বিদআত কাকে বলে ও বিদআতের প্রকারভেদঃ
আভিধানিক অর্থে বিদআত হলো নব আবিস্কৃত ও নব উদ্ভাবন।
পারিভাষিক অর্থে বিদআত হলো দ্বীনে ও ইবাদতের মধ্যে নতুন কোন কিছু সংযোজন করা।
বিদআতের প্রকারভেদঃ বিদআত প্রথমতঃ দুই প্রকারঃ
(১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত।
পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কশীল সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হল তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। হাদীসে এসেছে;
حَدَّثَنِي رَافِعُ بْنُ خَدِيجٍ، قَالَ قَدِمَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَهُمْ يَأْبُرُونَ النَّخْلَ يَقُولُونَ يُلَقِّحُونَ النَّخْلَ فَقَالَ " مَا تَصْنَعُونَ " . قَالُوا كُنَّا نَصْنَعُهُ قَالَ " لَعَلَّكُمْ لَوْ لَمْ تَفْعَلُوا كَانَ خَيْرًا " . فَتَرَكُوهُ فَنَفَضَتْ أَوْ فَنَقَصَتْ - قَالَ - فَذَكَرُوا ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ " إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ دِينِكُمْ فَخُذُوا بِهِ وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ رَأْىٍ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ "
রাফি ইবনু খাদীজ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় আগমন করলেন। লোকেরা খেজুর গাছ তাবীর করত। রাবী বলেনঃ অর্থাৎ খেজুর গাছকে গর্ভদান করত। তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা কি করছ? তারা বলছেন; আমরা এরুপ করে আসছি। তিনি বললেনঃ তোমরা এমন না করলেই বোধ হয় ভাল হয়। রাবী বললেন, সূতরাং তারা তা বর্জন করল। আর এতে খেজুর ঝরে পড়ল অথবা রাবী বলেছেন, তার উৎপাদন কমে গেল। রাবী বলেনঃ লোকেরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এ ঘটনা বলল। তখন তিনি বললেন, অবশ্যই আমি তো একজন মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে যখন তোমাদের আমি কোন আদেশ দেই, তখন তোমরা তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার মতানূসারে বলি, তখন তো আমি একজন মানুষ মাত্র। (সহিহ মুসলিম: ৬০২১)
অন্যত্র রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
أَنْتُمْ أَعْلَمُ بِأَمْرِ دُنْيَاكُمْ
তোমাদের দুনিয়ার ব্যাপারে তোমরাই ভাল জান। (সহিহ মুসলিম: ৬০২২)
এ থেকে বুঝা যায়; পার্থিব বিষয়ে বা দুনিয়া বা জাগতিক বিষয়ে বিদআত তথা নতুন কিছু আবিষ্কার করা যাবে। দুনিয়াবী কাজে আমরা যে কোন কিছ আবিষ্কার করতে পারবো। যেমনঃ মোবাইল, গাড়ী, বিমান, মাদ্রাসা, শার্ট, প্যান্ট, মাইক, ফেইসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
(২) দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত।
দ্বীন ও ইবাদতে নব-আবিষ্কৃত কাজকে বিদআত বলা হয়। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা হয় এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد
যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (সহীহুল বুখারী: ২৬৯৭ সহিহ মুসলিম: ৪৩৮৪)
আবার দ্বীন বা ইবাদতের ক্ষেত্রে ‘বিদআতে হাসানাহ’ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। বরং প্রত্যেক বিদআতই ‘সাইয়্যিআহ’ (মন্দ)। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনের মধ্যে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা আর সকল নতুন জিনিসই বিদআত আর সকল বিদআত-ই-গুমরাহী(পথভ্রষ্ট) আর সকল গুমরাহীর (পথভ্রষ্ট) পরিণাম জাহান্নাম। [নাসায়ী: ১৫৭৮]
রাসূল (ﷺ) দ্বীনের মধ্যে বিদআতের কোন ভাগ করেন নাই বরং সকল বিদআতকে গুমরাহী বলছেন। তাই ভাল বিদআত, মন্দ বিদআত বলে কিছু নেই।
0 Comments