তোমাদের মনে যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো — আল-বাক্বারাহ ২৮৪
কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ ইসলাম ধর্মের মূলনীতিকে এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা যতই তাফসির, হাদিস, ফিকহ পড়ি এবং মানার চেষ্টা করি না কেন, এই মূলনীতিগুলো যদি ঠিকভাবে নিজের ভেতরে বাস্তবায়ন না করি, তাহলে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য কী, তা আর ধরতে পারি না। মুসলিম হিসেবে আমাদের কথা এবং কাজ কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা উপলব্ধি করি না। তখন আমরা ইসলাম ধর্মের আসল
উদ্দেশ্য নিজের জীবনে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হই, নিজের এবং আশেপাশের মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনি। এরকম একটি আয়াত হলো—
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর। তোমাদের মনে যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এগুলোর হিসাব নেবেন। তারপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন। যাকে চান শাস্তি দেবেন। আল্লাহ তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [আল-বাক্বারাহ ২৮৪]
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর
এই হচ্ছে ইসলামের প্রথম মূলনীতি। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ এখানে বিশেষভাবে জোর দিয়ে ( ﻟِﻠّٰﻪ -কে আগে এনে) বলেছেন যে, আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর, অন্য কারো কোনো অংশীদারিত্ব নেই। কেউ যেন কখনো সচেতন বা অবচেতনভাবে মনে না করে যে, তার চোখের সামনে যা কিছু সে দেখতে পাচ্ছে, উপভোগ করছে, তার কোনোটাই তার নিজের সম্পত্তি বা অন্য কারও সম্পত্তি। বরং সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ঘটনার সাথে এই আয়াতের সম্পর্ক কোথায়, তার কিছু উদাহরণ দেই—
হাসান সাহেবের বাবা একজন পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সব রোজা রাখতেন। গরিব আত্মীয়স্বজন তার কাছে এসে কিছু চেয়ে কখনো খালি হাতে ফেরত যেত না। কিন্তু একদিন তার ক্যান্সার হলো। এক প্রচণ্ড কষ্টের ক্যান্সার। তিনি প্রায় একবছর বিছানায় শুয়ে ভীষণ কষ্ট করতে করতে একসময় মারা গেলেন। হাসান সাহেব এই ঘটনায় একেবারে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি কোনোভাবেই নিজেকে
বোঝাতে পারছেন না: কেন তার বাবার সাথে এরকম হলো? কেন তার বাবা সুস্থ অবস্থায় আর দশজনের মত মারা গেলেন না? কেন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ তার সাথে এমন করলেন? তাদের মত এত ভালো একটা পরিবারের সাথে তো আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ এমন করার কথা নয়?
এর উত্তর রয়েছে এই আয়াতে—
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর
আমরা ভুলে যাই যে, আকাশে এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। আমি আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। আমার বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী — সবাই আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। তিনি অনুগ্রহ করে কিছু দিনের জন্য তাঁর সম্পত্তিগুলো আমাকে উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, আমি সেগুলোর মালিক হয়ে গেছি, বা সেগুলোর উপরে আমার কোনো দাবি বা অধিকার রয়েছে। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা তাঁর সম্পত্তি তাঁর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে আমার দাবি করার কিছুই নেই।
