কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এবং নারীর উত্তরাধিকার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক কেন -
আসলে এ বৈষম্য কেন - ইসলামে এর প্রকৃত বিধান কি?
সূরা নিসা, আয়াত নং ৮ এ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا
আসলে এ বৈষম্য কেন - ইসলামে এর প্রকৃত বিধান কি?
সূরা নিসা, আয়াত নং ৮ এ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا
আর যদি বণ্টনে নিকটাত্মীয় এবং ইয়াতীম ও মিসকীনরা উপস্থিত হয়, তাহলে তোমরা তাদেরকে তা থেকে আহার দেবে এবং তাদের সাথে তোমরা
উত্তম কথা বলবে।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ মীরাস বন্টনের সময় নিকট ও দূরের আত্মীয়রা, নিজের গোত্রের ও পরিবারের গরীব মিসিকন লোকেরা এবং এতিম ছেলেমেয়ে যারা সেখানে উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হৃদয়হীন ব্যবহার করো না।
শরীয়াতের বিধান মতে মীরাসে তাদের অংশ নেই ঠিকই কিন্তু একটু ঔদার্যের পরিচয় দিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদেরকেও কিছু দিয়ে দাও। সাধারণভাবে এহেন অবস্থায় সংকীর্ণমনা লোকেরা যে ধরনের হৃদয়বিদারক আচরণ করে ও নির্মম কথাবার্তা বলে, তাদের সাথে তেমনটি করো না। (তথ্যসূত্রঃ তাফহীমূল কুরআন – সাইদ আবুল আলা মওদূদী, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, বাংলাবাজার)।
সূরা নিসার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا (11) وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُنَّ وَلَدٌ فَإِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَكُمْ وَلَدٌ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَإِنْ كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ فَإِنْ كَانُوا أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَى بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ وَصِيَّةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ (12)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ মীরাস বন্টনের সময় নিকট ও দূরের আত্মীয়রা, নিজের গোত্রের ও পরিবারের গরীব মিসিকন লোকেরা এবং এতিম ছেলেমেয়ে যারা সেখানে উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হৃদয়হীন ব্যবহার করো না।
শরীয়াতের বিধান মতে মীরাসে তাদের অংশ নেই ঠিকই কিন্তু একটু ঔদার্যের পরিচয় দিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদেরকেও কিছু দিয়ে দাও। সাধারণভাবে এহেন অবস্থায় সংকীর্ণমনা লোকেরা যে ধরনের হৃদয়বিদারক আচরণ করে ও নির্মম কথাবার্তা বলে, তাদের সাথে তেমনটি করো না। (তথ্যসূত্রঃ তাফহীমূল কুরআন – সাইদ আবুল আলা মওদূদী, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, বাংলাবাজার)।
সূরা নিসার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا (11) وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُنَّ وَلَدٌ فَإِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَكُمْ وَلَدٌ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَإِنْ كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ فَإِنْ كَانُوا أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَى بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ وَصِيَّةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ (12)
"আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের উত্তরাধিকারগত সম্পদ সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার সমান। কিন্তু দুয়ের বেশী কন্যা থাকলে তারা পাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ, আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধাংশ । মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতা প্রত্যেকেই পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর যদি মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হয় এবং শুধু তার পিতা মাতাই উত্তরাধিকারী হলে তার মায়ের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ,আর মৃত ব্যক্তির ভাই বোন থাকলে মা পাবে ১/৬ ভাগ। এসব কিছুই সে যা অসিয়ৎ করে গেছে, সেই অসিয়ৎ পালন এবং তাঁর ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য। তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য বেশী উপকারী তা তোমরা জান না,এও আল্লাহর নির্দেশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।" (৪:১১)
"তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে, তাদের সন্তান থাকলে,তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ। এসব কিছুই তারা যা ওসিয়ত করে, তা দেয়ার পর এবং তাদের ঋণ শোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে, তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির ৮ ভাগের এক ভাগ।
এসবই তোমরা যা ওসিয়ত করবে তা দেয়ার পর ও ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য। যদি কোন পুরুষ মারা যায় (সন্তান ও পিতা-মাতাহীন অবস্থায়) এবং বৈমাত্রেয় ভাই-বোনই যদি তার একমাত্র উত্তরাধীকারী হয় অথবা কোন নারী যদি মারা যায় (সন্তান ও পিতা-মাতাহীন অবস্থায়,তার ভাই-বোনই যদি তা একমাত্র উত্তরাধীকারী হয় তাহলে তারা প্রত্যেকেই পাবে এক ষষ্ঠাংশ। তারা এর বেশী হলে সকলে অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশের। এটাও ওসিয়ত ও ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য। যদি এটা কারও জন্য হানিকর না হয়। এটা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।" (৪:১২)
মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহই যেহেতু ধর্মীয় বিধি-বিধান দিয়েছেন তাই তার নির্দেশ ও আইন-কানুন মানুষের প্রকৃতিগত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে বস্তু জগতের সম্পর্ক, মালিকানা, কর্তৃত্ব সব কিছু ছিন্ন হয় এবং মানুষ অন্য জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষ মৃত্যুর আগে জীবদ্দশায় সে সব অর্জন করে সে সবের কি পরিণতি হয় এবং সে গুলো কার কাছে হস্তান্তর করা হয়? কিছু গোত্রের মধ্যে মৃত ব্যক্তির ধন সম্পদ তার পিতা, পুত্র, ভাই এ ধরনের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। ওই সব গোত্রে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী,কন্যা সন্তান বা মহিলারা কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পান না। আর বর্তমান আধুনিক কিছু দেশে মৃত ব্যক্তির সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই সম্পদে সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের কোন স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কিন্তু ইসলামের বিধান এ থেকে ভিন্ন। ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ ছেলে ও মেয়ে সন্তান,স্ত্রী এবং নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তির জন্যও কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তি তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ইচ্ছেমত ওসিয়ত করতে পারবে যাতে তা তার মৃত্যুর পর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ব্যয় করা হয়। ইসলামের এ অসাধারণ উত্তরাধিকার আইনের ফলে যাদের যথেষ্ট সম্পদ আছে তারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মতৎপরতা চালায়।
কারণ তারা জানে যে তাদের মৃত্যুর পর সম্পদের মালিক হবে তাদেরই সন্তান-সন্তুতি যারা কিনা তার নাম ও স্মৃতি চিরঞ্জীব রাখবে। এ জন্য ইসলাম ধর্মে প্রথম ধাপে উত্তরাধিকার ভাগ করা হয় সন্তানদের মধ্যে এবং এরপর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের দ্বিগুণ সম্পদ দেয়া হয়। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে সংসারের ভরণ-পোষণের দায় দায়িত্ব পুরুষের। এ দায়িত্ব পালনের জন্যে পুরুষকে অধিক অর্থ উপার্জনের চেষ্টা চালাতে হয়। তাই তার মূলধন ও পুঁজির প্রয়োজন হয় বেশী। বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে ইসলামের উত্তরাধিকার আইন মহিলাদের বিপক্ষে। কিন্তু ইসলামের অন্যান্য আইন কানুনের দিকে তাকালে বুঝা যায়,আসলে উত্তরাধিকার আইন নারীর স্বার্থের অনুকূলে। কারণ ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় অর্থ উপার্জনের কোন দায়িত্ব স্ত্রীর ওপর অর্পিত হয়নি। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ,পোশাক-আশাক, বাসস্থানসহ যাবতীয় চাহিদা মেটাবার দায়িত্ব স্বামীর। ফলে মহিলারা উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একভাগ সম্পত্তি পেলেও পুরোটাই ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় কিংবা নিজের জন্য সঞ্চয় হিসেবে রেখে দিতে পারেন। পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে দুই ভাগ সম্পত্তি পেলেও তাকে কমপক্ষে অর্ধেক সম্পদ অথবা তারও বেশী স্ত্রীর মোহরানা ও ভরণ পোষণ বাবদ ব্যয় করতে হয়।
প্রকৃতপক্ষে মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে যে একভাগ সম্পত্তি পান সেটার মালিক এবং পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে যে দুভাগ সম্পত্তি পায় তারও এক অংশের মালিক। অর্থাৎ মহিলারা একভাগ সম্পত্তি সঞ্চয় হিসেবে রাখতে পারে এবং স্বামীর সাথে অংশীদার আরেক ভাগ সম্পদ দৈনন্দিন ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। অথচ স্ত্রীর সম্পত্তির ওপর পুরুষের কোন অধিকার নেই এবং পুরুষকে নারীর সব প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে হয়।
