ইমামে আযম আমাদের একমাত্র ইমাম হযরত মুহাম্মাদ ( ﷺ ) অন্য কেউ নয়
==============================
=======================
আল্লামাহ্ মুরতাযা আয্ যুবাইদী স্বীয় বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-ইহ্ইয়া’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন, “জেনে রাখুন হে জতৎবাসী! নিশ্চয়ই যার তাক্বলীদ করা যাবে তিনি হলেন শরীআত প্রণেতা সাইয়্যিদুনা মহাম্মাদ ( ﷺ )। যার আনুগত্যের বিষয়ে আদেশ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, কখনও সাহাবায়ি কিরামের তাক্বলীদ শুধু এই জন্যই করা হয় যে, তাঁদের কাজই প্রমাণ করে যে তাঁরা সয়ং রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) থেকে
আহকামে শারীআত শ্রবন করেছেন এবং তাঁর ওপর আমল করেছেন। এই জন্য তাঁদের কথা ও কাজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) থেকে শ্রবণ ও শিক্ষার দলীল।
সুতরাং একমাত্র তিনিই সেই ব্যক্তি যার আনুগত্য করার জন্য আমরা আদিষ্ট হয়েছি, অন্য কোন ব্যক্তি নয়। অতএব, রাসূল ( ﷺ ) - ই হলেন আমাদের ইমাম তথা ইমামে আযম অন্য কেউ নয়। মূলতঃ প্রসঙ্গক্রমেই আমাদের জানা উচিত যে, ইমাম শব্দটির শাব্দিক বিশ্লেষন। যেমনঃ ইমাম শব্দটি (আরবীঃ ﺇﻣﺎﻡ, বহুবচন: ﺃﺋﻤﺔ ; ফার্সি: ﺍﻣﺎﻡ)। ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের ব্যবহৃৎ একটি শব্দ যদ্বারা সাধারণভাবে মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং ইমাম শব্দটির শাব্দিক বিশ্লেষন করলেই বুঝা যায় যে, আমাদের একমাত্র অনুসরনীয় ও মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মাদ ( ﷺ ), অন্য কেউ নয়।
ইবনু আব্বাস ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেছেন যে,
“প্রত্যেকেরই ইলমের কিছু গ্রহনীয় ও কিছু বর্জনীয় হতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর ইলমের সব কিছুই গ্রহনীয়। (তথ্যসূত্রঃ আল-জামি – ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং – ৯১, উসুলুল আহকাম, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা নং – ১৪৫ ও ১৭৯)। হাফিয ইরাকী বলেন, তাবারানী এই হাদীসটি স্বীয় গ্রন্থ কাবীরে আলোচনা করেছেন এবং তার সনদ হাসান। অনুরূপভাবে ‘কুতুল কুলূব’ – এ বর্নীত হয়েছে। মাযহাবী তাক্বলীদ ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে এবং বিরাট বিপদে রূপ নিয়েছে যার বিষক্রিয়া সারা দুনিয়া গ্রাস করেছে। আমরা খুব কম লোক পাবো যারা তাদের মাযহাব লালিত ইমামদের মত ও তাদের রচিত ফিকহ্’র গ্রন্থাবলীর মোকাবিলায় পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসকে অগ্রাধিকার দিবে। তারপরেও আমরা মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি এই জন্য যে, আজ পৃথিবীতে হকপন্থী একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী জামাত দেখছি যারা মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করছেন এবং মহান আল্লাহর ব্যাপারে প্রকৃত জিহাদ অব্যাহত রেখেছেন এবং মুকাল্লিদ ভ্রান্ত আকীদার অধিকারীও এ ধরনের দাজ্জালের সাথে
আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদুদ্দেশ্যেও তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের জন্য্ গড়ে উঠেছে কিছু সহযোগী সংস্থা যারা আজও হিজায, মিশর, সুদান, ইরাকের সিনজার প্রদেশে ও অন্যান্য দেশে দাওয়াত ও জিহাদের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। আল্লাহ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) তাই পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸَﺎﻗِﻖِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﻭَﻳَﺘَّﺒِﻊْ ﻏَﻴْﺮَ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻧُﻮَﻟِّﻪِ ﻣَﺎ ﺗَﻮَﻟَّﻰ ﻭَﻧُﺼْﻠِﻪِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻭَﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ
আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জন্যে হিদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও এবং মুমিনের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর তা খুবই নিকৃষ্টতর আবাসস্থল। সূরা আন-নিসা, ৪/১১৫।
হে মহান আল্লাহ! তাঁদের শক্তি বৃদ্ধি করুন। তাঁদের সাহায্য করুন! যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা আপনার দ্বীনের সাহায্য করে। কবুল করুন হে সমগ্র বিশ্বের নিরুন্কুশ সার্বভৌমত্বের অধিপতি। আল্লামাহ নবাব সিদ্দিক হাসান খান স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘ফাতহুল বায়ান ফী মাকাসিদিল কুরআন’ এর মধ্যে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এর বানীঃ
ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَٰﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ۖ ﻟَﺎ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ۚ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﻋَﻤَّﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের* রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং – ৩১) তিনি এই আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, এই আয়াত যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে অথবা নিবিড় মনে শ্রবন করে তাকে মহান আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে তাক্বলীদ করতে এবং মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহর কিতাব ও পবিত্র সুন্নাহর মুকাবিলায় ‘আলিমদের উক্তিকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে সক্ষম হবে না। কেননা কুর’আন ও হাদীসের মূল
দলীলসমূহ যা নিয়ে এসেছে এবং সে বিষয়ে যে মহান আল্লাহর উজ্জ্বল প্রমানাদী ও দলীলসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার বিপরীত হওয়া সত্ত্বেও এই উম্মতর আলিমদের রায় মোতাবেক মাযহাব গ্রহন করা সেরকম কাজ যেমন ইয়াহুদী নাসারাগণ মহান আল্লাহর স্থানে তাদের দরবেশ ও সংসার বিরাগীদের রাব হিসাবে গ্রহণ করেছিলো। আর এটা অকাট্য সত্য যে, ইয়াহুদী নাসারাগণ তাদের ইবাদত করতো না। কিন্তু তারা তাদের আনুগত্য করতো। যেটাকে তারা হারাম হিসাবে চিহ্নিত করতো এবং তারাও সেটাকে হারাম হিসাবে মেনে নিতো। তারা যেটাকে হালাল হিসাবে ফয়সালা দিতো তারাও সেটাকে হালাল হিসাবে গ্রহণ করতো। আর আজকের উম্মাতের তাক্বলীদপন্থীদের একই অবস্থা! একটি ডিম অপর ডিম এর সাথে খেঁজুর অপর খেঁজুরের
সাথে যেমন সাদৃশ্য তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্য রয়েছে মুকাল্লিদগণের ইয়াহুদ-খ্রিষ্টানদের সাথে। হে মহান আল্লাহর বান্দাগণ! হে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূল ( ﷺ ) এর অনুসারীগণ, আপনাদের কি হলো আপনারা মহান আল্লাহ’র কিতাব ও রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর সুন্নাতকে এক পেশে ফেলে রেখেছেন এবং আপনাদের মতো মানুষদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন? তাদের মতাদর্শকে মেনে চলেছেন অথচ তারা অভ্রান্ত নন। তারা কখনও ঠিক করেন আবার কখনও ভুল করেন আর এটাতো আপনাদের আকীদার গ্রন্থসমূহেও স্বীকৃত। তারপর এ কেমন স্মৃতি ক্ষীণতা?