আমরা যদি এই আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, আমরা দেখব, আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই আয়াতে। আজকের যুগে Stress বা মানসিক চাপ থেকে অশান্তি, ডিপ্রেশন, Anxiety বা অনিশ্চয়তার ভয় — এগুলোর সবকিছুর কারণ আল্লাহকে ﺗﻌﺎﻟﻰ ভুলে যাওয়া। তাঁর ﺗﻌﺎﻟﻰ উপর ভরসা করতে না পারা। তাঁর ﺗﻌﺎﻟﻰ উপর নিজের ভবিষ্যতকে সঁপে দিতে না পারা। ভালো মন্দ যাই হোক না কেন, আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পারা। আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছে এমনভাবে দাবি করা, কৈফিয়ত চাওয়া, যেভাবে মানুষের কাছে আমরা দাবি করি, অভিযোগ করি। —এগুলো সবই আমাদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মূল কারণ।
তোমাদের মনে যা কিছু আছে তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এগুলোর হিসাব নেবেন
আয়াতের এই অংশটি ভয়ংকর। শুধু মনের কথা প্রকাশ করলেই যে তার হিসাব দিতে হবে তা নয়, যদি কিছু গোপন করে রাখি, তাহলে সেটারও হিসাব দিতে হবে। যেমন, অনেক সময় আমরা ভাবি, “থাক, কী দরকার এটা বলে দেওয়ার? তারচেয়ে চুপ থাকি। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।” — মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখলাম, কিন্তু আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছ থেকে গোপন করতে পারলাম না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদের এই গোপন করা কথাগুলোর হিসাব নেবেন। যদি জেনে শুনে কোনো সাক্ষী গোপন করে থাকি, তখন তার হিসাব দিতে হবে। যদি জেনেশুনে তথ্য গোপন করে থাকি, যা প্রকাশ করলে মানুষের উপকার হতো, বা কোনো সমস্যার মীমাংসা হতো, কিন্তু আমরা তা করিনি পাছে ঝামেলায় জড়িয়ে যাই — এগুলোর ব্যাপারে হিসাব দিতে হবে।
একজন মুসলিম যখন এটা ভালোভাবে উপলব্ধি করবে, তখন সে কোনো অন্যায় সাধ মেটানোর জন্য ফাতয়া খুঁজতে যাবে না যে, কেউ সেটাকে হালাল বলেছে কিনা, বা সেটা কোনো ছোট গুনাহ কিনা, যেটা করলে হয়ত বেশি শাস্তি পেতে হবে না। সে বুঝতে পারবে যে, তার মনের ভেতরে আসলে যে গোপন ইচ্ছাটা কাজ করছে, তা আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ ভালো করেই জানেন। তখন সে আর অন্যায় কাজ করতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নেবে না: কীভাবে আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছে তার ব্যাখ্যা দেবে। সে মনে রাখবে যে, তার
মনের ভেতরে যত চিন্তা চলছে, তার সবই আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ জানেন।
তারপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন। যাকে চান শাস্তি দেবেন
কিয়ামতের দিন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমরা কী গোপন রেখেছিলাম। তারপর তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্ত নেবেন তার জন্য আমরা শাস্তি পাবো, নাকি পাবো না। আমরা গোপনে অনেক অন্যায় করার চিন্তা করি, যেগুলো শেষ পর্যন্ত করি না। অনেক সময় পরিকল্পনা করি কীভাবে ননদকে ফাঁসিয়ে দেবো, শাশুড়িকে মানুষের
সামনে অপমান করবো, স্বামীকে এমন একটা কথা বলব যে, সে ভিতরে জ্বলে পুড়ে যাবে, স্ত্রীকে একটা অন্যায় করে উচিত শিক্ষা দেব, প্রতিবেশি বা কলিগের নামে অমুক কথা বলে তার বদনাম করে দেব ইত্যাদি। যদিও এগুলো শেষ পর্যন্ত করা হয় না, কিন্তু এগুলোর সব হিসাব আমাদেরকে কিয়ামতের দিন দিতে হবে। কোনো কিছুই আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছ থেকে গোপন থাকবে না। তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্ত নেবেন এগুলোর কোনটার জন্য আমাদেরকে শাস্তি দেবেন, কোনটা ছেড়ে দেবেন।
