মোহর ও আমাদের দেশের সামাজিক প্রচলন এবং তালাক বন্ধক রূপে অতিরিক্ত মোহরানা ধার্য করা এবং শরীয়তে এর বিধান কি?
সামর্থ্যরে মধ্যে বিয়ের মোহরানা নির্ধারণ করা রাসুল ( ﷺ ) - এর সুন্নাত ও শিক্ষা। সামাজিক স্ট্যাটাস বা লৌকিকতার খাতিরে মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করে তা পরিশাধ না করা প্রতারণার শামিল এবং এটা কবিরা গুনাহ।
মোহরানার শাব্দিক বিশ্লেষন
“মাহার” একটি আরবী শব্দ। আমাদের দেশে যা দেনমোহর বা মোহরানা হিসাবে প্রচলিত। - বহুবচনে ﻣﻬﻮﺭﺓ – ﻣﻬﻮﺭ আভিধানিক অর্থে- স্ত্রীর মাহার। বিবাহ বন্ধনের প্রেক্ষিতে স্বামী তার স্ত্রীকে যে অর্থ/সম্পদ প্রদান করে তাকে মাহার বলে। [আল মিসবাহ আল মুনীর] কুরআন,সহীহ হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে মাহার এর সমার্থক আরো কয়েকটি শব্দ পাওয়া যায়। তা হল- ১ / ﺍﻟﺼﺪﺍﻕ ( সাদাক) ২ / ﺍﻟﻨﺤﻠﺔ ( নিহলা) ৩/ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ( ফারীদা) ৪ / ﺍﻟﺤﺒﺎﺀ ( হিবা) ৫ / ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ( সাদাকাহ) ইত্যাদি। [আল-মাওসু’আতুল ফিকহিয়্যাহ।]
আমাদের সমাজে নানা ধরনের মোহরানার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এসব প্রথা ও প্রথার প্রচলন এবং সমাধান বিষয়ে জাস্টিস মুফতি তাকি উসমানি লিখেন, ‘মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্যই হল নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া।
এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করলেই মনে করা যাবে, নারী নিজেকে স্বামীর হাতে বিক্রি করে দিয়েছে। তেমনি এ শুধু কথার কথাও নয়, যা শুধু ধার্য করা হয়, পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে নয়; বরং শরীয়তের উদ্দেশ্য হল যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সাথে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দিবে, যা তাকে সম্মানিত করে। এজন্য শরীয়তের তাকাযা হচ্ছে মোহর এত অল্পও নির্ধারণ না করা, যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত থাকে না। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব হয় না। অন্যথায় হয়তো মোহর আদায় না করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে, নতুবা জীবনের অন্তিম মুহূর্তে স্ত্রীর কাছে মাফ চাইতে বাধ্য হবে।
মূলতঃ এ কারনেই মোহরের ব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে মুসলিম সমাজ অনেক দূরে সরে গেছে। স্ত্রীকে তালাক প্রদানের প্রতিবন্ধক অথবা সামাজিক মর্যাদার দোহাই পেড়ে নারী পক্ষ মোটা অংকের মোহর দাবী করে বসে। যেন নারী পণ্য। অনেক সময় মোহরের অংক নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মতদ্বৈততার কারণে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোহর পরিশোধের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কম বা বেশী পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করল আর মনে মনে তা পরিশোধ না করার সংকল্প করল, সে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করল। মোহর পরিশোধ না করা অবস্থায় যদি সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। [ত্বাবারানী, সঃ তারগীব, হাদীস নং - ১৮০৭]।’’
আল্লামা আবুল আলা মওদূদী বলেন, ‘‘এ দেশের মুসলমানরা সাধারণত দেন মোহরকে একটা প্রথাগত জিনিস মাত্র মনে করে। কুরআন হাদীসে মোহরের যে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে তাদের দৃষ্টিতে তার সে গুরুত্ব অবশ্যই নেই। বিয়ের সময় সম্পূর্ণ প্রদর্শনীমূলকভাবে মোহরের চুক্তি হয়ে থাকে। কিন্তু এ চুক্তি কার্যকর করার কোনো চিন্তাই তাদের মস্তিষ্কে থাকে না।
