনুগত হওয়া বলতে বুঝায়, অবাধ্য না হওয়া। কুরআন কারীমে সেটাকে  البرবলা হয়েছে। অর্থ সদ্ব্যবহার করা; সদাচারণ করা; বাধ্য বা অনুগত হওয়া। যেমনঃ আল্লাহর বাণী;
وَبَرًّا بِوَالِدَيْهِ وَلَمْ يَكُنْ جَبَّارًا عَصِيًّا
আর সে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতো আর অহংকারী, অবাধ্য ছিল না। (মারইয়াম; ১৯/১৪)
.
ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সৎকর্মশীল বলে নামকরণ করেছেন এই জন্য যে, তারা পিতামাতাও সন্তানদের সাথে সদ্ব্যবহার করেছেন। তিনি আরও বলেন: যেমনিভাবে তোমার সন্তানের উপর তোমার অধিকার রয়েছে, ঠিক অনুরূপভাবে তোমার উপরও তোমার সন্তানের অধিকার রয়েছে। (লিসানুল আরব: ৪/৫৩)

পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার/সদাচরণ করাঃ
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টি ইসলামী শরীয়তের মহান সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত; এটা হল অনুগ্রহের স্বীকৃতি, মর্যাদা সংরক্ষণ, শরীয়তের পরিপূর্ণতার উপর প্রমাণ এবং তা অন্তর্ভুক্ত করে সকল প্রকার অধিকারকে। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টি তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্বের পর গুরত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন;
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না আর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। (আন-নিসা, ৪/৩৬)
.
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ  أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তুমি বল, তোমরা এসো, আমি পাঠ করে শুনাই, তোমাদের রব তোমাদের উপর কী কী হারাম করেছেন, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না; আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (আন‘আম; ৬/১৫১)
.
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا وَبِرُّ الْوَالِدَيْنِ ثُمَّ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন; কোন্ আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ যথা সময়ে সালাত আদায় করা, তারপর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (সহীহুল বুখারী: ৭৫৩৪, ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০ সহিহ মুসলিম: ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫)
.
আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
أَفْضَلُ الأَعْمَالِ - أَوِ الْعَمَلِ - الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا وَبِرُّ الْوَالِدَيْنِ
আমল সমূহের মধ্যে বা আমলের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হলো সঠিক সময়ে স্বলাত আদায় করা এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। (সহিহ মুসলিম: ১৫৭)


>><
পিতা-মাতার শির্ক এর নির্দেশ দিলে আনুগত্য করা যাবে নাঃ
وَوَصَّيْنَا الإنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلا تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য, তবে যদি তারা তোমার উপর প্রচেষ্টা চালায় আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না; আমার নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব, তোমরা যা করতে। আল-আনকাবূত, ২৯/৮
.
মুসআব ইবনু সা'দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত আছে, তিনি বলেন;
أُنْزِلَتْ فِيَّ أَرْبَعُ آيَاتٍ فَذَكَرَ قِصَّةً فَقَالَتْ أُمُّ سَعْدٍ أَلَيْسَ قَدْ أَمَرَ اللَّهُ بِالْبِرِّ وَاللَّهِ لاَ أَطْعَمُ طَعَامًا وَلاَ أَشْرَبُ شَرَابًا حَتَّى أَمُوتَ أَوْ تَكْفُرَ قَالَ فَكَانُوا إِذَا أَرَادُوا أَنْ يُطْعِمُوهَا شَجَرُوا فَاهَا فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ‏:‏ ‏(‏ووَصَّيْنَا الإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ‏)‏ الآيَةَ
আমার প্রসঙ্গে চারটি আয়াত অবতীর্ণ হয়। তারপর তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। সা'দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মা বলল, আল্লাহ তা'আলা কি (পিতা-মাতার) সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেননি? আল্লাহর কসম যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না মরব কিংবা তুমি কুফরী না করবে (ইসলাম ত্যাগ না করবে) ততক্ষণ পর্যন্ত আমি পানাহার করব না। বর্ণনাকারী বলেন; লোকেরা তাকে আহার করাতে চাইলে কাঠ দিয়ে তার মুখ ফাক করে তাকে আহার করাতো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ): “আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে”।  (আল-আনকাবূত, ২৯/৮); (তিরযিযি: ৩১৮৯; সহীহ মুসলিম: ৬১৩২)
.
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
আর যদি তারা (পিতা-মাতা) তোমার উপর প্রচেষ্টা চালায় আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না; এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে এবং অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়েছে, তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে। লুকমান, ৩১/১৫