সূরা নিসার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে মৃত ব্যক্তির বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীর মধ্যে সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বলা হয়েছে। অবশ্য ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের খুঁটিনাটি সব কিছু এ দুই আয়াতে বলা হয়নি। নির্ভরযোগ্য হাদিসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অবশ্য বলে রাখা দরকার যে,মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টনের আগে প্রথমে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ এবং তার ওসিয়ত বাস্তবায়ন করতে হয়। কারণ উত্তরাধিকারদের চেয়ে মৃত ব্যক্তি এবং অন্যান্য মানুষের অধিকার অগ্রগণ্য।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় কয়েকটি দিক হচ্ছে,
এক. উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের অর্ধেক সম্পত্তি পেয়ে থাকে। এটা তাদের প্রতি অবিচার নয়। বরং এটা সামাজিক জীবনের পার্থক্য এবং মহাবিজ্ঞ আল্লাহ পাকের নির্দেশ থেকে উৎসারিত হয়েছে।
দুই. মানুষের অধিকার আদায় করা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ দুই আয়াতে চার বার এ সম্পর্কে জোর দেয়া হয়েছে। যাতে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা অন্য মানুষের অধিকারের কথা ভুলে না যায়।
সূরা নিসার ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (13) وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (14)
"তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে, তাদের সন্তান থাকলে,তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ। এসব কিছুই তারা যা ওসিয়ত করে, তা দেয়ার পর এবং তাদের ঋণ শোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে, তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির ৮ ভাগের এক ভাগ।
এসবই তোমরা যা ওসিয়ত করবে তা দেয়ার পর ও ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য। যদি কোন পুরুষ মারা যায় (সন্তান ও পিতা-মাতাহীন অবস্থায়) এবং বৈমাত্রেয় ভাই-বোনই যদি তার একমাত্র উত্তরাধীকারী হয় অথবা কোন নারী যদি মারা যায় (সন্তান ও পিতা-মাতাহীন অবস্থায়,তার ভাই-বোনই যদি তা একমাত্র উত্তরাধীকারী হয় তাহলে তারা প্রত্যেকেই পাবে এক ষষ্ঠাংশ। তারা এর বেশী হলে সকলে অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশের। এটাও ওসিয়ত ও ঋণ শোধের পর প্রযোজ্য। যদি এটা কারও জন্য হানিকর না হয়। এটা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।" (৪:১২)
মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহই যেহেতু ধর্মীয় বিধি-বিধান দিয়েছেন তাই তার নির্দেশ ও আইন-কানুন মানুষের প্রকৃতিগত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে বস্তু জগতের সম্পর্ক, মালিকানা, কর্তৃত্ব সব কিছু ছিন্ন হয় এবং মানুষ অন্য জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষ মৃত্যুর আগে জীবদ্দশায় সে সব অর্জন করে সে সবের কি পরিণতি হয় এবং সে গুলো কার কাছে হস্তান্তর করা হয়? কিছু গোত্রের মধ্যে মৃত ব্যক্তির ধন সম্পদ তার পিতা, পুত্র, ভাই এ ধরনের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। ওই সব গোত্রে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী,কন্যা সন্তান বা মহিলারা কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পান না। আর বর্তমান আধুনিক কিছু দেশে মৃত ব্যক্তির সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই সম্পদে সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের কোন স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কিন্তু ইসলামের বিধান এ থেকে ভিন্ন। ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ ছেলে ও মেয়ে সন্তান,স্ত্রী এবং নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তির জন্যও কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তি তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ইচ্ছেমত ওসিয়ত করতে পারবে যাতে তা তার মৃত্যুর পর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ব্যয় করা হয়। ইসলামের এ অসাধারণ উত্তরাধিকার আইনের ফলে যাদের যথেষ্ট সম্পদ আছে তারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মতৎপরতা চালায়।
কারণ তারা জানে যে তাদের মৃত্যুর পর সম্পদের মালিক হবে তাদেরই সন্তান-সন্তুতি যারা কিনা তার নাম ও স্মৃতি চিরঞ্জীব রাখবে। এ জন্য ইসলাম ধর্মে প্রথম ধাপে উত্তরাধিকার ভাগ করা হয় সন্তানদের মধ্যে এবং এরপর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের দ্বিগুণ সম্পদ দেয়া হয়। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে সংসারের ভরণ-পোষণের দায় দায়িত্ব পুরুষের। এ দায়িত্ব পালনের জন্যে পুরুষকে অধিক অর্থ উপার্জনের চেষ্টা চালাতে হয়। তাই তার মূলধন ও পুঁজির প্রয়োজন হয় বেশী। বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে ইসলামের উত্তরাধিকার আইন মহিলাদের বিপক্ষে। কিন্তু ইসলামের অন্যান্য আইন কানুনের দিকে তাকালে বুঝা যায়,আসলে উত্তরাধিকার আইন নারীর স্বার্থের অনুকূলে। কারণ ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় অর্থ উপার্জনের কোন দায়িত্ব স্ত্রীর ওপর অর্পিত হয়নি। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ,পোশাক-আশাক, বাসস্থানসহ যাবতীয় চাহিদা মেটাবার দায়িত্ব স্বামীর। ফলে মহিলারা উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একভাগ সম্পত্তি পেলেও পুরোটাই ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় কিংবা নিজের জন্য সঞ্চয় হিসেবে রেখে দিতে পারেন। পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে দুই ভাগ সম্পত্তি পেলেও তাকে কমপক্ষে অর্ধেক সম্পদ অথবা তারও বেশী স্ত্রীর মোহরানা ও ভরণ পোষণ বাবদ ব্যয় করতে হয়।
প্রকৃতপক্ষে মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে যে একভাগ সম্পত্তি পান সেটার মালিক এবং পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে যে দুভাগ সম্পত্তি পায় তারও এক অংশের মালিক। অর্থাৎ মহিলারা একভাগ সম্পত্তি সঞ্চয় হিসেবে রাখতে পারে এবং স্বামীর সাথে অংশীদার আরেক ভাগ সম্পদ দৈনন্দিন ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। অথচ স্ত্রীর সম্পত্তির ওপর পুরুষের কোন অধিকার নেই এবং পুরুষকে নারীর সব প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে হয়।
সূরা নিসার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে মৃত ব্যক্তির বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীর মধ্যে সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বলা হয়েছে। অবশ্য ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের খুঁটিনাটি সব কিছু এ দুই আয়াতে বলা হয়নি। নির্ভরযোগ্য হাদিসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অবশ্য বলে রাখা দরকার যে,মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টনের আগে প্রথমে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ এবং তার ওসিয়ত বাস্তবায়ন করতে হয়। কারণ উত্তরাধিকারদের চেয়ে মৃত ব্যক্তি এবং অন্যান্য মানুষের অধিকার অগ্রগণ্য।
এই আয়াতের শিক্ষণীয় কয়েকটি দিক হচ্ছে,
এক. উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের অর্ধেক সম্পত্তি পেয়ে থাকে। এটা তাদের প্রতি অবিচার নয়। বরং এটা সামাজিক জীবনের পার্থক্য এবং মহাবিজ্ঞ আল্লাহ পাকের নির্দেশ থেকে উৎসারিত হয়েছে।
দুই. মানুষের অধিকার আদায় করা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ দুই আয়াতে চার বার এ সম্পর্কে জোর দেয়া হয়েছে। যাতে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা অন্য মানুষের অধিকারের কথা ভুলে না যায়।
সূরা নিসার ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (13) وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (14)
"এ সব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা । কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত,সেখানে তারা স্থায়ীভাবে বাস করবে এবং এটা মহাসাফল্য।" (৪:১৩)
"আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।" (৪:১৪)
উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আয়াতের পর এ দুই আয়াতে আল্লাহপাক বিশ্বাসী ব্যক্তিদেরকে আর্থিক ব্যাপারে বিশেষ করে মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার আআহ্বান জানিয়েছেন এবং তার নির্দেশ লংঘনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা ভয়াবহ কঠিন। এ দুই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,আল্লাহর আনুগত্য মানে কেবল তার এবাদত বা উপাসনা নয়। বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার মেনে চলা হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য ও ধার্মিকতার শর্ত। সেই ব্যক্তি ও সমাজই কল্যাণের অধিকারী হবে যে এই বিধান তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মেনে চলবে।
এ দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:-
প্রথমত: দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের অধিকারী হওয়ার উপায় হচ্ছে ইসলামের বিধান মেনে চলা।
দ্বিতীয়ত: মানুষের অধিকার যারা গ্রাস করে তারা কাফেরদের পর্যায়ে পড়ে এবং তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
তৃতীয়ত: মৃত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধ অথবা সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য যদিও উপস্থিত নেই,তবুও মনে রাখা দরকার যে,আল্লাহ আছেন এবং যারা মানুষের অধিকার পদদলিত করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
এছাড়া আরও যে সকল আয়াতে ও হাদীসে মীরাস বন্টন সম্পর্কে বলা হয়েছে
ইসলামী পারিবারিক বিধানে নারী ও পুরুষ পরস্পরের পোষাক সদৃশ (বাক্বারাহ ১৮৭)। তারা একে অপরের পরিপূরক এবং কেউ কারু থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ইসলামী পরিবারে ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ (নাসাঈ, মিশ, হা/৪৯৩৯)। ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (তির, মিশ, হা/৪৯২৭)। ‘রক্তের সম্পর্ক আরশের সাথে ঝুলন্ত’। যে তা দৃঢ় রাখে, আল্লাহ তার সাথে থাকেন। যে তা ছিন্ন করে, আল্লাহ তাকে পরিত্যাগ করেন’ এবং ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুত্তা, মিশ, হা/৪৯২১-২২)। ‘স্ত্রীর নিকটে স্বামী সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র (তির, মিশ, হা/৩২৫৫) এবং ‘ঐ স্বামীই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম’ (তির, মিশ, হা/৩২৬৪)। ‘কন্যা সন্তানের প্রতি উত্তম আচরণ তার পিতা-মাতার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হবে’ (মুত্তা, মিশ, হা/৪৯৪৯)। ইসলামী পরিবারে নারী এবং তার সন্তানাদি ও পরিবারের ভরণপোষণ সহ যাবতীয় বাইরের দায়-দায়িত্ব পুরুষের। পক্ষান্তরে নারী হ’ল গৃহকত্রী।
সন্তান পালন ও সংসার গোছানো তার প্রধান দায়িত্ব। সংসারে একজন নারী তার পিতার স্নেহ, ভাইয়ের ভালোবাসা, স্বামীর প্রেম ও সন্তানের শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ। কমপক্ষে উপরোক্ত চারজন পুরুষের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে একজন নারী সর্বদা নিরাপদ আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করে। কেবল হৃদয়ের বন্ধন নয়, বরং অর্থনৈতিক বন্ধনেও তারা আবদ্ধ।
এজন্য ইসলাম নারীকে তার পিতা, ভাই, স্বামী ও সন্তানের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রদান করেছে। এভাবে একটি মুসলিম পরিবার পরস্পরে অবিচ্ছিন্ন একটি দেহের রূপ ধারণ করে। তাই উত্তরাধিকার বণ্টনে ইসলাম অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে এবং নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ রয়েছে… এবং নারীদের অংশ রয়েছে, কম হৌক বা বেশী হৌক একটি নির্ধারিত অংশ’ (নিসা ৭)।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ এই বিধান দিচ্ছেন যে, একজন পুত্রের অংশ দু’জন কন্যার সমান হবে। যদি কন্যার সংখ্যা দু’য়ের অধিক হয়, তবে তারা পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি মাত্র একটি কন্যা সন্তান থাকে, তাহ’লে সে অর্ধেক পাবে… মৃতের ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত পূরণ করার পরে’ (নিসা ১১)।
মৃতের স্ত্রী-কন্যারা তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ ব্যতীত উদ্বৃত্ত সব সম্পত্তির মালিক কখনোই হবেন না, যতক্ষণ মৃতের অন্য কোন নিকটাত্মীয় বা আছাবাহ থাকেন। যদি কেউ না থাকেন, তখনই কেবল উদ্বৃত্ত সম্পত্তির সবটা কন্যা পাবেন ‘রদ’-এর বিধান অনুযায়ী। কিন্তু স্ত্রী বা স্বামী নন। এমতাবস্থায় উদ্বৃত্ত সম্পদ ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালে জমা হবে। অথবা জনকল্যাণে দান করে দিবে। ইসলামী উত্তরাধিকার নীতিতে মীরাছ লাভের ভিত্তি হ’ল রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। কিন্তু যদি কেউ হত্যাকারী হয় অথবা মুরতাদ হয়, তাহ’লে সে নিহত ব্যক্তির এবং মুসলিম আত্মীয়ের মীরাছ পাবে না। অনুরূপভাবে কোন জারজ সন্তান তার পিতার অংশ পাবে না।
ইসলামের এই উত্তরাধিকার নীতি চিরন্তন বিধান হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে, যা পরিবর্তনযোগ্য নয়। কিন্তু ‘এক পুত্রের অংশ দু’কন্যার সমান’ এই বিষয়টিকে কথিত নারীবাদীরা টার্গেট বানিয়েছে এবং সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কুরআনী বিধানকে ছিন্ন-ভিন্ন করে সেখানে জাতিসংঘের রচিত মনগড়া বিধান ‘সিডো’ চাপিয়ে দেওয়ার ও তা বাস্তবায়নের দুঃস্বপ্ন দেখা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রভুর কালাম সত্য ও ন্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। তাকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (আন‘আম ১১৫)।
>>>> নারীর উত্তরাধিকার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক কেন <<<<
পূর্বে যে প্রাকৃতিক বাস্তবতার কথা আলোচিত হয়েছে তা থেকে অগ্রসর হয়ে পরিবারের জীবনোপকরণ সংগ্রহের ভার ন্যস্ত করেছে ইসলাম পুরুষের কাঁধে। পুরুষের স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম পিতা-মাতা কিংবা কামাইয়ের অযোগ্য ভাই অথবা দায়িত্ব নেয়ার কেউ নেই এমন বিবাহিত বোন হোক- সবার রুটি-রুজির দায়িত্ব তার ওপর। পক্ষান্তরে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব নারীর ওপর দেয়া হয়নি। এমনকি তার পিতা-মাতা বা যারা তাকে ছোট থেকে প্রতিপালন করেছেন- তাদের কারো দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়নি।
