ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহঃ
রহমান, রহীম আল্লাহ নামে শুরু করছি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম অযু ভঙ্গের কারণ জানে কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারণ অধিকাংশ মুসলিম জানে না। অনেকে মনে করে, ঈমান আবার ভঙ্গ হয়ে কিভাবে? ঈমান ভঙ্গের দলীল নিম্নরূপঃ আল্লাহ বলেন-
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالإيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যে কেহ ঈমান আনার পরে আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে আর যার অন্তর কুফরীর জন্য উন্মুক্ত রয়েছে তবে তাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি কিন্তু তার জন্য নয় যাকে বাধ্য করা হয়েছে আর তার অন্তর ঈমানের উপর অবিচল থাকে। (আন্-নাহল, ১৬/১০৬)
উপরের আয়াত প্রমাণ করছে; কেহ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পরও আল্লাহর সাথে কুফরী করার কারণে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে।
ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণ নিম্নরূপঃ
১। শির্ক করাঃ মহান আল্লাহর ইবাদতে অন্যকে শরীক করা অর্থাৎ “মহান আল্লাহর পাওনা তার বান্দাকে দেয়া, স্রষ্টা আর সৃষ্টিকে সমান করে দেয়া্। আল্লাহ বলেন-
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করে, তার জন্য আল্লাহ অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হল জাহান্নাম আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল-মায়িদাহ, ৫/৭২)
২। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানা। অর্থাৎ মহান আল্লাহকে রাজা বাদশাদের সাথে তুলনা করে তাঁকে পাওয়া জন্য পীর-পুরোহীত, গুরু-ঠাকুর অথবা যোগী-সন্নাসী প্রমুখকে ওয়াসীলা বা মাধ্যম ধরা। কুরআনে বাণী-
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ
আর তারা আল্লাহর ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করে যা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না আর উপকারও করতে পারে না, আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী’। (ইউনুস, ১০/১৮)
৩। কাফের ও মুশরেকদেরকে কাফের মনে না করা। অর্থাৎ তাদের সাথে মিতালী করা অথবা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা বৈষয়িক কুসংস্কারকে সমর্থন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ
‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (আত-তওবা. ৯/২৮)। মুশরিক সম্প্রদায় অপবিত্র হওয়ার পর কি করে তাদের মতবাদ গ্রহণীয় হ’তে পারে? তিনি আরও বলেন,
أَنَّ اللهَ بَرِيْءٌ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ وَرَسُوْلُهُ
‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) মুশরিকদের থেকে মুক্ত’ (আত-তওবা, ৯/৩)। অর্থাৎ মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহর কোন দায়দায়িত্ব নেই।
৪। আল্লাহদ্রোহীদের হুকুমকে নবী (ﷺ)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করা। যেমন- কোন কোন লোক মনে করে, এমনকি বলেও থাকে যে, “আরে বাবা! ওসব আইন এ যুগে চলে না।” অথবা “আরে রাখ তোমার হাদিছ! আমাদের পীর সাহেব কম বুঝেন না।” আল্লাহ বলেন-
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
তোমার রবের কসম! তারা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (রাসূলকে) বিচারক হিসেবে মেনে নেয়; অতঃপর তুমি যা ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। (আন-নিসা, ৪/৬৫)
৫। নবী (ﷺ) এর আনীত শারঈতের কোন কিছুর প্রতি বিদ্বেষ পোষন করা। আল্লাহ বলেন-
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
এটা এ জন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন। (মুহাম্মদ, ৪৭/৯)
৬। দ্বীন ইসলামের কোন কিছুকে বিদ্রুপ করা। যেমন- মুসলমানদের দাড়িকে ছাগলের দাড়ির সাথে তুলনা করা, খুনের বদলে খুন বা চোরের হাত কেটে নেওয়াকে বর্বর আইন বলে অবজ্ঞা করা। আল্লাহ বলেন-
قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ
তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর আয়াতসমূহের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ কর না, তোমরা ঈমান আনার পরও অবশ্যই কুফরী করেছ। (আত্-তাওবাহ, ৯/৬৫-৬৬)
৭। যাদু শেখা, শেখানো ও এতে বিশ্বাস করা এবং পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টির লক্ষে যে সব ভাঁওতাবাজী করা হয়। আল্লাহ বলেন-
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ
তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; সুতরাং তোমরা কুফরী কর না। (আল- বাক্বারাহ, ২/১০২)
অত্র আয়াতের শেষের দিকে মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’। (আল- বাক্বারাহ, ২/১০২)
৮। কাফের–মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করা। আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু, আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তবে সে তাদেরই দলভুক্ত হবে, নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। (আল-মায়িদাহ, ৫/৫১)
৯। বেশী বেশী আমল করার দরুন বা অন্য কোন কারণে কোন কোন লোকের জন্যে মুহাম্মদী শরীয়াত না মানা বৈধ, এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করা কুফরী। অর্থাৎ বুযুগী হাছেল হয়ে গেলে আর নামায, রোযার দরকার নেই মনে করা। বা দিল কাবায় নামায আদায় করার আক্বীদা রাখা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
আর যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না আর আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আলে ‘ইমরান, ৩/৮৫)
১০। আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। অর্থাৎ দ্বীন ইসলামের হালাল-হারাম, পাক-নাপাক, নামায-রোযা, তালীম-তারবিয়াত কোন কিছুর ধার ধারে না এমন ব্যক্তি মুসলমান থাকতে পারে না। আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا ۚ إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ
যাকে তার রবের আয়াতসমূহের দ্বারা উপদেশ দেয়া হয় অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব। (আস-সাজদাহ, ৩২/২২)
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল-অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments