>>> নিদ্রা তথা ছোট মৃত্যু <<<
নিদ্রা মহান আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। নিদ্রা অবস্থায় কলম উঠিয়ে নেয়া হয়। পরিমিত নিদ্রার ফলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভ হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তির রূহ উঠিয়ে নেয়া হয়, নিদ্রা ভাঙ্গলে তার দেহে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বড় মৃত্যুর পর তার দেহে রূহ ফিরে আসে না। মহান আল্লাহ বলেন;
اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আল্লাহ জীবসমূহের রূহ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার রূহ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে। (আয-যুমার ৩৯/৪২)
.
এ আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, আমার কাছে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, “জীবিত ও মৃত ব্যক্তির রূহ স্বপ্নে মিলিত হয়ে পরস্পর পরস্পর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। অতঃপর আল্লাহ মৃত ব্যক্তির রূহ রেখে দেন এবং জীবিত ব্যক্তির রূহ তার শরীরে ফিরে দেন।” ( আল-মু‘জাম আল-আওসাত, তাবরানী, ১/৪৫, হাদীস নং ১২২)
.
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন;
وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۖ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ
আর তিনিই রাতে তোমাদের রূহ কবজ করেন এবং দিনে তোমরা যা কামাই কর তা তিনি জানেন। তারপর দিনে তোমাদেরকে তিনি পুনরায় জাগিয়ে তুলেন, যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমরা যা করতে সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন। আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী এবং তিনি তোমাদের উপর প্রেরণ করেন হিফাযতকারীদের। অবশেষে তোমাদের কারো যখন কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়, আমার প্রেরিত দূতগণ (ফিরিশতা) তার প্রাণ হরণ করে আর তারা কোন ত্রুটি করে না। (আল-আনআম, ৬/৬০-৬১)
.
এই আয়াতগুলো থেকে প্রমাণ হয়, যিনি জীবিত এবং যাঁর রূহ নিদ্রার সময় দেহ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, সে রূহ দেহে ফিরে আসে। যার জীবনকাল শেষ হয়নি, তার রূহকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর যার মৃত্যু হয়েছে তাঁর রূহকে আটকে রাখা হয়। কিয়ামতের আগে সেই রূহকে তার দেহের মধ্যে ফিরে যেতে দেয়া হবে না। সহীহ হাদীসেও এর ব্যাখ্যা রয়েছে। আবূ ক্বাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু তাঁর পিতা হতে বর্ণিত; যখন তাঁরা সালাত থেকে ঘুমিয়ে ছিলেন তখন নবী (ﷺ) বলেছিলেন;
إِنَّ اللهَ قَبَضَ أَرْوَاحَكُمْ حِينَ شَاءَ وَرَدَّهَا حِينَ شَاءَ فَقَضَوْا حَوَائِجَهُمْ وَتَوَضَّئُوا إِلَى أَنْ طَلَعَتْ الشَّمْسُ وَابْيَضَّتْ فَقَامَ فَصَلَّى
আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন তোমাদের রূহকে নিয়ে নেন, আর যখন ইচ্ছা ফিরিয়ে দেন। এরপর তারা তাদের প্রয়োজন সারলেন এবং ওযূ করলেন। এতে সূর্য উঠে সাদা রং হয়ে গেল। নবী (ﷺ) উঠলেন, সালাত আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী ৭৪৭১)
.
উপরোক্ত আয়াতগুলো ও হাদিস থেকে বুঝা যায় রূহের কয়েকটি অবস্থা রয়েছে। ১) নিদ্রাবস্থায় রূহকে উঠিয়ে নেয়া হয়। ২) রূহকে আটক করা হয়। ৩) রূহকে ফিরিয়েও দেয়া হয়। ৪) মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ রূহকে কবয করেন। ৫) রূহকে উপরে উঠানো হয়।
.
দু‘আতেও নবী (ﷺ) নিদ্রাকে মৃত্যু বলেছেন। এ দ্বারা বুঝা যায় নিদ্রা হলো ছোট মৃত্যু। হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শোয়ার জন্য বিছানায় আসতেন তখন বলতেন;
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا، وَإِذَا اسْتَيْقَظَ ، قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانًا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহইয়া” অর্থ্যাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই মৃত্যু লাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব। অতঃপর আবার যখন নিদ্রা ভঙ্গ করতেন তখন বলতেন, “আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহইয়ানা-বা’দা মা-আমা-তানা-ওয়া ইলায়হিন নুশূর” অর্থ্যাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর! যিনি মৃত্যুর পর জীবন দিয়েছেন আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সহীহ বুখারী ৬৩১২; আবু দাউদ ৫০৪৯; তিরমিযি ৩৪১৭; আদাবুল মুফরাদ ১২১৭)
0 Comments