>>>> সূরা ফাতিহার ৬নং আয়াত -- সরল পথের ব্যাখ্যা <<<<
==============================
=============
সরল পথের ব্যাখ্যা (কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে) –
>>> ﺍﻫﺪِﻧَــــﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ - আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন কর >>>
ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ (ইহদিনা) শব্দটি হিদায়াতুন শব্দ হতে নির্গত, অর্থ পথের সন্ধান, পথ প্রদর্শন, পরিচালনা। ﺻﺮﺍﻁ (ছিরাতুন) শব্দটি একবচন, ﺻﺮﻁ বহুবচন (সুরুতুন) অর্থ – পথ।
সরলপথ সম্পর্কীত পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো যাতে কোথাও প্রচলিত মাযহাবের কথা উল্লেখ করা হয় নি। –
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেন –
ﻭَﻫَﺪَﻳْﻨَﺎﻩُ ﺍﻟﻨَّﺠْﺪَﻳْﻦِ
আর আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি। (৯০/১০) । তিনি আরও বলেন, -
ﺷَﺎﻛِﺮًﺍ ﻟِﺄَﻧْﻌُﻤِﻪِ ۚ ﺍﺟْﺘَﺒَﺎﻩُ ﻭَﻫَﺪَﺍﻩُ ﺇِﻟَﻰٰ ﺻِﺮَﺍﻁٍ ﻣُﺴْﺘَﻘِﻴﻢٍ
সে ছিল তার নিয়ামতের শুকরকারী। তিনি তাকে বাছাই করেছেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। সূরা নাহল – আয়াত নং – ১২১)।
অধিকন্তু বলা যায় যে, ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর বলেন, মোফাসসেরদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো যে, - ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢ অর্থ আকাঁবাকাঁ নয় এমন সরল সুস্পষ্ট পথ। সব আরব গো্ত্র এ অর্থতেই একে ব্যবহার করে। কবি জারীর ইবনে আতিয়া আল খাতফী এ কবিতায় তাকে এ অর্থতেই ব্যবহার করেছেন। এমন আরও অনেক উদাহরন আছে।
যেমন: সকলের ব্যাখ্যা হলোঃ- ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ হচ্ছে..আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে পথ।
সূরা নিসায় ৫৯নং আয়াতের যার ইঙ্গিত বহন করে। সূরা নিসা ৫৯নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেছেনঃ-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻵﺧِﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻼ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের আনুগত্য কর; অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও; যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখ, এটাই কল্যানকর এবং শ্রেষ্ঠতর সমাধান। আন-নিসা, ৪/৫৯।
মাযহাব শব্দটি পবিত্র কুরআরের কোথাও নেই তারপরও অনেকে বলেন কুরআনে আছে মাযহাব মানতে হবে আর ‘উলিল আমর’ প্রসঙ্গ টেনে এনে ‘উলিল আমর’ এর ভুল ব্যাখ্যা করে বলেন আমাদের মাযহাব মানতে হবে আর আমাদের আবু হানিফাকে মানতে হবে। এই কারনেই কথিত মাযহাবীরা দলীল হিসাবে সূরা ফাতেহার ৬নং আয়াত এবং সূরা নিসা’র ৫৯নং আয়াতের দলীল উপস্থাপন করেন। আয়াতটিতে উলিল আমরের প্রসঙ্গ রয়েছে তাই প্রথমে আমরা জেনে নেই, ‘উলিল আমর’ মানে কি?