উদারণত এ জন্যই ইসলাম মুসলিমকে অনুমতি দেয় না তার সম্পদের যাকাত আপন স্ত্রী বা সন্তানদের দিতে। কেননা, তাকে নিজের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তাদের প্রয়োজন পুরো করতে হবে; সদকার অংশ থেকে তাদের ওপর খরচ করবে কেন। এ কারণে যাকাত কেবল সীমিত কয়েকটি খাতেই ব্যয় করতে হবে; এর বাইরে কোথাও ব্যয় করা যাবে না। এসব খাত হয়তো হকদার ব্যক্তির সমস্যা স্থায়ী বা সাময়িকভাবে দূর করবে অথবা উচ্চতর কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
"আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।" (৪:১৪)
উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আয়াতের পর এ দুই আয়াতে আল্লাহপাক বিশ্বাসী ব্যক্তিদেরকে আর্থিক ব্যাপারে বিশেষ করে মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার আআহ্বান জানিয়েছেন এবং তার নির্দেশ লংঘনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা ভয়াবহ কঠিন। এ দুই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে,আল্লাহর আনুগত্য মানে কেবল তার এবাদত বা উপাসনা নয়। বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার মেনে চলা হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য ও ধার্মিকতার শর্ত। সেই ব্যক্তি ও সমাজই কল্যাণের অধিকারী হবে যে এই বিধান তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মেনে চলবে।
এ দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:-
প্রথমত: দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের অধিকারী হওয়ার উপায় হচ্ছে ইসলামের বিধান মেনে চলা।
দ্বিতীয়ত: মানুষের অধিকার যারা গ্রাস করে তারা কাফেরদের পর্যায়ে পড়ে এবং তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
তৃতীয়ত: মৃত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধ অথবা সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য যদিও উপস্থিত নেই,তবুও মনে রাখা দরকার যে,আল্লাহ আছেন এবং যারা মানুষের অধিকার পদদলিত করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
এছাড়া আরও যে সকল আয়াতে ও হাদীসে মীরাস বন্টন সম্পর্কে বলা হয়েছে
ইসলামী পারিবারিক বিধানে নারী ও পুরুষ পরস্পরের পোষাক সদৃশ (বাক্বারাহ ১৮৭)। তারা একে অপরের পরিপূরক এবং কেউ কারু থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ইসলামী পরিবারে ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ (নাসাঈ, মিশ, হা/৪৯৩৯)। ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (তির, মিশ, হা/৪৯২৭)। ‘রক্তের সম্পর্ক আরশের সাথে ঝুলন্ত’। যে তা দৃঢ় রাখে, আল্লাহ তার সাথে থাকেন। যে তা ছিন্ন করে, আল্লাহ তাকে পরিত্যাগ করেন’ এবং ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুত্তা, মিশ, হা/৪৯২১-২২)। ‘স্ত্রীর নিকটে স্বামী সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র (তির, মিশ, হা/৩২৫৫) এবং ‘ঐ স্বামীই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম’ (তির, মিশ, হা/৩২৬৪)। ‘কন্যা সন্তানের প্রতি উত্তম আচরণ তার পিতা-মাতার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হবে’ (মুত্তা, মিশ, হা/৪৯৪৯)। ইসলামী পরিবারে নারী এবং তার সন্তানাদি ও পরিবারের ভরণপোষণ সহ যাবতীয় বাইরের দায়-দায়িত্ব পুরুষের। পক্ষান্তরে নারী হ’ল গৃহকত্রী।
সন্তান পালন ও সংসার গোছানো তার প্রধান দায়িত্ব। সংসারে একজন নারী তার পিতার স্নেহ, ভাইয়ের ভালোবাসা, স্বামীর প্রেম ও সন্তানের শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ। কমপক্ষে উপরোক্ত চারজন পুরুষের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে একজন নারী সর্বদা নিরাপদ আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করে। কেবল হৃদয়ের বন্ধন নয়, বরং অর্থনৈতিক বন্ধনেও তারা আবদ্ধ।
এজন্য ইসলাম নারীকে তার পিতা, ভাই, স্বামী ও সন্তানের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রদান করেছে। এভাবে একটি মুসলিম পরিবার পরস্পরে অবিচ্ছিন্ন একটি দেহের রূপ ধারণ করে। তাই উত্তরাধিকার বণ্টনে ইসলাম অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে এবং নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ রয়েছে… এবং নারীদের অংশ রয়েছে, কম হৌক বা বেশী হৌক একটি নির্ধারিত অংশ’ (নিসা ৭)।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ এই বিধান দিচ্ছেন যে, একজন পুত্রের অংশ দু’জন কন্যার সমান হবে। যদি কন্যার সংখ্যা দু’য়ের অধিক হয়, তবে তারা পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি মাত্র একটি কন্যা সন্তান থাকে, তাহ’লে সে অর্ধেক পাবে… মৃতের ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত পূরণ করার পরে’ (নিসা ১১)।
