Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাপ দাদাদের দোহাই


==== বিষয়ঃ সঠিক দীন মানার ব্যাপারে বাপ-দাদাদের দোহাই ====
মানুষ তার জীবনকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। ১) দুনিয়ার জীবন, ২) ধর্মীয় জীবন। দুনিয়ার জীবনে মানুষ তার বাপ-দাদাদের দোহাই দেয় না। কিন্তু ধর্ম বা সঠিক দীন মানার ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ বাপ-দাদাদের দোহাই দিয়ে থাকে।


যদি বলা হয়- তোমার বাপ-দাদা তো কৃষক ছিল তুমিও কৃষক থাকো, তোমার বাপ-দাদা তো গরীব ছিল তুমিও গরীব থাকো কিংবা তোমার বাপ-দাদাতো ছনের বা টিনের ঘরে ছিল তুমিও ছনের বা টিনের ঘরে থাকো। তখন তারা উত্তর দিবে, আমরা কেন এসব করব, আমরা এখন বড় আলেম হব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বা বড় উকিল হব। আমরা এখন কোটিপতি বড়লোক হবো। কেন গরীব থাকব? আমাদের বাড়ীতে এখন বিল্ডিং হবে ইত্যাদি ইত্যাদি…….। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনের ব্যাপারে মানুষ বাপ-দাদাদের দোহাই দেয় না, তাদের বাপ-দাদাদের অনুসরণ করে না।

কিন্তু যদি বলা হয়- সঠিক দীন মানুন। আল্লাহর ওয়াহীর বিধান মানুন। শির্ক, বিদ‘আত ছাড়ুন। একমাত্র নবীর তরীকায় চলুন। ধর্মের নামে বিভিন্ন তরিকা, মাযহাব, ইজমা, কিয়াস ইত্যাদি ছাড়ুন। তখন তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদারা কি তাহলে ভুল করেছে? তারা কি কুরআন হাদীস কম বুঝত? এতদিন তারা সবই কি ভুল করেছে? ইত্যাদি ইত্যাদি……। আসুন দেখি তারা যে বাপ-দাদাদের দোহাই দেয় সেই সম্বন্ধে কুরআন কি বলে?

اب (আব) শব্দটি একবচন, যার অর্থ বাবা, পিতা, জনক, বাপ। এর বহুবচনে পবিত্র কুরআনে দুটি শব্দ এসেছে آبَاءَ ও آبَاؤُ যার অর্থ হল বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষ, পিতৃপুরুষ।

>>> আল্লাহ এবং রাসূলকে অনুসরণ করতে বাপ-দাদাদের দোহাই <<<
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لا يَعْلَمُونَ شَيْئًا وَلا يَهْتَدُونَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে আর রসূলের দিকে আস’, তারা বলে, ‘আমাদের জন্য ওটাই যথেষ্ট যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি’; যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানত না আর হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও কি? আল-মায়িদাহ, ৫/১০৪

>>> আল্লাহর ওয়াহী মানতে বাপ-দাদাদের দোহাই <<<
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلا يَهْتَدُونَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার অনুসরণ কর, তারা বলে, ‘বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি’; যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানত না আর হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও কি? আল-বাকারাহ, ২/১৭০

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوهُمْ إِلَى عَذَابِ السَّعِيرِ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তারা বলে, ‘বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি’; যদিও শয়তান তাদেরকে কঠোর শাস্তির দিকে ডাকে তবুও কি? লুকমান, ৩১/২১

>>> বাপ-দাদাদের মতাদর্শ অনুসরণ করতে চায় <<<
وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ
আর এভাবেই তোমার পূর্বে যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী পাঠিয়েছি, তখন তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এই মতাদর্শের উপর পেয়েছি আর অবশ্যই আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করছি’। আয্-যুখরুফ, ৪৩/২৩

>>> বাপ-দাদারা পথভ্রষ্ট হলেও তাদের অনুসরণ করতে চায় <<<
ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لإلَى الْجَحِيمِ إِنَّهُمْ أَلْفَوْا آبَاءَهُمْ ضَالِّينَ فَهُمْ عَلَى آثَارِهِمْ يُهْرَعُونَ وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الأوَّلِينَ
অতঃপর অবশ্যই তাদের প্রত্যাবর্তন হবে প্রজ্জ্বলিত আগুনের দিকে। নিশ্চয় তারা তাদের পূর্বপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল। তারপরও তারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে ধাবিত হয়েছিল। আর নিশ্চয় তাদের পূর্বেও পূর্ববর্তীদের অধিকাংশ পথভ্রষ্ট হয়েছিল। সাফফাত, ৩৭/৬৮-৭১

>>> সঠিকভাবে কুরআন বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাপ-দাদাদের দোহাই দেয় <<<
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوا مَا هَذَا إِلا رَجُلٌ يُرِيدُ أَنْ يَصُدَّكُمْ عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُكُمْ وَقَالُوا مَا هَذَا إِلا إِفْكٌ مُفْتَرًى وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ إِنْ هَذَا إِلا سِحْرٌ مُبِينٌ
আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃতি করা হয়, তখন তারা বলে, ‘তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যার ইবাদত করতো, এই ব্যক্তিতো তা থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে চায়’; তারা আরও বলে, ‘এটা (কুরআন) বানোয়াট মিথ্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়’; আর যারা অবিশ্বাস করে তাদের নিকট যখন সত্য আসে তখন তারা বলে, ‘এটাতো কেবল এক সুস্পষ্ট যাদু’। সাবা, ৩৪/৪৩