আপনারা নিষ্পাপ চিরঞ্জীব রাবের কিতাবের দিকে এবং রাসূল ( ﷺ ) এর সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন এবং মুহাম্মাদ ( ﷺ ) কে আপনাদের ইমাম হিসাবে গ্রহন করুন। কারন তিনিই তো ইমামদের ইমাম এবং তাঁর ইসলাম মাযহাবকেই মাযহাব হিসাবে গ্রহন করুন। কারন তিনি হচ্ছেন ইমামে আযম। তাই মহান আল্লাহ্ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺺِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﻳَﺘَﻌَﺪَّ ﺣُﺪُﻭﺩَﻩُ ﻳُﺪْﺧِﻠْﻪُ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُﻬِﻴﻦٌ
যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করবে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে; আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা আন-নিসা, ৪/১৪। সুতরাং যে সকল মাযহাব রাসূল ( ﷺ ) এর বিরোধী তা বাতিল ও প্রত্যাখাত। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সঠিক পথ দেখান এবং আমাদের দোয় কবুল করুন, আমীন। অধিকন্তু বলা যায় যে, মুহকামাত বা অর্থবহ বহু আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, সয়ং আল্লাহ তা’আলা দ্বীন এর প্রবর্তক আর রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) হলেন তাঁর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) পবিত্র কুরআনে যে সব আয়াত উল্লেখ করেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
(১) ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﻋْﺮَﺿُﻮﺍ ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎﻙَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﻔِﻴﻈًﺎ ۖ ﺇِﻥْ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ “আর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে আমি তো তোমাকে তাদের রক্ষক হিসেবে পাঠাইনি। বাণী পৌঁছে দেয়াই তোমার দায়িত্ব। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত নং – ৪৮)
(২) ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ “প্রচার ব্যতীত রাসূলের কোন দায়িত্ব নেই।” (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত নং – ৯৯)
(৩) ﻓَﺈِﻥْ ﺣَﺎﺟُّﻮﻙَ ﻓَﻘُﻞْ ﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻭَﺟْﻬِﻲَ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺒَﻌَﻦِ ۗ ﻭَﻗُﻞْ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺄُﻣِّﻴِّﻴﻦَ ﺃَﺃَﺳْﻠَﻤْﺘُﻢْ ۚ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﺳْﻠَﻤُﻮﺍ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﻫْﺘَﺪَﻭْﺍ ۖ ﻭَﺇِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺼِﻴﺮٌ ﺑِﺎﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ “যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে
তুমি বল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ’? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আলু ইমরান, আয়াত নং – ২০) এগুলো সবই হলো হাছর যা দলীলের জন্য অকাট্য হয়।
আরকানুদ্দীন বা দ্বীনের রুকন বা মূলভিত্তি যা একমাত্র কুরআ’নের মূল দলীল ও রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর বর্ননা দ্বারা প্রমানিত হয় তা তিনটিঃ (১) আকাঈদ। (২) আল ‘ইাদাতুল মুতলাকাহ বা সার্বীক ইবাদত, তা সময়, স্থান, ধারন ও সংখ্যার সাথে নির্দীষ্ট হতে পারে। (৩) আত্ তাহরীমুদ দ্বীন বা দ্বীন কর্তৃক হারাম বস্ত। আর এই তিনটির বাইরে যা আছে তা হলো শরীআতের অন্যান্য আহকামসমূহ। আর এই আহকামে শারীয়াতের কোন বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট প্রমান না পাওয়া গেলে সেখানে ইজতিহাদ দ্বারা সে মাসা’আলা প্রমান করতে হবে। আর ইজতিহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো কল্যাণ সাধন ও বিভ্রান্তির দরজার মুলোৎপাটন করা। এ বিষয়ে ভালোভাবে গবেষনা করুন, অলসতা দূর করুন। কেননা এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ’র দলীল এবং সালফে সালেহীনের আমল ও বানী বহু রয়েছে। এই হলো ইসলামী দুনিয়ার ইমামদের বানীর নমুনা যা আমাদের বর্নীত বিষয়ের অকাট্য দলীল ও প্রমানসমূহের জন্য সাহায্য নিয়েছি। কুরআন ও কুরআনের ব্যাখ্যা থেকে হিদায়ত গ্রহন করা তা বুঝার জন্য মুসলমানদের দাওয়াত দেয়া, ঐ দুটিতে বর্নীত ইবাদত ও যিকরকে যথেষ্ট মনে করা এবং এগুলো ব্যতীত জীবনের সকল বিষয়ে এই দু্টিকেই সীমালঙ্ঘনবিহীন, গোঁড়ামীবিহীন, কিফায়া বাস্তবায়নের প্রতি তৎপর হওয়া। তা হলো ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সম্ভ্রম বজায় রাখা। (তথ্যসূত্রঃ চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরন করতে