ইসলাম আমাদেরকে শুধুই বাইরে ভালো হতে বলে না। ভিতরটা যদি কুৎসিত হয়, তাহলে সেটারও হিসাব দিতে হবে। একারণে নিজের ভেতরটাকেও সুন্দর করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে। অনেক মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখে শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ মনে হয়, কোনো ঝামেলা করেন না, সবার সাথে অমায়িক ব্যবহার করেন, কিন্তু তাদের ভেতরটা ভয়ংকর। তাদের ভেতরে নানা ধরনের কুৎসিত চিন্তা চলতে থাকে, নানা নোংরা ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকেন, মুখে একটা ভালো কথা বলে তারপর মনে মনে কুৎসিত গালি দেন। —এরা সাবধান! আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ জানেন আমরা মনের ভেতরে কী গোপন রাখি। কিয়ামতের দিন সব তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সব প্রকাশ করে
দেবেন। আমাদের মনের ভেতরে চলা যাবতীয় গোপন চিন্তার রেকর্ড সেদিন আমাদেরকে তাঁর সামনে দাঁড় করিয়ে চালিয়ে দেখানো হবে। তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ তখন সিদ্ধান্ত নেবেন কোনটা তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ ছেড়ে দেবেন আর কোনটার জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন।
আমরা অনেক সময় কিছু হাদিস পড়ে মনে করি যে, অন্যায় চিন্তা করলে সমস্যা নেই, সেটা কাজে বাস্তবায়ন না করলেই হলো। এটা ভুল ধারণা। অন্যায় চিন্তা হিসেবের উর্ধে নয়। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদেরকে লাইসেন্স দিয়ে দেননি যা খুশি চিন্তা করার, শুধু অন্যায় কাজ না করলেই হলো। কারও যদি ভেতরটা কুৎসিত হয়, তাহলে তার ভালো
মানুষীর মুখোশ একদিন না একদিন খসে পড়বেই। কোনো দুর্বলতার সময়ে হঠাৎ করে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। তখন তার ভেতরের পশুটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বেরিয়ে যাবে। একারণে আমাদের ভেতরটাকে পরিষ্কার রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সমস্ত চিন্তা এক অভিনব প্রযুক্তিতে রেকর্ড করা হচ্ছে। তারপর সেই রেকর্ড করা চিন্তাগুলো একটা চলচ্চিত্রের মতো আমাদেরকে দেখানো হবে। তখন আমাদের লজ্জায় লুকানোর জায়গা থাকবে না।
কেন চিন্তা করার হিসাব দিতে হবে?
আমার বাজে চিন্তার জন্য তো কারও ক্ষতি হচ্ছে না? তাহলে চিন্তার জন্য হিসাব দিতে হবে কেন?
আমাদের চিন্তা আমাদের মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে। আমরা কী ধরনের চিন্তা করি তার উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের কিছু অংশ শক্তিশালী হয়, কিছু অংশ দুর্বল হয়, কিছু অংশ আকৃতিতে বড় হয়, আবার কিছু অংশ আকৃতিতে ছোট হয়। শুধু তাই না, চিন্তা অন্যান্য অঙ্গের
উপরও প্রভাব ফেলে। যখনই আমরা চিন্তা করি, তখনি মস্তিষ্ক নানা ধরনের রাসায়নিক সিগনাল নিঃসরণ করে, যা শরীরে ছড়িয়ে যায়। একারণে চিন্তা করে আমরা যে শুধুই আমাদের মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলি তা নয়, একই সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলি। দীর্ঘ সময়ের দুষিত চিন্তা আমাদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার দুর্বল করে দিতে পারে, নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রায় ত্রিশ বছরের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, মানুষের চিন্তা এবং ইচ্ছা আসলে একটি ‘বাস্তব কিছু’, যা মানুষের শরীর এবং আশেপাশের উপর প্রভাব ফেলে। চিন্তা যে শুধুই ‘কিছু একটা জিনিস’ তা নয়, বরং সেটির সত্যিকারের ‘ভৌত প্রভাব’ রয়েছে। আমাদের প্রতিটি চিন্তা এই মহাবিশ্বে কিছু না কিছু ঘটায়।
এপিজেনেটিক্স এর গবেষণা থেকে দেখা গেছে চিন্তা আমাদের জিন-কেও পরিবর্তন করে দিতে পারে! আমরা যা চিন্তা করি, তার প্রভাব ক্রোমোজোমের এক বিশেষ অংশের উপর পড়ে, যা ক্রোমোজোমের ত্রুটি হওয়া প্রতিরোধ করে। আমরা যত নেতিবাচক চিন্তা করবো, ক্রোমোজোমের ত্রুটি তত বাড়বে এবং আমাদের শারীরিক সমস্যা তত বেশি হবে। আর আমরা যত ইতিবাচক, সুন্দর চিন্তা করবো, হাসিমুখে থাকবো, মনের ভেতরে কৃতজ্ঞতা, আনন্দ ধরে রাখবো, আমাদের জিন ততবেশি ভালো থাকবে, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো তত বেশি সুস্থ
থাকবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তত সুস্থ জিন দিয়ে যাবো। নিয়মিত দীর্ঘসময় কৃতজ্ঞতাবোধ ধরে রাখা মানুষের জন্য কত উপরকারী তার উপর বহু গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, চিন্তা শুধু আমাদের মনকেই প্রভাবিত করে না, এটি আমাদের শরীর এবং সমাজকেও প্রভাবিত করে। আমরা সুস্থ থেকে সমাজে ইতিবাচক কল্যাণ কতখানি রাখত পারবো, তা
অনেকখানি নির্ভর করে আমরা সারাদিন কী চিন্তা করি তার উপর। কেউ যদি সারাদিন দূষিত চিন্তা করে, তাহলে সে নিজে যেমন অশান্তিতে থাকবে, তার আশেপাশের মানুষকেও অশান্তিতে রাখবে। তাই চিন্তা কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। এর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে।
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ।
কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ ইসলাম ধর্মের মূলনীতিকে এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা যতই তাফসির, হাদিস, ফিকহ পড়ি এবং মানার চেষ্টা করি না কেন, এই মূলনীতিগুলো যদি ঠিকভাবে নিজের ভেতরে বাস্তবায়ন না করি, তাহলে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য কী, তা আর ধরতে পারি না। মুসলিম হিসেবে আমাদের কথা এবং কাজ কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা উপলব্ধি করি না। তখন আমরা ইসলাম ধর্মের আসল
উদ্দেশ্য নিজের জীবনে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হই, নিজের এবং আশেপাশের মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনি। এরকম একটি আয়াত হলো—
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর। তোমাদের মনে যা কিছু আছে, তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এগুলোর হিসাব নেবেন। তারপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন। যাকে চান শাস্তি দেবেন। আল্লাহ তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [আল-বাক্বারাহ ২৮৪]
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর
এই হচ্ছে ইসলামের প্রথম মূলনীতি। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ এখানে বিশেষভাবে জোর দিয়ে ( ﻟِﻠّٰﻪ -কে আগে এনে) বলেছেন যে, আকাশগুলো এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু শুধুমাত্র তাঁর, অন্য কারো কোনো অংশীদারিত্ব নেই। কেউ যেন কখনো সচেতন বা অবচেতনভাবে মনে না করে যে, তার চোখের সামনে যা কিছু সে দেখতে পাচ্ছে, উপভোগ করছে, তার কোনোটাই তার নিজের সম্পত্তি বা অন্য কারও সম্পত্তি। বরং সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ঘটনার সাথে এই আয়াতের সম্পর্ক কোথায়, তার কিছু উদাহরণ দেই—
হাসান সাহেবের বাবা একজন পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সব রোজা রাখতেন। গরিব আত্মীয়স্বজন তার কাছে এসে কিছু চেয়ে কখনো খালি হাতে ফেরত যেত না। কিন্তু একদিন তার ক্যান্সার হলো। এক প্রচণ্ড কষ্টের ক্যান্সার। তিনি প্রায় একবছর বিছানায় শুয়ে ভীষণ কষ্ট করতে করতে একসময় মারা গেলেন। হাসান সাহেব এই ঘটনায় একেবারে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি কোনোভাবেই নিজেকে
বোঝাতে পারছেন না: কেন তার বাবার সাথে এরকম হলো? কেন তার বাবা সুস্থ অবস্থায় আর দশজনের মত মারা গেলেন না? কেন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ তার সাথে এমন করলেন? তাদের মত এত ভালো একটা পরিবারের সাথে তো আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ এমন করার কথা নয়?