মোহরের বিষয় আলোচনাকালে আমি নিজ কানে বহুবার একথা শুনেছিঃ ‘‘আরে মিঞা! মোহর দেয়ই বা কে আর নেয়ই বা কে!’’ এ যেনো কেবল একটা ফরয পূরণের জন্যেই ধার্য করা হয়। আমার জানা মতে শতকরা আশিটি বিয়ে এরূপ হয়ে থাকে যেগুলোতে কখনো মোহর পরিশোধ করা হয় না। লোকেরা কেবল তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবেই মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। এভাবে কার্যত নারী সমাজের শরীয়তপ্রদত্ত একটি পাকাপোক্ত অধিকারকে বিলুপ্ত করা হলো। একথার কোনো পরোয়াই করা হয় না যে, যে শরীয়তের দৃষ্টিতে এ লোকেরা নারীদেরকে পুরুষদের জন্য বৈধ করে নেয় সে শরীয়তই মোহরকে নারীর যৌনাঙ্গ হালাল করার জন্য ‘বিনিময়’ বলে ঘোষণা করেছে। আর এ বিনিময় পরিশোধ করার নিয়ত না থাকলে খোদার নিকট পুরুষের জন্যে স্ত্রী হালালই হয় না।’’
সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার সারাংশে বলা যায় যে, মোহরানা স্ত্রীর এমন এক প্রাপ্য যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পাওয়ার অধিকার রাখেন। আলোচনা সাপেক্ষে সম্মতচিত্তে স্ত্রী স্বামীকে সময় দিলে, সেটা আলাদা কথা এবং এ পদ্ধতি বৈধ। তবে মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে, হোক তা নগদ, কিছু নগদ কিছু বাকি অথবা কিস্তিতে।
মোহরানা আদায় না করলে স্ত্রীর কাছে ঋণী থাকতে হবে আর আখেরাতে সাজা পেতে হবে। এ ব্যাপারে হাদীসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। স্ত্রীর মোহরানার টাকা পরিশোধ করার কথা যেমনি স্বামীদের ভাবতে হবে, তেমনি হবু স্বামীদের সামর্থ্যরে মধ্যেই মোহরানা নির্ধারণে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা জানি ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন খেলাপিদের দুনিয়ার কাঠগড়ায় আসামি হতে হয়। মোহরানা খেলাপিরা দুনিয়ার কাঠগড়ায় আসামি না হলেও আখেরাতের কাঠগড়ায় আসামি হতেই হবে। অতএব, আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
সামর্থ্যরে মধ্যে বিয়ের মোহরানা নির্ধারণ করা রাসুল ( ﷺ ) - এর সুন্নাত ও শিক্ষা। সামাজিক স্ট্যাটাস বা লৌকিকতার খাতিরে মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করে তা পরিশাধ না করা প্রতারণার শামিল এবং এটা কবিরা গুনাহ।
মোহরানার শাব্দিক বিশ্লেষন
“মাহার” একটি আরবী শব্দ। আমাদের দেশে যা দেনমোহর বা মোহরানা হিসাবে প্রচলিত। - বহুবচনে ﻣﻬﻮﺭﺓ – ﻣﻬﻮﺭ আভিধানিক অর্থে- স্ত্রীর মাহার। বিবাহ বন্ধনের প্রেক্ষিতে স্বামী তার স্ত্রীকে যে অর্থ/সম্পদ প্রদান করে তাকে মাহার বলে। [আল মিসবাহ আল মুনীর] কুরআন,সহীহ হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে মাহার এর সমার্থক আরো কয়েকটি শব্দ পাওয়া যায়। তা হল- ১ / ﺍﻟﺼﺪﺍﻕ ( সাদাক) ২ / ﺍﻟﻨﺤﻠﺔ ( নিহলা) ৩/ ﺍﻟﻔﺮﻳﻀﺔ ( ফারীদা) ৪ / ﺍﻟﺤﺒﺎﺀ ( হিবা) ৫ / ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ( সাদাকাহ) ইত্যাদি। [আল-মাওসু’আতুল ফিকহিয়্যাহ।]
আমাদের সমাজে নানা ধরনের মোহরানার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এসব প্রথা ও প্রথার প্রচলন এবং সমাধান বিষয়ে জাস্টিস মুফতি তাকি উসমানি লিখেন, ‘মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্যই হল নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া।
এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করলেই মনে করা যাবে, নারী নিজেকে স্বামীর হাতে বিক্রি করে দিয়েছে। তেমনি এ শুধু কথার কথাও নয়, যা শুধু ধার্য করা হয়, পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে নয়; বরং শরীয়তের উদ্দেশ্য হল যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সাথে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দিবে, যা তাকে সম্মানিত করে। এজন্য শরীয়তের তাকাযা হচ্ছে মোহর এত অল্পও নির্ধারণ না করা, যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত থাকে না। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব হয় না। অন্যথায় হয়তো মোহর আদায় না করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে, নতুবা জীবনের অন্তিম মুহূর্তে স্ত্রীর কাছে মাফ চাইতে বাধ্য হবে।