>>> উলিল আমর ( ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ ) মানে কি? <<<
ﺃُﻭﻟِﻲ (উলি) শব্দটি বহুবচন, অর্থ অধিকারী, মালিক, ওয়ালা। এর একবচন হল ﺃَﻭَّﻝ (আউওয়াল) অর্থ প্রথম, প্রধান, শুরু, আদি। ﺃﻣْﺮ (আমর) অর্থ আদেশ বা নির্দেশ, শব্দটির মাসদার হল ﺃَﻣَﺮَ (আমারা) অর্থ আদেশ দেয়া, নির্দেশ দেয়া। ﺃﻣْﺮ (আমর) শব্দের আগে ﺍﻝ যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট করেছে। ইংরেজীতে একে Definite Article বলা হয়। আর এই কারনেই এর উচ্চারণ হচ্ছে ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ (উলিল্ আমর)।
>>>> উলিল আমর ( ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ ) এর মানে কি? <<<<
ﺃُﻭﻟِﻲ (উলি) অর্থ অধিকারী, মালিক, ওয়ালা। ﺍﻷﻣْﺮ (আল-আমর) অর্থ আদেশ বা নির্দেশ। তাহলে অর্থ হচ্ছে, আদেশ বা নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী, কিংবা আদেশ বা নির্দেশ দেওয়ার মালিক। এর প্রকৃত অর্থ হল আদেশদাতাগণ, কর্তৃত্বের অধিকারী, শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী, কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকগণ। উলিল আমর বাক্যটি কুরআনে দুই জায়গায় এসেছে। আন-নিসা, ৪/৫৯, ৪/৮৩। এখন প্রশ্ন হল- উলিল আমর বা কর্তৃত্বের অধিকারী কারা? শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় উলিল আমর হলেন শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষ। এটা হল দেশের মধ্যে আর পরিবারের মধ্যে উলিল আমর হলেন পরিবারের প্রধান কারণ পরিবারের প্রধান পরিবারের মধ্যে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রাখে।
>>>> কর্তৃত্বের অধিকারী কারা <<<<
শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষ। ক্ষমতা যার হাতে আছে তাকে বুজানো হয়েছে। এই ক্ষমতা বিভি্ন্ন পর্যায়ের হতে পারে। কারো হতে থানার ক্ষমতা, কারো বা জেলার ক্ষমতা আবার কারো বা দেশের ক্ষমতা। এখানে সেই শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষকে বুঝানো হয়েছে।
সরলপথ এর ব্যাখ্যায় অন্য আরেক মোফাসসের দল বলেন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এই ব্যাখ্যা সহীহ হাদীস বিদ্যামান রয়েছে। সহীহ হাদীসটি হলোঃ- “হযরত আলী (রা:) সূত্রে বর্নীত তিনি বলেন, সহজ-সরল পথটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (ইবনু কাছীর ১/১৩০ পৃষ্ঠা, টীকা নং – তাফসীরে ত্বাবারী হা/৪০)।”
>>>> ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ (সিরাতল মুস্তাকিম) হচ্ছে ইসলাম <<<<
আরেকদল তাফসীরবিদ বলেন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে ইসলাম। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা’র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আল ইমরান-৩/১৯)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা এ প্রসঙ্গে সূরা মায়েদায় বলেছেন:
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ
‘‘আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে পছন্দ করে নিলাম।’’ [সূরা আল-মায়েদা: ৩]
সুতরাং কুরআনের এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা ইসলামকে দীন বলেছেন সেহেতু একইভাবে দ্বীন এবং মাযহাব একই অর্থ বহন করে, তাই আমরা বলতে পারি, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য মাযহাব বা দ্বীনের নাম হচ্ছে একমাত্র ইসলাম মাযহাব। আমাদের এই ইসলাম মাযহাবের ইমামের নাম হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লা
ম ( ﷺ )।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে যেহাক বর্ননা করেন – হযরত জিবরাঈল (আ:) নবী (সা:) কে বললেন, হে মোহাম্মদ! আপনি বলুন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন। তাতে কোনরূপ বক্রতা নেই। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু মালেক, আবু সালেহ ও ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান আস সুদ্দীয়ুল কবীর হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে হাদীসটি উল্লেখ করেন। মোররা হামদানী ও ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান আস সুদ্দীয়ুল কবির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ সহ একদল সাহাবা থেকে বর্ননা করেন – সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে ইসলাম। ইবনুল হানাফিয়াহ বলেন – সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে সেই দ্বীন যা ছাড়া অন্য কোন দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা গ্রহন করেন না।