মুসলিম কি বাধ্য – [লেখকঃ অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন, পৃষ্ঠা নং – (৮৪-৮৮)] [আংশিক পরিবর্তীত] সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আল্লামাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী ‘শারহ সীরাতুল মুস্তাকিম গ্রন্থে বলেছেন যে, নিশ্চয়ই অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় প্রকৃত ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মাদ ( ﷺ ) – এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ইমাম হিসাবে আনগত্য করা অযৌক্তিক। আর এটাই ছিলো আগেকার পূন্যবান পন্ডিতদের বক্তব্য। ইমাম শাফেয়ী ( ﺭﺣﻴﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ) এ প্রসেঙ্গ বলেছেন যে, “মুসলিম জাতি এ কথায় একমত যে যার নিকট রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর সুন্নাহ প্রকাশিত হয়েছে, তার জন্য জায়িয নয় যে, কারও কোন মাযহাবী ইমামের কথা মোতাবেক হাদীস প্রত্যাখান করা।”
==============================
=======================
আল্লামাহ্ মুরতাযা আয্ যুবাইদী স্বীয় বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-ইহ্ইয়া’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন, “জেনে রাখুন হে জতৎবাসী! নিশ্চয়ই যার তাক্বলীদ করা যাবে তিনি হলেন শরীআত প্রণেতা সাইয়্যিদুনা মহাম্মাদ ( ﷺ )। যার আনুগত্যের বিষয়ে আদেশ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, কখনও সাহাবায়ি কিরামের তাক্বলীদ শুধু এই জন্যই করা হয় যে, তাঁদের কাজই প্রমাণ করে যে তাঁরা সয়ং রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) থেকে
আহকামে শারীআত শ্রবন করেছেন এবং তাঁর ওপর আমল করেছেন। এই জন্য তাঁদের কথা ও কাজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) থেকে শ্রবণ ও শিক্ষার দলীল।
সুতরাং একমাত্র তিনিই সেই ব্যক্তি যার আনুগত্য করার জন্য আমরা আদিষ্ট হয়েছি, অন্য কোন ব্যক্তি নয়। অতএব, রাসূল ( ﷺ ) - ই হলেন আমাদের ইমাম তথা ইমামে আযম অন্য কেউ নয়। মূলতঃ প্রসঙ্গক্রমেই আমাদের জানা উচিত যে, ইমাম শব্দটির শাব্দিক বিশ্লেষন। যেমনঃ ইমাম শব্দটি (আরবীঃ ﺇﻣﺎﻡ, বহুবচন: ﺃﺋﻤﺔ ; ফার্সি: ﺍﻣﺎﻡ)। ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের ব্যবহৃৎ একটি শব্দ যদ্বারা সাধারণভাবে মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং ইমাম শব্দটির শাব্দিক বিশ্লেষন করলেই বুঝা যায় যে, আমাদের একমাত্র অনুসরনীয় ও মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মাদ ( ﷺ ), অন্য কেউ নয়।
ইবনু আব্বাস ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেছেন যে,
“প্রত্যেকেরই ইলমের কিছু গ্রহনীয় ও কিছু বর্জনীয় হতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর ইলমের সব কিছুই গ্রহনীয়। (তথ্যসূত্রঃ আল-জামি – ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং – ৯১, উসুলুল আহকাম, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা নং – ১৪৫ ও ১৭৯)। হাফিয ইরাকী বলেন, তাবারানী এই হাদীসটি স্বীয় গ্রন্থ কাবীরে আলোচনা করেছেন এবং তার সনদ হাসান। অনুরূপভাবে ‘কুতুল কুলূব’ – এ বর্নীত হয়েছে। মাযহাবী তাক্বলীদ ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে এবং বিরাট বিপদে রূপ নিয়েছে যার বিষক্রিয়া সারা দুনিয়া গ্রাস করেছে। আমরা খুব কম লোক পাবো যারা তাদের মাযহাব লালিত ইমামদের মত ও তাদের রচিত ফিকহ্’র গ্রন্থাবলীর মোকাবিলায় পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসকে অগ্রাধিকার দিবে। তারপরেও আমরা মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি এই জন্য যে, আজ পৃথিবীতে হকপন্থী একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী জামাত দেখছি যারা মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করছেন এবং মহান আল্লাহর ব্যাপারে প্রকৃত জিহাদ অব্যাহত রেখেছেন এবং মুকাল্লিদ ভ্রান্ত আকীদার অধিকারীও এ ধরনের দাজ্জালের সাথে
আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদুদ্দেশ্যেও তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের জন্য্ গড়ে উঠেছে কিছু সহযোগী সংস্থা যারা আজও হিজায, মিশর, সুদান, ইরাকের সিনজার প্রদেশে ও অন্যান্য দেশে দাওয়াত ও জিহাদের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। আল্লাহ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) তাই পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸَﺎﻗِﻖِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﻭَﻳَﺘَّﺒِﻊْ ﻏَﻴْﺮَ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻧُﻮَﻟِّﻪِ ﻣَﺎ ﺗَﻮَﻟَّﻰ ﻭَﻧُﺼْﻠِﻪِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻭَﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ
আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জন্যে হিদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও এবং মুমিনের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর তা খুবই নিকৃষ্টতর আবাসস্থল। সূরা আন-নিসা, ৪/১১৫।
হে মহান আল্লাহ! তাঁদের শক্তি বৃদ্ধি করুন। তাঁদের সাহায্য করুন! যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা আপনার দ্বীনের সাহায্য করে। কবুল করুন হে সমগ্র বিশ্বের নিরুন্কুশ সার্বভৌমত্বের অধিপতি। আল্লামাহ নবাব সিদ্দিক হাসান খান স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘ফাতহুল বায়ান ফী মাকাসিদিল কুরআন’ এর মধ্যে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এর বানীঃ
ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﺍﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَٰﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ۖ ﻟَﺎ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ۚ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﻋَﻤَّﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের* রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং – ৩১) তিনি এই আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, এই আয়াত যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে অথবা নিবিড় মনে শ্রবন করে তাকে মহান আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে তাক্বলীদ করতে এবং মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহর কিতাব ও পবিত্র সুন্নাহর মুকাবিলায় ‘আলিমদের উক্তিকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে সক্ষম হবে না। কেননা কুর’আন ও হাদীসের মূল
দলীলসমূহ যা নিয়ে এসেছে এবং সে বিষয়ে যে মহান আল্লাহর উজ্জ্বল প্রমানাদী ও দলীলসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার বিপরীত হওয়া সত্ত্বেও এই উম্মতর আলিমদের রায় মোতাবেক মাযহাব গ্রহন করা সেরকম কাজ যেমন ইয়াহুদী নাসারাগণ মহান আল্লাহর স্থানে তাদের দরবেশ ও সংসার বিরাগীদের রাব হিসাবে গ্রহণ করেছিলো। আর এটা অকাট্য সত্য যে, ইয়াহুদী নাসারাগণ তাদের ইবাদত করতো না। কিন্তু তারা তাদের আনুগত্য করতো। যেটাকে তারা হারাম হিসাবে চিহ্নিত করতো এবং তারাও সেটাকে হারাম হিসাবে মেনে নিতো। তারা যেটাকে হালাল হিসাবে ফয়সালা দিতো তারাও সেটাকে হালাল হিসাবে গ্রহণ করতো। আর আজকের উম্মাতের তাক্বলীদপন্থীদের একই অবস্থা! একটি ডিম অপর ডিম এর সাথে খেঁজুর অপর খেঁজুরের
সাথে যেমন সাদৃশ্য তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্য রয়েছে মুকাল্লিদগণের ইয়াহুদ-খ্রিষ্টানদের সাথে। হে মহান আল্লাহর বান্দাগণ! হে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূল ( ﷺ ) এর অনুসারীগণ, আপনাদের কি হলো আপনারা মহান আল্লাহ’র কিতাব ও রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর সুন্নাতকে এক পেশে ফেলে রেখেছেন এবং আপনাদের মতো মানুষদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন? তাদের মতাদর্শকে মেনে চলেছেন অথচ তারা অভ্রান্ত নন। তারা কখনও ঠিক করেন আবার কখনও ভুল করেন আর এটাতো আপনাদের আকীদার গ্রন্থসমূহেও স্বীকৃত। তারপর এ কেমন স্মৃতি ক্ষীণতা?
আপনারা নিষ্পাপ চিরঞ্জীব রাবের কিতাবের দিকে এবং রাসূল ( ﷺ ) এর সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন এবং মুহাম্মাদ ( ﷺ ) কে আপনাদের ইমাম হিসাবে গ্রহন করুন। কারন তিনিই তো ইমামদের ইমাম এবং তাঁর ইসলাম মাযহাবকেই মাযহাব হিসাবে গ্রহন করুন। কারন তিনি হচ্ছেন ইমামে আযম। তাই মহান আল্লাহ্ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺺِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﻳَﺘَﻌَﺪَّ ﺣُﺪُﻭﺩَﻩُ ﻳُﺪْﺧِﻠْﻪُ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُﻬِﻴﻦٌ
যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করবে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে; আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা আন-নিসা, ৪/১৪। সুতরাং যে সকল মাযহাব রাসূল ( ﷺ ) এর বিরোধী তা বাতিল ও প্রত্যাখাত। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সঠিক পথ দেখান এবং আমাদের দোয় কবুল করুন, আমীন। অধিকন্তু বলা যায় যে, মুহকামাত বা অর্থবহ বহু আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, সয়ং আল্লাহ তা’আলা দ্বীন এর প্রবর্তক আর রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) হলেন তাঁর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ( ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ) পবিত্র কুরআনে যে সব আয়াত উল্লেখ করেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