মৃতের স্ত্রী-কন্যারা তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ ব্যতীত উদ্বৃত্ত সব সম্পত্তির মালিক কখনোই হবেন না, যতক্ষণ মৃতের অন্য কোন নিকটাত্মীয় বা আছাবাহ থাকেন। যদি কেউ না থাকেন, তখনই কেবল উদ্বৃত্ত সম্পত্তির সবটা কন্যা পাবেন ‘রদ’-এর বিধান অনুযায়ী। কিন্তু স্ত্রী বা স্বামী নন। এমতাবস্থায় উদ্বৃত্ত সম্পদ ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালে জমা হবে। অথবা জনকল্যাণে দান করে দিবে। ইসলামী উত্তরাধিকার নীতিতে মীরাছ লাভের ভিত্তি হ’ল রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। কিন্তু যদি কেউ হত্যাকারী হয় অথবা মুরতাদ হয়, তাহ’লে সে নিহত ব্যক্তির এবং মুসলিম আত্মীয়ের মীরাছ পাবে না। অনুরূপভাবে কোন জারজ সন্তান তার পিতার অংশ পাবে না।
ইসলামের এই উত্তরাধিকার নীতি চিরন্তন বিধান হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে, যা পরিবর্তনযোগ্য নয়। কিন্তু ‘এক পুত্রের অংশ দু’কন্যার সমান’ এই বিষয়টিকে কথিত নারীবাদীরা টার্গেট বানিয়েছে এবং সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কুরআনী বিধানকে ছিন্ন-ভিন্ন করে সেখানে জাতিসংঘের রচিত মনগড়া বিধান ‘সিডো’ চাপিয়ে দেওয়ার ও তা বাস্তবায়নের দুঃস্বপ্ন দেখা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রভুর কালাম সত্য ও ন্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। তাকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (আন‘আম ১১৫)।
>>>> নারীর উত্তরাধিকার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক কেন <<<<
পূর্বে যে প্রাকৃতিক বাস্তবতার কথা আলোচিত হয়েছে তা থেকে অগ্রসর হয়ে পরিবারের জীবনোপকরণ সংগ্রহের ভার ন্যস্ত করেছে ইসলাম পুরুষের কাঁধে। পুরুষের স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম পিতা-মাতা কিংবা কামাইয়ের অযোগ্য ভাই অথবা দায়িত্ব নেয়ার কেউ নেই এমন বিবাহিত বোন হোক- সবার রুটি-রুজির দায়িত্ব তার ওপর। পক্ষান্তরে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব নারীর ওপর দেয়া হয়নি। এমনকি তার পিতা-মাতা বা যারা তাকে ছোট থেকে প্রতিপালন করেছেন- তাদের কারো দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়নি।
উদারণত এ জন্যই ইসলাম মুসলিমকে অনুমতি দেয় না তার সম্পদের যাকাত আপন স্ত্রী বা সন্তানদের দিতে। কেননা, তাকে নিজের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তাদের প্রয়োজন পুরো করতে হবে; সদকার অংশ থেকে তাদের ওপর খরচ করবে কেন। এ কারণে যাকাত কেবল সীমিত কয়েকটি খাতেই ব্যয় করতে হবে; এর বাইরে কোথাও ব্যয় করা যাবে না। এসব খাত হয়তো হকদার ব্যক্তির সমস্যা স্থায়ী বা সাময়িকভাবে দূর করবে অথবা উচ্চতর কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
'নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্ল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৬০]।
তাছাড়া নারীরা তাদের সঞ্চিত সম্পদ স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন- চাই তার মালিক হন বিয়ের আগে কিংবা পরে। উপরন্তু তিনি আপন স্বামীকে তার নিজস্ব সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও নিযুক্ত করতে পারবেন। ইসলাম এ জন্য বিবাহপূর্ব ও বিবাহপরবর্তী সময়ে তার স্বতন্ত্র আইনী সত্তা সংরক্ষণেরও নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং বিয়ের আগে মেয়েরা যেমন তার পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিয়ের পরও তার অবস্থা তেমনি। বিয়ের পর তার গোত্রনামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যেমনটি প্রচলিত বস্তুগতভাবে সভ্য অনেক সমাজে। সেখানে বিয়ের আগে মেয়েরা গোত্রের নামে পরিচিত হয় আর বিয়ের পর সমাজ বা আইন তাকে স্বামীর বংশ পরিচয়ে অধিকার দেয়। যেন বিয়ের পর তার মালিকানা পিতার পরিবার থেকে স্বামীর পরিবারে স্থানান্তরিত হয়েছে!
আমরা যদি সূরা নিসার একাদশ আয়াত নিয়ে গবেষণা করি, তাহলে দেখতে পাই পুরুষকে পৈতৃক সম্পত্তিতে বেশি দেয়া হয়েছে তার কিছু দায়িত্ব ও কল্যাণের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে। যখন সরাসরি এ দায়িত্ব চলে যাবে, তখন অতিরিক্ত অংশটুকুও চলে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿11﴾
তাছাড়া নারীরা তাদের সঞ্চিত সম্পদ স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন- চাই তার মালিক হন বিয়ের আগে কিংবা পরে। উপরন্তু তিনি আপন স্বামীকে তার নিজস্ব সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও নিযুক্ত করতে পারবেন। ইসলাম এ জন্য বিবাহপূর্ব ও বিবাহপরবর্তী সময়ে তার স্বতন্ত্র আইনী সত্তা সংরক্ষণেরও নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং বিয়ের আগে মেয়েরা যেমন তার পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিয়ের পরও তার অবস্থা তেমনি। বিয়ের পর তার গোত্রনামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যেমনটি প্রচলিত বস্তুগতভাবে সভ্য অনেক সমাজে। সেখানে বিয়ের আগে মেয়েরা গোত্রের নামে পরিচিত হয় আর বিয়ের পর সমাজ বা আইন তাকে স্বামীর বংশ পরিচয়ে অধিকার দেয়। যেন বিয়ের পর তার মালিকানা পিতার পরিবার থেকে স্বামীর পরিবারে স্থানান্তরিত হয়েছে!