যেমন – বর্তমানে প্রচলিত মাযহাব দ্বীন। এই দ্বীনের সম্বন্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা পবিত্র কুরআনের কোথাও দিক নিরদেশনা দেন নি। তাই কথিত মাযহাব দ্বীন বাদ দিয়ে আমাদেরকে পরিপূর্ণ ইসলাম মাযহাবে দাখিল হতে হবে। তাই ঈমানদারকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা এভাবে দোয়া করতে বলেছেন যা সূরা আল ইমরানের ৮নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। “হে আমাদের মালিক (একবার যখন) তুমি আমাদের (সঠিক) পথের দিশা দিয়েছো, (তখন আর) তুমি আমাদের মনকে বাঁকা করে দিয়ো না, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের প্রতি দয়া করো, অবশ্যই তুমি শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং – ৮)।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, - মাগরিব সালাতে তৃতীয় রাকাতে ফাতেহা পড়ার পর হযরত আবু বকর (রা:) প্রায়ই এই আয়াত তেলায়ত করতেন, "হে আল্রাহ! আমাদেরকে হেদায়তে দৃঢ়পদ রাখো এবং বিপথগামী হতে দিয়ো না।"
“সরলপথ” প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের আরও আয়াতসমূহ –
(১) সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। (Yaseen: 4)
(২) আর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করব। (An-Nisaa: 68)
(৩) যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে, না সে ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরলপথে চলে? (Al-Mulk: 22)
(৪) আমি তো সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অবর্তীর্ণ করেছি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালনা করেন। (An-Noor: 46)
(৫) সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। (Al-A'raaf: 16)
(৬) অতএব, আপনার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়, তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরল পথে রয়েছেন। (Az-Zukhruf: 43)
(৭) তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। (An-Nahl: 121)
(৮) সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন। (An-Nahl: 9)
(৯) যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-Fath: 2)
(১০) যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারের মধ্যে মূক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-An'aam: 39)
(১১) বলুন, প্রত্যেকেই পথপানে চেয়ে আছে, সুতরাং তোমরাও পথপানে চেয়ে থাক। অদূর ভবিষ্যতে তোমরা জানতে পারবে কে সরল পথের পথিক এবং কে সৎপথ প্রাপ্ত হয়েছে। (Taa-Haa: 135)
(১২) এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান। (Al-Baqara: 142)
(১৩) তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (Al-An'aam: 153)
(১৪) অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন। (An-Nisaa: 175)
(১৫) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে। (An-Nisaa: 51)
(১৬) তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে। (Al-Ahqaf: 30)
(১৭) আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার পালকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই। (Hud: 56)
(১৮) এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। (Al-Maaida: 16)
(১৯) আর যেদিন তাদেরকে সমবেত করা হবে, যেন তারা অবস্থান করেনি, তবে দিনের একদন্ড একজন অপরজনকে চিনবে। নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে এবং সরলপথে আসেনি। (Yunus: 45)
(২০) আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের। (Aali Imraan: 101)
(২১) আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন। (Al-Hajj: 67)
(২২) যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। (An-Nisaa: 115)