>>> ইবাদতে বাপ-দাদাদের অনুসরণ করে <<<
فَلا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِمَّا يَعْبُدُ هَؤُلاءِ مَا يَعْبُدُونَ إِلا كَمَا يَعْبُدُ آبَاؤُهُمْ مِنْ قَبْلُ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمْ نَصِيبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوصٍ
সুতরাং এরা যাদের উপাসনা করে, তাদের ব্যাপারে তুমি সংশয়ে থেকো না; তারাও ঠিক সেই রূপেই ইবাদত করছে যে রূপে তাদের পূর্ব-পুরুষরা ইবাদত করত; আর অবশ্যই আমি তাদেরকে তাদের (শাস্তির) অংশ পুরোপুরি দিব, একটুও কম না করে। হুদ, ১১/১০৯

>>> অশ্লীল ও মন্দ কাজ করতে বাপ-দাদাদের দোহাই <<<
وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللَّهَ لا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ
আর যখন তারা কোন অশ্লীল, মন্দ কাজ করে তখন তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এসবের উপর পেয়েছি আর আল্লাহ আমাদেরকে এরূপ করতে আদেশ দিয়েছেন; তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলতার আদেশ দেন না; তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না। আল-আ‘রাফ, ৭/২৮

>>> বাপ-দাদাদের দোহাই দিয়ে শির্ক করে থাকে <<<
وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُونِهِ مِنْ شَيْءٍ نَحْنُ وَلا آبَاؤُنَا وَلا حَرَّمْنَا مِنْ دُونِهِ مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلا الْبَلاغُ الْمُبِينُ
আর যারা শির্ক করে তারা বলে, ‘যদি আল্লাহ চাইতেন তাঁকে ছাড়া আমরা কোন কিছুর ইবাদত করতাম না আর আমাদের পূর্বপুরুষরাও করত না এবং তাঁর অনুমতি ব্যতীত আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না’, তাদের পূর্ববর্তীরাও এরূপই করত; তবে সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া ছাড়া রাসূলের উপর কি কোন দায়িত্ব আছে? আন্-নাহ্ল, ১৬/৩৫

سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلا آبَاؤُنَا وَلا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلا الظَّنَّ وَإِنْ أَنْتُمْ إِلا تَخْرُصُونَ
যারা শির্ক করে তারা অচিরেই বলবে, ‘যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা শির্ক করতাম না আর আমরা কোন কিছুকে হারাম করতাম না’; এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিল যে পর্যন্ত না তারা আমার (আল্লাহর) আযাব আস্বাদন করেছিল; তুমি জিজ্ঞেস কর, তোমাদের কাছে কি কোন জ্ঞান আছে? থাকলে তা তোমরা আমাদের সামনে পেশ কর; তোমরা কেবল ধারণা-অনুমানের অনুসরণ কর আর তোমরা কেবল মিথ্যাই রচনা কর। আল-আন‘আম, ৬/১৪৮

>>> বাপ-দাদারা আল্লাহর ওয়াহীর অনুসারী হলে এবং তাতে বিশ্বাসী হলে তাদের অনুসরণ করতে হবে <<<
أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُمْ مَا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الأوَّلِينَ
তবে কি তারা এ বাণী (কুরআন) সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবে না? নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পূর্ব-পুরুষদের কাছে আসেনি? আল-মু’মিনুন, ২৩/৬৮

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ
যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তানরা ঈমানসহ তাদেরকে অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের আমলের কোন অংশই আমি কমাব না, প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী। আত-তূর, ৫২/২১

মন্তব্যঃ আল্লাহ বলেছেন- كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী। আত-তূর, ৫২/২১, আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন-
وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَإِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَى حِمْلِهَا لا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى
আর কোন বহনকারী অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না আর কেউ যদি তার (পাপের) গুরুভার বয়ে দেয়ার জন্য অন্যকে আহবান করে তবে তার কিছুই বয়ে দিবে না, যদিও সে নিকটাত্মীয় হয়। ফাত্বির, ৩৫/১৮

এ আয়াতের আলোকে বলতে চাই আসুন, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে দায়ী না করে কিংবা তাদের দোহাই না দিয়ে, আমরা সঠিক দীন অনুসরণ করি, আল্লাহর ওয়াহীর বিধান মেনে চলি, রসূলের তরীকায় চলি। আর যদি বাপ-দাদারা সঠিক দীন মেনে থাকে, আল্লাহর ওয়াহীর বিধান মেনে থাকে, রসূলের তরীকায় চলে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের অনুসরণ করব। কিন্তু তাদের ভুলগুলো আমরা কেন অনুসরণ করব?

তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান। সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক; প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স। নবম অধ্যায়ঃ ভ্রান্ত পথ ও মত

Post a Comment

0 Comments