>>
পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে ধমক না দিয়ে সম্মানজনক কথা বলতে হবেঃ
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا
আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলবে। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। তোমাদের অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে তোমাদের রবই অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল। (আল-ইসরা, ১৭/২৩-২৫)
.
আবূ হুরায়রা  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; তিনি বলেন;
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ ‏"‏ ثُمَّ أَبُوكَ ‏"‏‏
এক লোক রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো; হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ অতঃপর কে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃ অতঃপর তোমার পিতা। (সহীহুল বুখারী: ৫৯৭১; সহিহ মুসলিম: ৬৩৯৪)
.
ইবনু বাত্তাল (রহঃ) এই হাদিসের ব্যাখ্যা করার সময় বলেন: “তার দাবি হল, মাতার জন্য পিতার তিন গুণ পরিমাণ সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার থাকবে; তিনি বলেন: আর এটা গর্ভধারণের কষ্ট, অতঃপর প্রসব বেদনার কষ্ট এবং তারপর দুধ পান করনোর কষ্টের জন্য; কেননা, এই কষ্টগুলো এককভাবে মা করে থাকেন; অতঃপর পিতা লালনপালন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মায়ের সাথে অংশগ্রহণ করেন। (ফাতহুল বারী: ১০/৪১৬)
.
কখনও কখনও বলা হয়: মাতাকে সদ্ব্যবহার, ইহসান ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে প্রাধান্য ও মর্যাদা দেওয়া হবে; আর আনুগত্যের ক্ষেত্রে পিতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে; কারণ পিতা হলেন ঘরের কর্তা ও নৌকার মাঝি।
.
মিকদাম ইবনে মাদীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
إِنَّ اللَّهَ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ، ثُمَّ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ، ثُمَّ يُوصِيكُمْ بِآبَائِكُمْ، ثُمَّ يُوصِيكُمْ بِالأَقْرَبِ فَالأَقْرَبِ
আল্লাহ তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর নৈকট্যের ক্রমানুসারে নিকটাত্মীয় সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৬৬১; আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬০)
.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 
رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ
পিতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা'আলার সস্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে। (আত তিরমিজী: ১৮৯৯)
.
পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আঃ
رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
রাব্বির্ হাম্ হুমা- কামা- রাব্বাইয়া-নি- সোগি-রা-
হে আমার রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহমত করুন, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছে। আল-ইস্‌রা, ১৭/২৪
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
রাব্বানাগ্ ফির্ লী- ওয়ালি ওয়ালি দাইইয়া ওয়ালিল্ মূ-মিনী-না ইয়াওমা ইয়াকু-মুল্ হিসা-ব
হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে ও মুমিনদেরকে সেদিন ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। ইবরাহীম, ১৪/৪১
.
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلا تَبَارًا
রাব্বিগ্ ফির্ লি- ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়া লিমান্ দাখালা বাইতিয়া মু-মিনাও ওয়ালিল্ মু-মিনি-না ওয়ালিল্ মু-মিনা-তি ওয়ালা- তাযিদিয্ য্বো-লিমি-না ইল্লা- তাবা-রা-
হে আমার রব! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন, আর যে মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে তাকেও ক্ষমা করুন এবং মুমিন পুরুষদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি করবেন না।  (নূহ, ৭১/২৮)


>>><<
পিতামাতার অবাধ্যতাঃ
ইসলামে পিতামাতার অবাধ্য হতে নিষেধ করেছেন আর তা কবীরাগুনাহ সমূহের মধ্যে অন্যতম আর তা শিরকের পর বড় অপরাধ। পিতামাতার জন্য এই মর্যাদা, বিশেষ করে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে জোরালো নির্দেশ এসেছে এবং তাদের অবাধ্য হতে নিষেধ করা হয়েছে। অবাধ্যতাকে আরবীতে  العقوقবলা হয়। অর্থাৎ অবাধ্য হওয়া, অমান্য করা। শব্দটি  البر (তথা সদ্ব্যবহার) শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দ।

ইবনু মানযূর রহ. বলেন: এর অর্থ হচ্ছে, সে তার পিতার আনুগত্যের লাঠি ভেঙ্গে ফেলল; আর সে তার পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল এবং সে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেনি। (লিসানুল আরব: ১০/২৫৬)
.
তিনি আরও বলেন: হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতামাতার অবাধ্য হতে নিষেধ করেছেন; আরالعقوق (অবাধ্য হওয়া) শব্দটি  "البر"(সদ্ব্যবহার) শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দ; যা মূলত  "العق "শব্দ থেকে এসেছে; অর্থ: ভেঙ্গে ফেলা; কর্তন করা বা ছিন্ন করা। (লিসানুল আরব: ১০/২৫৭)
.
আবু বাকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ
أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ - ثَلاَثًا - الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ أَوْ قَوْلُ الزُّورِ
আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। (১)আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং (৩) মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কিংবা মিথ্যা কথা বলা। (সহীহ মুসলিম: ১৬০)
.
আবু হুরাইরাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ
সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, কার হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে বার্ধক্যজনিত অবস্থায় পেল, এরপরও সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (মুসলিম: ৬৪০৫)
.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
‏مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ ‏نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ
পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা কবীরা গুনাহ। সাহাবাগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেউ কি তার পিতা-মাতাকে গাল-মন্দ করতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কোন ব্যক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয়, প্রতি উত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। কেউ অন্যের মাকে গালি দেয়, জবাবে সেও তার মাকে গালি দেয়। (সহীহুল বুখারী: ৫৯৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৬৪)

Post a Comment

0 Comments