(২৩) আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে। (An-Nahl: 76)
(২৪) যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে। (Luqman: 32)
(২৫) আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি তোমাদের থেকে শত্রুদের স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে এটা মুমিনদের জন্যে এক নিদর্শন হয় এবং তোমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-Fath: 20)
(২৬) আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন একটি মোজেযা আনতে পারেন, তবে নিয়ে আসুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাইকে সরল পথে সমবেত করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (Al-An'aam: 35)
(২৭) আর মূসা বেছে নিলেন নিজের সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোক আমার প্রতিশ্রুত সময়ের জন্য। তারপর যখন তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তখন বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি যদি ইচ্ছা করতে, তবে তাদেরকে আগেই ধ্বংস করে দিতে এবং আমাকেও। আমাদেরকে কি সে কর্মের কারণে ধ্বংস করছ, যা আমার সম্প্রদায়ের নির্বোধ লোকেরা করেছে? এসবই তোমার পরীক্ষা; তুমি যাকে ইচ্ছা এতে পথ ভ্রষ্ট করবে এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথে রাখবে। তুমি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর করুনা কর। তাছাড়া তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী। (Al-A'raaf: 155)
(২৮) মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, ত আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
সরলপথ সম্পর্কীত সহীহ হাদীসসমূহঃ -
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা:)বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেন, - আল্লাহ একটা দৃষ্টান্ত বর্ননা করেছেন, একটি সরল-সঠিক পথ তার দু’পাশে দুটি প্রাচীর যাতে বহু খোলা দরজা রয়েছে এবং লোকদেরকে আহবান করছে, আস! পথে সোজা চলে যাও। বক্র পথে চলিও না। আর তার একটু আগে আর একজন আহবায়ক লোকদেরকে ডাকছে। যখনই কোন বান্দা সে সকল দরজার কোন একটি খুলতে চায় তখনই সে তাকে বলে, সর্বনাশ দরজা খুল না। দরজা খুললেই তুমি তাতে ঢুকে পড়বে।আর ঢুকলেই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা:)কথাগুলির ব্যাখ্যা করে বললেন, সরল-সঠিক পথ হচ্ছে ইসলাম আর খোলা দরজা সমূহ হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বিষয়সমূহ এবং ঝুলানো পর্দা সমূহ হচ্ছে কুরআন। আর তার সম্মুখের আহবায়ক হচ্ছে এক উপদেষ্টা (ফেরেশতার ছোঁয়া) যা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে আল্লাহর পক্ষ হতে বিদ্যমান। (তিরমিযী হা/২৮৫৯, ত্ববারী হা/১৮৬-১৮৭)। অত্র হাদীসে পথ শব্দের সাথে সঠিক শব্দটি লাগানোর উদ্দেশ্যে এমন পথ যাতে কোন ভুল নেই এবং যার শেষ গন্তব্য জান্নাত।
সরলপথ সম্পর্কীত যঈফ হাদীস সমূহঃ –
১। হযরত আলী(রা:)বলেন, সঠিক পথ হচ্ছে আল্লাহর মজবুত রশি তা হচ্ছে জ্ঞান সম্পন্ন যিকির তা হচ্ছে সরল-পথ (তিরমিযী – হা/২৯০৬)।
২। হারীস (রা:)বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখি কিছু মানুষ বিভিন্ন কথায় মত্ত। আমি আলী (রা:)এর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি দেখছেন না মানুষ মসজিদের মধ্যে কত কথায় লিপ্ত রয়েছে? তিনি বললেন, মনে রেখ আমি নবী করিম (সা:) কে বলতে শুনেছি অচিরেই অনেক ফেতনা দেখা দিবে। আমি বললাম, এসব ফেতনা বাঁচার পথ কি? রাসূলুল্লাহ (সা:)বললেন, আল্লাহর কিতাব। আল্লাহর কিতাবটি এমন কিতাব যাতে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ।তাতে তোমাদের সবধরনের ফায়সালা রয়েছে তা হচ্ছে হক্ব ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের এক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। তা কোন মজা করার বস্ত নয়। তা এমন এক গ্রন্থ যদি মানুষ তাকে অহংকার করে ত্যাগ করে, তাহলে আল্রাহ তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ধ্বংস করে দিবেন। কেউ যদি কুরআন ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থে সঠিক, সহজ-সরল পথ অন্বেষন করে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। তা হচ্ছে আল্লাহর মজবুত রশি। তা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জিকির আর তা হচ্ছে সহজ-সরল পথ। কোন প্রবৃত্তি তা দ্বারা ভ্রষ্ট হবে না। কোন জিহবা তাতে বাতিল মিশাতে পারবে না। আলিমগণ পড়ে শেষ তৃপ্তি অর্জন করতে পারে না। বার বার পড়লেও তা পুরাতন হয় না। তার অলৌকিক দর্শন শেষ হয় না। জিনেরা শুনে বলেছিল আমরা আশ্চর্য কুরআন শুনলাম। তা এমন গ্রন্থ যে, কেউ তার মাধ্যমে কথা বললে সত্য হবে। তা দ্বারা ফায়সালা করলে ইনসাফ হবে, তা দ্বারা আমল করলে নেকী দেয়া হবে ও সে পথে দাওয়াত দিলে তাকে সঠিক সহজ-সরল পথ দেখানো হবে। (দারেমী হা/নং-৩৩৩১)।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, সূরা ফাতেহা হচ্ছে পূর্ণ কুরআনের গোপন কথা। আর সূরা ফাতিহার পূর্ণ রহস্য ও তাৎপর্য হচ্ছে এ আয়াত ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ যার অর্থ হচ্ছে ”আমরা একমাত্র তোমারা্ই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই নিকট সাহায্য চাই।” আর এ কারনেই ইমাম-মুক্তাদী সকলকেই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। মানুষ এই আয়াতের সঠিক তাৎপর্য ও রহস্য বুঝতে পারলে ইমামের পড়াকেই যথেষ্ট মনে করত না বরং নিজে পড়া জরুরী মনে করত যেমন হযরত আবু বকর (রা:)করেছেন যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
==============================
=============
সরল পথের ব্যাখ্যা (কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে) –
>>> ﺍﻫﺪِﻧَــــﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ - আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন কর >>>
ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ (ইহদিনা) শব্দটি হিদায়াতুন শব্দ হতে নির্গত, অর্থ পথের সন্ধান, পথ প্রদর্শন, পরিচালনা। ﺻﺮﺍﻁ (ছিরাতুন) শব্দটি একবচন, ﺻﺮﻁ বহুবচন (সুরুতুন) অর্থ – পথ।
সরলপথ সম্পর্কীত পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো যাতে কোথাও প্রচলিত মাযহাবের কথা উল্লেখ করা হয় নি। –
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেন –
ﻭَﻫَﺪَﻳْﻨَﺎﻩُ ﺍﻟﻨَّﺠْﺪَﻳْﻦِ
আর আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি। (৯০/১০) । তিনি আরও বলেন, -
ﺷَﺎﻛِﺮًﺍ ﻟِﺄَﻧْﻌُﻤِﻪِ ۚ ﺍﺟْﺘَﺒَﺎﻩُ ﻭَﻫَﺪَﺍﻩُ ﺇِﻟَﻰٰ ﺻِﺮَﺍﻁٍ ﻣُﺴْﺘَﻘِﻴﻢٍ
সে ছিল তার নিয়ামতের শুকরকারী। তিনি তাকে বাছাই করেছেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। সূরা নাহল – আয়াত নং – ১২১)।
অধিকন্তু বলা যায় যে, ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর বলেন, মোফাসসেরদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো যে, - ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢ অর্থ আকাঁবাকাঁ নয় এমন সরল সুস্পষ্ট পথ। সব আরব গো্ত্র এ অর্থতেই একে ব্যবহার করে। কবি জারীর ইবনে আতিয়া আল খাতফী এ কবিতায় তাকে এ অর্থতেই ব্যবহার করেছেন। এমন আরও অনেক উদাহরন আছে।
যেমন: সকলের ব্যাখ্যা হলোঃ- ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ হচ্ছে..আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে পথ।
সূরা নিসায় ৫৯নং আয়াতের যার ইঙ্গিত বহন করে। সূরা নিসা ৫৯নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেছেনঃ-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻵﺧِﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺗَﺄْﻭِﻳﻼ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের আনুগত্য কর; অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও; যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখ, এটাই কল্যানকর এবং শ্রেষ্ঠতর সমাধান। আন-নিসা, ৪/৫৯।
মাযহাব শব্দটি পবিত্র কুরআরের কোথাও নেই তারপরও অনেকে বলেন কুরআনে আছে মাযহাব মানতে হবে আর ‘উলিল আমর’ প্রসঙ্গ টেনে এনে ‘উলিল আমর’ এর ভুল ব্যাখ্যা করে বলেন আমাদের মাযহাব মানতে হবে আর আমাদের আবু হানিফাকে মানতে হবে। এই কারনেই কথিত মাযহাবীরা দলীল হিসাবে সূরা ফাতেহার ৬নং আয়াত এবং সূরা নিসা’র ৫৯নং আয়াতের দলীল উপস্থাপন করেন। আয়াতটিতে উলিল আমরের প্রসঙ্গ রয়েছে তাই প্রথমে আমরা জেনে নেই, ‘উলিল আমর’ মানে কি?