মূলতঃ এ কারনেই মোহরের ব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে মুসলিম সমাজ অনেক দূরে সরে গেছে। স্ত্রীকে তালাক প্রদানের প্রতিবন্ধক অথবা সামাজিক মর্যাদার দোহাই পেড়ে নারী পক্ষ মোটা অংকের মোহর দাবী করে বসে। যেন নারী পণ্য। অনেক সময় মোহরের অংক নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মতদ্বৈততার কারণে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোহর পরিশোধের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কম বা বেশী পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করল আর মনে মনে তা পরিশোধ না করার সংকল্প করল, সে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করল। মোহর পরিশোধ না করা অবস্থায় যদি সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। [ত্বাবারানী, সঃ তারগীব, হাদীস নং - ১৮০৭]।’’
আল্লামা আবুল আলা মওদূদী বলেন, ‘‘এ দেশের মুসলমানরা সাধারণত দেন মোহরকে একটা প্রথাগত জিনিস মাত্র মনে করে। কুরআন হাদীসে মোহরের যে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে তাদের দৃষ্টিতে তার সে গুরুত্ব অবশ্যই নেই। বিয়ের সময় সম্পূর্ণ প্রদর্শনীমূলকভাবে মোহরের চুক্তি হয়ে থাকে। কিন্তু এ চুক্তি কার্যকর করার কোনো চিন্তাই তাদের মস্তিষ্কে থাকে না।
মোহরের বিষয় আলোচনাকালে আমি নিজ কানে বহুবার একথা শুনেছিঃ ‘‘আরে মিঞা! মোহর দেয়ই বা কে আর নেয়ই বা কে!’’ এ যেনো কেবল একটা ফরয পূরণের জন্যেই ধার্য করা হয়। আমার জানা মতে শতকরা আশিটি বিয়ে এরূপ হয়ে থাকে যেগুলোতে কখনো মোহর পরিশোধ করা হয় না। লোকেরা কেবল তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবেই মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। এভাবে কার্যত নারী সমাজের শরীয়তপ্রদত্ত একটি পাকাপোক্ত অধিকারকে বিলুপ্ত করা হলো। একথার কোনো পরোয়াই করা হয় না যে, যে শরীয়তের দৃষ্টিতে এ লোকেরা নারীদেরকে পুরুষদের জন্য বৈধ করে নেয় সে শরীয়তই মোহরকে নারীর যৌনাঙ্গ হালাল করার জন্য ‘বিনিময়’ বলে ঘোষণা করেছে। আর এ বিনিময় পরিশোধ করার নিয়ত না থাকলে খোদার নিকট পুরুষের জন্যে স্ত্রী হালালই হয় না।’’
সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার সারাংশে বলা যায় যে, মোহরানা স্ত্রীর এমন এক প্রাপ্য যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পাওয়ার অধিকার রাখেন। আলোচনা সাপেক্ষে সম্মতচিত্তে স্ত্রী স্বামীকে সময় দিলে, সেটা আলাদা কথা এবং এ পদ্ধতি বৈধ। তবে মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে, হোক তা নগদ, কিছু নগদ কিছু বাকি অথবা কিস্তিতে।
মোহরানা আদায় না করলে স্ত্রীর কাছে ঋণী থাকতে হবে আর আখেরাতে সাজা পেতে হবে। এ ব্যাপারে হাদীসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। স্ত্রীর মোহরানার টাকা পরিশোধ করার কথা যেমনি স্বামীদের ভাবতে হবে, তেমনি হবু স্বামীদের সামর্থ্যরে মধ্যেই মোহরানা নির্ধারণে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা জানি ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন খেলাপিদের দুনিয়ার কাঠগড়ায় আসামি হতে হয়। মোহরানা খেলাপিরা দুনিয়ার কাঠগড়ায় আসামি না হলেও আখেরাতের কাঠগড়ায় আসামি হতেই হবে। অতএব, আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
0 Comments