এর উত্তর রয়েছে এই আয়াতে—
সবগুলো আকাশ আর পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সব শুধু আল্লাহর
আমরা ভুলে যাই যে, আকাশে এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। আমি আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। আমার বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী — সবাই আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সম্পত্তি। তিনি অনুগ্রহ করে কিছু দিনের জন্য তাঁর সম্পত্তিগুলো আমাকে উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, আমি সেগুলোর মালিক হয়ে গেছি, বা সেগুলোর উপরে আমার কোনো দাবি বা অধিকার রয়েছে। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা তাঁর সম্পত্তি তাঁর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে আমার দাবি করার কিছুই নেই।
আমরা যদি এই আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, আমরা দেখব, আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই আয়াতে। আজকের যুগে Stress বা মানসিক চাপ থেকে অশান্তি, ডিপ্রেশন, Anxiety বা অনিশ্চয়তার ভয় — এগুলোর সবকিছুর কারণ আল্লাহকে ﺗﻌﺎﻟﻰ ভুলে যাওয়া। তাঁর ﺗﻌﺎﻟﻰ উপর ভরসা করতে না পারা। তাঁর ﺗﻌﺎﻟﻰ উপর নিজের ভবিষ্যতকে সঁপে দিতে না পারা। ভালো মন্দ যাই হোক না কেন, আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পারা। আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছে এমনভাবে দাবি করা, কৈফিয়ত চাওয়া, যেভাবে মানুষের কাছে আমরা দাবি করি, অভিযোগ করি। —এগুলো সবই আমাদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মূল কারণ।
তোমাদের মনে যা কিছু আছে তা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এগুলোর হিসাব নেবেন
আয়াতের এই অংশটি ভয়ংকর। শুধু মনের কথা প্রকাশ করলেই যে তার হিসাব দিতে হবে তা নয়, যদি কিছু গোপন করে রাখি, তাহলে সেটারও হিসাব দিতে হবে। যেমন, অনেক সময় আমরা ভাবি, “থাক, কী দরকার এটা বলে দেওয়ার? তারচেয়ে চুপ থাকি। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।” — মানুষের কাছ থেকে গোপন রাখলাম, কিন্তু আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছ থেকে গোপন করতে পারলাম না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদের এই গোপন করা কথাগুলোর হিসাব নেবেন। যদি জেনে শুনে কোনো সাক্ষী গোপন করে থাকি, তখন তার হিসাব দিতে হবে। যদি জেনেশুনে তথ্য গোপন করে থাকি, যা প্রকাশ করলে মানুষের উপকার হতো, বা কোনো সমস্যার মীমাংসা হতো, কিন্তু আমরা তা করিনি পাছে ঝামেলায় জড়িয়ে যাই — এগুলোর ব্যাপারে হিসাব দিতে হবে।
একজন মুসলিম যখন এটা ভালোভাবে উপলব্ধি করবে, তখন সে কোনো অন্যায় সাধ মেটানোর জন্য ফাতয়া খুঁজতে যাবে না যে, কেউ সেটাকে হালাল বলেছে কিনা, বা সেটা কোনো ছোট গুনাহ কিনা, যেটা করলে হয়ত বেশি শাস্তি পেতে হবে না। সে বুঝতে পারবে যে, তার মনের ভেতরে আসলে যে গোপন ইচ্ছাটা কাজ করছে, তা আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ ভালো করেই জানেন। তখন সে আর অন্যায় কাজ করতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নেবে না: কীভাবে আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছে তার ব্যাখ্যা দেবে। সে মনে রাখবে যে, তার
মনের ভেতরে যত চিন্তা চলছে, তার সবই আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ জানেন।
তারপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন। যাকে চান শাস্তি দেবেন
কিয়ামতের দিন আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন আমরা কী গোপন রেখেছিলাম। তারপর তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্ত নেবেন তার জন্য আমরা শাস্তি পাবো, নাকি পাবো না। আমরা গোপনে অনেক অন্যায় করার চিন্তা করি, যেগুলো শেষ পর্যন্ত করি না। অনেক সময় পরিকল্পনা করি কীভাবে ননদকে ফাঁসিয়ে দেবো, শাশুড়িকে মানুষের
সামনে অপমান করবো, স্বামীকে এমন একটা কথা বলব যে, সে ভিতরে জ্বলে পুড়ে যাবে, স্ত্রীকে একটা অন্যায় করে উচিত শিক্ষা দেব, প্রতিবেশি বা কলিগের নামে অমুক কথা বলে তার বদনাম করে দেব ইত্যাদি। যদিও এগুলো শেষ পর্যন্ত করা হয় না, কিন্তু এগুলোর সব হিসাব আমাদেরকে কিয়ামতের দিন দিতে হবে। কোনো কিছুই আল্লাহর ﺗﻌﺎﻟﻰ কাছ থেকে গোপন থাকবে না। তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সিদ্ধান্ত নেবেন এগুলোর কোনটার জন্য আমাদেরকে শাস্তি দেবেন, কোনটা ছেড়ে দেবেন।
ইসলাম আমাদেরকে শুধুই বাইরে ভালো হতে বলে না। ভিতরটা যদি কুৎসিত হয়, তাহলে সেটারও হিসাব দিতে হবে। একারণে নিজের ভেতরটাকেও সুন্দর করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে। অনেক মুসলিম আছেন যাদেরকে বাইরে থেকে দেখে শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ মনে হয়, কোনো ঝামেলা করেন না, সবার সাথে অমায়িক ব্যবহার করেন, কিন্তু তাদের ভেতরটা ভয়ংকর। তাদের ভেতরে নানা ধরনের কুৎসিত চিন্তা চলতে থাকে, নানা নোংরা ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকেন, মুখে একটা ভালো কথা বলে তারপর মনে মনে কুৎসিত গালি দেন। —এরা সাবধান! আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ জানেন আমরা মনের ভেতরে কী গোপন রাখি। কিয়ামতের দিন সব তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ সব প্রকাশ করে
দেবেন। আমাদের মনের ভেতরে চলা যাবতীয় গোপন চিন্তার রেকর্ড সেদিন আমাদেরকে তাঁর সামনে দাঁড় করিয়ে চালিয়ে দেখানো হবে। তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ তখন সিদ্ধান্ত নেবেন কোনটা তিনি ﺗﻌﺎﻟﻰ ছেড়ে দেবেন আর কোনটার জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন।
আমরা অনেক সময় কিছু হাদিস পড়ে মনে করি যে, অন্যায় চিন্তা করলে সমস্যা নেই, সেটা কাজে বাস্তবায়ন না করলেই হলো। এটা ভুল ধারণা। অন্যায় চিন্তা হিসেবের উর্ধে নয়। আল্লাহ ﺗﻌﺎﻟﻰ আমাদেরকে লাইসেন্স দিয়ে দেননি যা খুশি চিন্তা করার, শুধু অন্যায় কাজ না করলেই হলো। কারও যদি ভেতরটা কুৎসিত হয়, তাহলে তার ভালো
মানুষীর মুখোশ একদিন না একদিন খসে পড়বেই। কোনো দুর্বলতার সময়ে হঠাৎ করে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। তখন তার ভেতরের পশুটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বেরিয়ে যাবে। একারণে আমাদের ভেতরটাকে পরিষ্কার রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সমস্ত চিন্তা এক অভিনব প্রযুক্তিতে রেকর্ড করা হচ্ছে। তারপর সেই রেকর্ড করা চিন্তাগুলো একটা চলচ্চিত্রের মতো আমাদেরকে দেখানো হবে। তখন আমাদের লজ্জায় লুকানোর জায়গা থাকবে না।
কেন চিন্তা করার হিসাব দিতে হবে?
আমার বাজে চিন্তার জন্য তো কারও ক্ষতি হচ্ছে না? তাহলে চিন্তার জন্য হিসাব দিতে হবে কেন?