>>> উলিল আমর ( ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ ) মানে কি? <<<
ﺃُﻭﻟِﻲ (উলি) শব্দটি বহুবচন, অর্থ অধিকারী, মালিক, ওয়ালা। এর একবচন হল ﺃَﻭَّﻝ (আউওয়াল) অর্থ প্রথম, প্রধান, শুরু, আদি। ﺃﻣْﺮ (আমর) অর্থ আদেশ বা নির্দেশ, শব্দটির মাসদার হল ﺃَﻣَﺮَ (আমারা) অর্থ আদেশ দেয়া, নির্দেশ দেয়া। ﺃﻣْﺮ (আমর) শব্দের আগে ﺍﻝ যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট করেছে। ইংরেজীতে একে Definite Article বলা হয়। আর এই কারনেই এর উচ্চারণ হচ্ছে ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ (উলিল্ আমর)।
>>>> উলিল আমর ( ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻣْﺮ ) এর মানে কি? <<<<
ﺃُﻭﻟِﻲ (উলি) অর্থ অধিকারী, মালিক, ওয়ালা। ﺍﻷﻣْﺮ (আল-আমর) অর্থ আদেশ বা নির্দেশ। তাহলে অর্থ হচ্ছে, আদেশ বা নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী, কিংবা আদেশ বা নির্দেশ দেওয়ার মালিক। এর প্রকৃত অর্থ হল আদেশদাতাগণ, কর্তৃত্বের অধিকারী, শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী, কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকগণ। উলিল আমর বাক্যটি কুরআনে দুই জায়গায় এসেছে। আন-নিসা, ৪/৫৯, ৪/৮৩। এখন প্রশ্ন হল- উলিল আমর বা কর্তৃত্বের অধিকারী কারা? শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় উলিল আমর হলেন শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষ। এটা হল দেশের মধ্যে আর পরিবারের মধ্যে উলিল আমর হলেন পরিবারের প্রধান কারণ পরিবারের প্রধান পরিবারের মধ্যে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রাখে।
>>>> কর্তৃত্বের অধিকারী কারা <<<<
শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষ। ক্ষমতা যার হাতে আছে তাকে বুজানো হয়েছে। এই ক্ষমতা বিভি্ন্ন পর্যায়ের হতে পারে। কারো হতে থানার ক্ষমতা, কারো বা জেলার ক্ষমতা আবার কারো বা দেশের ক্ষমতা। এখানে সেই শাসকবৃন্দ, শাসকমন্ডলী বা কর্তৃপক্ষকে বুঝানো হয়েছে।
সরলপথ এর ব্যাখ্যায় অন্য আরেক মোফাসসের দল বলেন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এই ব্যাখ্যা সহীহ হাদীস বিদ্যামান রয়েছে। সহীহ হাদীসটি হলোঃ- “হযরত আলী (রা:) সূত্রে বর্নীত তিনি বলেন, সহজ-সরল পথটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (ইবনু কাছীর ১/১৩০ পৃষ্ঠা, টীকা নং – তাফসীরে ত্বাবারী হা/৪০)।”
>>>> ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ (সিরাতল মুস্তাকিম) হচ্ছে ইসলাম <<<<
আরেকদল তাফসীরবিদ বলেন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে ইসলাম। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা’র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আল ইমরান-৩/১৯)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা এ প্রসঙ্গে সূরা মায়েদায় বলেছেন:
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ
‘‘আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে পছন্দ করে নিলাম।’’ [সূরা আল-মায়েদা: ৩]
সুতরাং কুরআনের এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা ইসলামকে দীন বলেছেন সেহেতু একইভাবে দ্বীন এবং মাযহাব একই অর্থ বহন করে, তাই আমরা বলতে পারি, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য মাযহাব বা দ্বীনের নাম হচ্ছে একমাত্র ইসলাম মাযহাব। আমাদের এই ইসলাম মাযহাবের ইমামের নাম হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লা
ম ( ﷺ )।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে যেহাক বর্ননা করেন – হযরত জিবরাঈল (আ:) নবী (সা:) কে বললেন, হে মোহাম্মদ! আপনি বলুন, সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন। তাতে কোনরূপ বক্রতা নেই। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু মালেক, আবু সালেহ ও ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান আস সুদ্দীয়ুল কবীর হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে হাদীসটি উল্লেখ করেন। মোররা হামদানী ও ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান আস সুদ্দীয়ুল কবির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ সহ একদল সাহাবা থেকে বর্ননা করেন – সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে ইসলাম। ইবনুল হানাফিয়াহ বলেন – সিরাতল মুস্তাকিম হচ্ছে সেই দ্বীন যা ছাড়া অন্য কোন দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা গ্রহন করেন না।