(১) ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﻋْﺮَﺿُﻮﺍ ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎﻙَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﻔِﻴﻈًﺎ ۖ ﺇِﻥْ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ “আর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে আমি তো তোমাকে তাদের রক্ষক হিসেবে পাঠাইনি। বাণী পৌঁছে দেয়াই তোমার দায়িত্ব। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত নং – ৪৮)
(২) ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ “প্রচার ব্যতীত রাসূলের কোন দায়িত্ব নেই।” (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত নং – ৯৯)
(৩) ﻓَﺈِﻥْ ﺣَﺎﺟُّﻮﻙَ ﻓَﻘُﻞْ ﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻭَﺟْﻬِﻲَ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺒَﻌَﻦِ ۗ ﻭَﻗُﻞْ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺄُﻣِّﻴِّﻴﻦَ ﺃَﺃَﺳْﻠَﻤْﺘُﻢْ ۚ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﺳْﻠَﻤُﻮﺍ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﻫْﺘَﺪَﻭْﺍ ۖ ﻭَﺇِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﺒَﻠَﺎﻍُ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺼِﻴﺮٌ ﺑِﺎﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ “যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে
তুমি বল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ’? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আলু ইমরান, আয়াত নং – ২০) এগুলো সবই হলো হাছর যা দলীলের জন্য অকাট্য হয়।
আরকানুদ্দীন বা দ্বীনের রুকন বা মূলভিত্তি যা একমাত্র কুরআ’নের মূল দলীল ও রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর বর্ননা দ্বারা প্রমানিত হয় তা তিনটিঃ (১) আকাঈদ। (২) আল ‘ইাদাতুল মুতলাকাহ বা সার্বীক ইবাদত, তা সময়, স্থান, ধারন ও সংখ্যার সাথে নির্দীষ্ট হতে পারে। (৩) আত্ তাহরীমুদ দ্বীন বা দ্বীন কর্তৃক হারাম বস্ত। আর এই তিনটির বাইরে যা আছে তা হলো শরীআতের অন্যান্য আহকামসমূহ। আর এই আহকামে শারীয়াতের কোন বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট প্রমান না পাওয়া গেলে সেখানে ইজতিহাদ দ্বারা সে মাসা’আলা প্রমান করতে হবে। আর ইজতিহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো কল্যাণ সাধন ও বিভ্রান্তির দরজার মুলোৎপাটন করা। এ বিষয়ে ভালোভাবে গবেষনা করুন, অলসতা দূর করুন। কেননা এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ’র দলীল এবং সালফে সালেহীনের আমল ও বানী বহু রয়েছে। এই হলো ইসলামী দুনিয়ার ইমামদের বানীর নমুনা যা আমাদের বর্নীত বিষয়ের অকাট্য দলীল ও প্রমানসমূহের জন্য সাহায্য নিয়েছি। কুরআন ও কুরআনের ব্যাখ্যা থেকে হিদায়ত গ্রহন করা তা বুঝার জন্য মুসলমানদের দাওয়াত দেয়া, ঐ দুটিতে বর্নীত ইবাদত ও যিকরকে যথেষ্ট মনে করা এবং এগুলো ব্যতীত জীবনের সকল বিষয়ে এই দু্টিকেই সীমালঙ্ঘনবিহীন, গোঁড়ামীবিহীন, কিফায়া বাস্তবায়নের প্রতি তৎপর হওয়া। তা হলো ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সম্ভ্রম বজায় রাখা। (তথ্যসূত্রঃ চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরন করতে মুসলিম কি বাধ্য – [লেখকঃ অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন, পৃষ্ঠা নং – (৮৪-৮৮)] [আংশিক পরিবর্তীত] সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আল্লামাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী ‘শারহ সীরাতুল মুস্তাকিম গ্রন্থে বলেছেন যে, নিশ্চয়ই অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় প্রকৃত ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মাদ ( ﷺ ) – এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ইমাম হিসাবে আনগত্য করা অযৌক্তিক। আর এটাই ছিলো আগেকার পূন্যবান পন্ডিতদের বক্তব্য। ইমাম শাফেয়ী ( ﺭﺣﻴﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ) এ প্রসেঙ্গ বলেছেন যে, “মুসলিম জাতি এ কথায় একমত যে যার নিকট রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) এর সুন্নাহ প্রকাশিত হয়েছে, তার জন্য জায়িয নয় যে, কারও কোন মাযহাবী ইমামের কথা মোতাবেক হাদীস প্রত্যাখান করা।”
0 Comments