আমাদের চিন্তা আমাদের মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে। আমরা কী ধরনের চিন্তা করি তার উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের কিছু অংশ শক্তিশালী হয়, কিছু অংশ দুর্বল হয়, কিছু অংশ আকৃতিতে বড় হয়, আবার কিছু অংশ আকৃতিতে ছোট হয়। শুধু তাই না, চিন্তা অন্যান্য অঙ্গের
উপরও প্রভাব ফেলে। যখনই আমরা চিন্তা করি, তখনি মস্তিষ্ক নানা ধরনের রাসায়নিক সিগনাল নিঃসরণ করে, যা শরীরে ছড়িয়ে যায়। একারণে চিন্তা করে আমরা যে শুধুই আমাদের মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলি তা নয়, একই সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলি। দীর্ঘ সময়ের দুষিত চিন্তা আমাদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার দুর্বল করে দিতে পারে, নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রায় ত্রিশ বছরের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, মানুষের চিন্তা এবং ইচ্ছা আসলে একটি ‘বাস্তব কিছু’, যা মানুষের শরীর এবং আশেপাশের উপর প্রভাব ফেলে। চিন্তা যে শুধুই ‘কিছু একটা জিনিস’ তা নয়, বরং সেটির সত্যিকারের ‘ভৌত প্রভাব’ রয়েছে। আমাদের প্রতিটি চিন্তা এই মহাবিশ্বে কিছু না কিছু ঘটায়।
এপিজেনেটিক্স এর গবেষণা থেকে দেখা গেছে চিন্তা আমাদের জিন-কেও পরিবর্তন করে দিতে পারে! আমরা যা চিন্তা করি, তার প্রভাব ক্রোমোজোমের এক বিশেষ অংশের উপর পড়ে, যা ক্রোমোজোমের ত্রুটি হওয়া প্রতিরোধ করে। আমরা যত নেতিবাচক চিন্তা করবো, ক্রোমোজোমের ত্রুটি তত বাড়বে এবং আমাদের শারীরিক সমস্যা তত বেশি হবে। আর আমরা যত ইতিবাচক, সুন্দর চিন্তা করবো, হাসিমুখে থাকবো, মনের ভেতরে কৃতজ্ঞতা, আনন্দ ধরে রাখবো, আমাদের জিন ততবেশি ভালো থাকবে, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো তত বেশি সুস্থ
থাকবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তত সুস্থ জিন দিয়ে যাবো। নিয়মিত দীর্ঘসময় কৃতজ্ঞতাবোধ ধরে রাখা মানুষের জন্য কত উপরকারী তার উপর বহু গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, চিন্তা শুধু আমাদের মনকেই প্রভাবিত করে না, এটি আমাদের শরীর এবং সমাজকেও প্রভাবিত করে। আমরা সুস্থ থেকে সমাজে ইতিবাচক কল্যাণ কতখানি রাখত পারবো, তা
অনেকখানি নির্ভর করে আমরা সারাদিন কী চিন্তা করি তার উপর। কেউ যদি সারাদিন দূষিত চিন্তা করে, তাহলে সে নিজে যেমন অশান্তিতে থাকবে, তার আশেপাশের মানুষকেও অশান্তিতে রাখবে। তাই চিন্তা কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। এর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে।
[১] বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর। [২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ। [৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি। [৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী। [৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran [৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran [৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি। [৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী। [৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ। [১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি [১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি [১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ। [১৩] তাফসির ইবন আব্বাস। [১৪] তাফসির আল কুরতুবি। [১৫] তাফসির আল জালালাইন। [১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ। [১৭] তাফসীর আহসানুল বায়ান — ইসলামিক সেন্টার, আল-মাজমাআহ, সউদি আরব [১৮] কু’রআনুল কারীম – বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর — বাদশাহ ফাহাদ কু’রআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। [১৯] তাফসির আল-কাবির। [২০] তাফসির আল-কাশ্শাফ।
0 Comments