যেমন – বর্তমানে প্রচলিত মাযহাব দ্বীন। এই দ্বীনের সম্বন্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা পবিত্র কুরআনের কোথাও দিক নিরদেশনা দেন নি। তাই কথিত মাযহাব দ্বীন বাদ দিয়ে আমাদেরকে পরিপূর্ণ ইসলাম মাযহাবে দাখিল হতে হবে। তাই ঈমানদারকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা এভাবে দোয়া করতে বলেছেন যা সূরা আল ইমরানের ৮নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। “হে আমাদের মালিক (একবার যখন) তুমি আমাদের (সঠিক) পথের দিশা দিয়েছো, (তখন আর) তুমি আমাদের মনকে বাঁকা করে দিয়ো না, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের প্রতি দয়া করো, অবশ্যই তুমি শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং – ৮)।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, - মাগরিব সালাতে তৃতীয় রাকাতে ফাতেহা পড়ার পর হযরত আবু বকর (রা:) প্রায়ই এই আয়াত তেলায়ত করতেন, "হে আল্রাহ! আমাদেরকে হেদায়তে দৃঢ়পদ রাখো এবং বিপথগামী হতে দিয়ো না।"
“সরলপথ” প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের আরও আয়াতসমূহ –
(১) সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। (Yaseen: 4)
(২) আর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করব। (An-Nisaa: 68)
(৩) যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে, না সে ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরলপথে চলে? (Al-Mulk: 22)
(৪) আমি তো সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ অবর্তীর্ণ করেছি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালনা করেন। (An-Noor: 46)
(৫) সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। (Al-A'raaf: 16)
(৬) অতএব, আপনার প্রতি যে ওহী নাযিল করা হয়, তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরল পথে রয়েছেন। (Az-Zukhruf: 43)
(৭) তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। (An-Nahl: 121)
(৮) সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন। (An-Nahl: 9)
(৯) যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-Fath: 2)
(১০) যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারের মধ্যে মূক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-An'aam: 39)
(১১) বলুন, প্রত্যেকেই পথপানে চেয়ে আছে, সুতরাং তোমরাও পথপানে চেয়ে থাক। অদূর ভবিষ্যতে তোমরা জানতে পারবে কে সরল পথের পথিক এবং কে সৎপথ প্রাপ্ত হয়েছে। (Taa-Haa: 135)
(১২) এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান। (Al-Baqara: 142)
(১৩) তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (Al-An'aam: 153)
(১৪) অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন। (An-Nisaa: 175)
(১৫) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে। (An-Nisaa: 51)
(১৬) তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে। (Al-Ahqaf: 30)
(১৭) আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার পালকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই। (Hud: 56)
(১৮) এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। (Al-Maaida: 16)
(১৯) আর যেদিন তাদেরকে সমবেত করা হবে, যেন তারা অবস্থান করেনি, তবে দিনের একদন্ড একজন অপরজনকে চিনবে। নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে এবং সরলপথে আসেনি। (Yunus: 45)
(২০) আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের। (Aali Imraan: 101)
(২১) আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন। (Al-Hajj: 67)
(২২) যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। (An-Nisaa: 115)
(২৩) আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে। (An-Nahl: 76)
(২৪) যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে। (Luqman: 32)
(২৫) আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি তোমাদের থেকে শত্রুদের স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে এটা মুমিনদের জন্যে এক নিদর্শন হয় এবং তোমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (Al-Fath: 20)
(২৬) আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন একটি মোজেযা আনতে পারেন, তবে নিয়ে আসুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাইকে সরল পথে সমবেত করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (Al-An'aam: 35)