আমরা যদি সূরা নিসার একাদশ আয়াত নিয়ে গবেষণা করি, তাহলে দেখতে পাই পুরুষকে পৈতৃক সম্পত্তিতে বেশি দেয়া হয়েছে তার কিছু দায়িত্ব ও কল্যাণের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে। যখন সরাসরি এ দায়িত্ব চলে যাবে, তখন অতিরিক্ত অংশটুকুও চলে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿11﴾
'আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১১]
আয়াতে দেখা গেল একমাত্র মেয়ে তার পিতার অর্ধেক সম্পত্তির উত্তরাধিকারীণি হয় আর অবশিষ্ট অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার হয় নারী-পুরুষ উভয়ে অথবা দুই মেয়ে থাকলে তারা পিতামাতার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশের মালিক হয় আর অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বণ্টিত হয় নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে। অতএব মীরাস বা উত্তরাধিকারের অংশ নির্ধারিত হয় দায়িত্বের স্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত আত্মীয়তার স্তর অনুপাতে।
আর সাধারণত এই উত্তরাধিকার সম্পদের মালিকানা লাভের একমাত্র উপায় হয় না। বরং তা একমাত্র উপায় হওয়া সমীচীনও নয়, মানুষ যার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রত্যেককে এমনসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছেন, একটি সমাজের জন্য যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে জ্ঞান ও ব্যক্তিগত অর্জনের সুযোগও দান করেছেন। তবে যে ব্যক্তি অক্ষম, তার ভার অর্পণ করেছেন সমাজের সুস্থ অংশের ওপর। এজন্যই তার সম্পদে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি অংশ রেখেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন ফরজকৃত যাকাত। তদুপরি তাদেরকে অতিরিক্ত সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পক্ষান্তরে পশ্চিমা সমাজে নারী যদি পৈত্রিক সম্পদে সমানাধিকার চায়, তাহলে তা সে তখনই পাবে যখন সে পুরুষের সঙ্গে পরিবারে সমান দায়িত্ব পালন করবে। এর বিনিময়ে তার সম্পদে বিশেষত মানব রচিত আইনে তার তালাকের পর বিচ্ছেদের সময় তার সম্পদ নারী-পুরুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয়। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই সম্পদ সঞ্চয়ে অনেক ক্লেশ সহ্য করেছে অথবা সে মাত্রই এ সম্পদ অর্জন করেছে আর তার স্বামী এ সম্পদ অর্জনে কোনোভাবেই কোনো অবদান রাখেনি।
অতএব, প্রতিটি মুসলিম রমণীর উচিত, আল্লাহ প্রদত্ত তার হক ও অধিকার সম্পর্কে জানা এবং নিজের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নেয়া। আর মুসলিম পুরুষদেরও উচিত, আপন স্ত্রী-কন্যা ও বোনের প্রাপ্য অধিকার ঠিক মতো পরিশোধ করা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি অনেক মুসলিম পরিবারেই ভাইয়েরা সহোদর বোনদের কুরআন বণ্টিত পদ্ধতিতে পিতার সম্পত্তি না দিয়ে গড়পড়তা দিয়ে থাকেন। এটা স্পষ্টই যুলম এবং অবৈধ কাজ। কে জানে, হয়তো আল্লাহর হুকুমের যথাযথ অনুসরণ না করার আযাব স্বরূপই হয়তো ইদানীং আমাদের মা-বোনরা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নারী অধিকারের কথায় কান দিচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তার বণ্টিত হকগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সংকলনঃ সাদ্দাজ সালাদিন
আয়াতে দেখা গেল একমাত্র মেয়ে তার পিতার অর্ধেক সম্পত্তির উত্তরাধিকারীণি হয় আর অবশিষ্ট অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার হয় নারী-পুরুষ উভয়ে অথবা দুই মেয়ে থাকলে তারা পিতামাতার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশের মালিক হয় আর অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বণ্টিত হয় নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে। অতএব মীরাস বা উত্তরাধিকারের অংশ নির্ধারিত হয় দায়িত্বের স্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত আত্মীয়তার স্তর অনুপাতে।
আর সাধারণত এই উত্তরাধিকার সম্পদের মালিকানা লাভের একমাত্র উপায় হয় না। বরং তা একমাত্র উপায় হওয়া সমীচীনও নয়, মানুষ যার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রত্যেককে এমনসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছেন, একটি সমাজের জন্য যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে জ্ঞান ও ব্যক্তিগত অর্জনের সুযোগও দান করেছেন। তবে যে ব্যক্তি অক্ষম, তার ভার অর্পণ করেছেন সমাজের সুস্থ অংশের ওপর। এজন্যই তার সম্পদে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি অংশ রেখেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন ফরজকৃত যাকাত। তদুপরি তাদেরকে অতিরিক্ত সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পক্ষান্তরে পশ্চিমা সমাজে নারী যদি পৈত্রিক সম্পদে সমানাধিকার চায়, তাহলে তা সে তখনই পাবে যখন সে পুরুষের সঙ্গে পরিবারে সমান দায়িত্ব পালন করবে। এর বিনিময়ে তার সম্পদে বিশেষত মানব রচিত আইনে তার তালাকের পর বিচ্ছেদের সময় তার সম্পদ নারী-পুরুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয়। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই সম্পদ সঞ্চয়ে অনেক ক্লেশ সহ্য করেছে অথবা সে মাত্রই এ সম্পদ অর্জন করেছে আর তার স্বামী এ সম্পদ অর্জনে কোনোভাবেই কোনো অবদান রাখেনি।
অতএব, প্রতিটি মুসলিম রমণীর উচিত, আল্লাহ প্রদত্ত তার হক ও অধিকার সম্পর্কে জানা এবং নিজের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নেয়া। আর মুসলিম পুরুষদেরও উচিত, আপন স্ত্রী-কন্যা ও বোনের প্রাপ্য অধিকার ঠিক মতো পরিশোধ করা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি অনেক মুসলিম পরিবারেই ভাইয়েরা সহোদর বোনদের কুরআন বণ্টিত পদ্ধতিতে পিতার সম্পত্তি না দিয়ে গড়পড়তা দিয়ে থাকেন। এটা স্পষ্টই যুলম এবং অবৈধ কাজ। কে জানে, হয়তো আল্লাহর হুকুমের যথাযথ অনুসরণ না করার আযাব স্বরূপই হয়তো ইদানীং আমাদের মা-বোনরা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নারী অধিকারের কথায় কান দিচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তার বণ্টিত হকগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সংকলনঃ সাদ্দাজ সালাদিন
0 Comments