(২৭) আর মূসা বেছে নিলেন নিজের সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোক আমার প্রতিশ্রুত সময়ের জন্য। তারপর যখন তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তখন বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি যদি ইচ্ছা করতে, তবে তাদেরকে আগেই ধ্বংস করে দিতে এবং আমাকেও। আমাদেরকে কি সে কর্মের কারণে ধ্বংস করছ, যা আমার সম্প্রদায়ের নির্বোধ লোকেরা করেছে? এসবই তোমার পরীক্ষা; তুমি যাকে ইচ্ছা এতে পথ ভ্রষ্ট করবে এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথে রাখবে। তুমি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর করুনা কর। তাছাড়া তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী। (Al-A'raaf: 155)
(২৮) মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, ত আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
সরলপথ সম্পর্কীত সহীহ হাদীসসমূহঃ -
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা:)বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেন, - আল্লাহ একটা দৃষ্টান্ত বর্ননা করেছেন, একটি সরল-সঠিক পথ তার দু’পাশে দুটি প্রাচীর যাতে বহু খোলা দরজা রয়েছে এবং লোকদেরকে আহবান করছে, আস! পথে সোজা চলে যাও। বক্র পথে চলিও না। আর তার একটু আগে আর একজন আহবায়ক লোকদেরকে ডাকছে। যখনই কোন বান্দা সে সকল দরজার কোন একটি খুলতে চায় তখনই সে তাকে বলে, সর্বনাশ দরজা খুল না। দরজা খুললেই তুমি তাতে ঢুকে পড়বে।আর ঢুকলেই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা:)কথাগুলির ব্যাখ্যা করে বললেন, সরল-সঠিক পথ হচ্ছে ইসলাম আর খোলা দরজা সমূহ হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বিষয়সমূহ এবং ঝুলানো পর্দা সমূহ হচ্ছে কুরআন। আর তার সম্মুখের আহবায়ক হচ্ছে এক উপদেষ্টা (ফেরেশতার ছোঁয়া) যা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে আল্লাহর পক্ষ হতে বিদ্যমান। (তিরমিযী হা/২৮৫৯, ত্ববারী হা/১৮৬-১৮৭)। অত্র হাদীসে পথ শব্দের সাথে সঠিক শব্দটি লাগানোর উদ্দেশ্যে এমন পথ যাতে কোন ভুল নেই এবং যার শেষ গন্তব্য জান্নাত।
সরলপথ সম্পর্কীত যঈফ হাদীস সমূহঃ –
১। হযরত আলী(রা:)বলেন, সঠিক পথ হচ্ছে আল্লাহর মজবুত রশি তা হচ্ছে জ্ঞান সম্পন্ন যিকির তা হচ্ছে সরল-পথ (তিরমিযী – হা/২৯০৬)।
২। হারীস (রা:)বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখি কিছু মানুষ বিভিন্ন কথায় মত্ত। আমি আলী (রা:)এর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি দেখছেন না মানুষ মসজিদের মধ্যে কত কথায় লিপ্ত রয়েছে? তিনি বললেন, মনে রেখ আমি নবী করিম (সা:) কে বলতে শুনেছি অচিরেই অনেক ফেতনা দেখা দিবে। আমি বললাম, এসব ফেতনা বাঁচার পথ কি? রাসূলুল্লাহ (সা:)বললেন, আল্লাহর কিতাব। আল্লাহর কিতাবটি এমন কিতাব যাতে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ।তাতে তোমাদের সবধরনের ফায়সালা রয়েছে তা হচ্ছে হক্ব ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের এক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। তা কোন মজা করার বস্ত নয়। তা এমন এক গ্রন্থ যদি মানুষ তাকে অহংকার করে ত্যাগ করে, তাহলে আল্রাহ তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ধ্বংস করে দিবেন। কেউ যদি কুরআন ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থে সঠিক, সহজ-সরল পথ অন্বেষন করে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। তা হচ্ছে আল্লাহর মজবুত রশি। তা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জিকির আর তা হচ্ছে সহজ-সরল পথ। কোন প্রবৃত্তি তা দ্বারা ভ্রষ্ট হবে না। কোন জিহবা তাতে বাতিল মিশাতে পারবে না। আলিমগণ পড়ে শেষ তৃপ্তি অর্জন করতে পারে না। বার বার পড়লেও তা পুরাতন হয় না। তার অলৌকিক দর্শন শেষ হয় না। জিনেরা শুনে বলেছিল আমরা আশ্চর্য কুরআন শুনলাম। তা এমন গ্রন্থ যে, কেউ তার মাধ্যমে কথা বললে সত্য হবে। তা দ্বারা ফায়সালা করলে ইনসাফ হবে, তা দ্বারা আমল করলে নেকী দেয়া হবে ও সে পথে দাওয়াত দিলে তাকে সঠিক সহজ-সরল পথ দেখানো হবে। (দারেমী হা/নং-৩৩৩১)।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, সূরা ফাতেহা হচ্ছে পূর্ণ কুরআনের গোপন কথা। আর সূরা ফাতিহার পূর্ণ রহস্য ও তাৎপর্য হচ্ছে এ আয়াত ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ যার অর্থ হচ্ছে ”আমরা একমাত্র তোমারা্ই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই নিকট সাহায্য চাই।” আর এ কারনেই ইমাম-মুক্তাদী সকলকেই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। মানুষ এই আয়াতের সঠিক তাৎপর্য ও রহস্য বুঝতে পারলে ইমামের পড়াকেই যথেষ্ট মনে করত না বরং নিজে পড়া জরুরী মনে করত যেমন হযরত আবু বকর (রা:)করেছেন যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
0 Comments