
(১) যারা টিভি দেখেন, গান শুনেন, খেলা দেখেন, তারা একটু ভেবে দেখবেন কি?
(২) টিভি দেখা ও গান শোনা
(৩) টিভি দেখা নিয়ে দুইটি ফতওয়ার অনুবাদ।
____________________________________
যারা টিভি দেখেন, গান শুনেন, খেলা দেখেন, তারা একটু ভেবে দেখবেন কি?
ফযীলাতুশ-শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “সামান্য একটু ঠান্ডা পানি কানের ভেতরে প্রবেশ করলে আমাদের কতইনা ব্যথা-বেদনা হয়! তাহলে চিন্তা করে দেখো, গান শোনার কারণে যদি কারো কানের ভেতরে ফুটন্ত গরম সীসা ঢেলে দেওয়া হয়, তখন কতইনা কষ্ট হবে!”
.
সুবহা’নাল্লাহ!
লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ!!
অনেকে টিভি দেখা, গান শোনা, খেলা দেখাতে এতো বেশি মজে গেছে যে, এইগুলো হারাম কাজ, আল্লাহ এই কাজগুলো ঘৃণা করেন জানে, কিন্তু নেশার কারণে চাইলেও সেইগুলো ছাড়তে পারেনা। এমন নারী ও পুরুষদের চিন্তা-ভাবনা করার জন্যে ক্বুরআনের একটি আয়াত ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস পেশ করছি।
.
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তারা (জাহান্নামীরা যখন জাহান্নামে যাবে তখন) বলবে, আমরা যদি (নবী রাসূলদের কথা) শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আজকে আমরা জাহান্নামী হইতাম না।” সুরা মুলকঃ ১০।
.
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “লোভ-লালসা দ্বারা জাহান্নামকে ঢেকে রাখা হয়েছে, আর দুঃখ-কষ্ট দ্বারা জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে।” সহীহ বুখারীঃ ৬৪৮৭।
.
কার মৃত্যু কখন চলে আসে কিছুই বলা যায়না। আমরা মনে করি, মৃত্যু অনেক দূরে, আর এইজন্যে মরতে হবেই এই কথা জানার পরে মৃত্যুকে ভুলে আমরা দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকি। হারাম কাজ করতে করতে আল্লাহর আমাদের উপর রাগান্বিত, এমন অবস্থাইয় মৃত্যু হওয়ার পূর্বেই আজকে, এই মুহূর্তেই আন্তরিক তোওবা করে বলুন, “ইং শা আল্লাহ আমি আর কক্ষনো টিভি দেখবোনা, আমি আর কোনদিন গান শুনবোনা, আমি আর হারাম খেলা দেখবোনা।"
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন, আমিন।
বিঃদ্রঃ হারাম কাজ থেকে তোওবাহ করার পাশাপাশি মোবাইল, এমপিত্রি, কম্পিউটার সব জায়গা থেকে গান ও হারাম জিনিসগুলো মুছে ফেলতে হবে, হারাম জিনিস রয়েছে এমন সিডি, ক্যাসেট, বাদ্যযন্ত্র সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে হবে। বাসা থেকে টিভি বের করে দিতে হবে। কারণ টিভি থাকলেই বাসায় নিজে ও স্ত্রী ছেলে-মেয়েরা হারাম জিনিস দেখবে। খারাপ বন্ধু, যারা হারাম কাজের দিকে নিয়ে যায়, এদেরকে ঘৃণার সাথে বর্জন করতে হবে। এর বিপরীতে জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও নেককার লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করতে হবে।
____________________________________
টিভি দেখা ও গান শোনা
বর্তমান যুগে এমন লক্ষ-কোটি নারী ও পুরুষ রয়েছে, যারা ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি-রেডিওর পেছনে নষ্ট করে, দেশি-বিদেশি কাফের-মুর্তাদ, বেদ্বীন নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড়দের প্রতি আকৃষ্ট। হাজার-হাজার হারাম ও অশ্লীল গানের প্রতিটা লাইন তাদের মুখস্থ, কিন্তু তারা অনেক নবী-রাসুল, সম্মানিত আলেম ওলামাদের নাম জানেনা। মুসলিম ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একজন আলেম, ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর আসল নাম কি জানেনা।
‘উসুল শাস্ত্রের জনক’ কে, তার নাম জানেনা। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর একটা ফতোয়া হচ্ছে,
“যারা গান শুনে তারা নির্বোধ লোক। (যারা গান শুনে তারা এতোটাই নির্বোধ যে), আদালতে তাদের কোন স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।” ইগাছাতুল লাহফানঃ ১/১৭৯; তাফসীরে কুরতুবীঃ ১৪/৫৫।
.
একটু চিন্তা করে দেখুন!
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর মতে, যারা শুধুমাত্র গান শুনে, তারা এতো বড় নির্বোধ যে, আদালতে তাদের কোন স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়না। তাহলে যারা টিভি দেখে, যেখানে মূর্তি পূজা ও হাজারো ধরণের কুফুরী ও শিরকী কাজ দেখানো হয়, গান-বাজনা দেখানো হয়, গানের সাথে নায়ক-নায়িকাদের অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা,বেহায়া নারীদের নগ্ন শরীর দেখানো হয়, অশ্লীল নৃত্য দেখানো হয়, নারী-পুরুষের মাঝে অন্তরংগ অশ্লীল দৃশ্য দেখানো হয়, এইগুলো যারা দেখে, তারা কত বড় নির্বোধ?
.
মৃত্যুর ফেরেশতা আসার পূর্বে এই সমস্ত ঘৃণ্য কাজ থেকে আজকেই তোওবা করুন। গান-বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফেকীর জন্ম দেয়, জিনা-ব্যভিচারেরর দিকে আকৃষ্ট করে। যার অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, ক্বুরআনের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়, সে কখনো টিভি, নাটক-সিনেমা, গান-বাজনা, গল্পের বই ভালোবাসতে পারেনা। ভুলে গেলে চলবেনা, কবরে রয়েছে জান্নাতের বিছানা আর নয়তো আজাবের ফেরেশতা।
বিঃদ্রঃ ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর আসল নাম হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস। ইমাম শাফেয়ীকে উসূল শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি মদীনার বিখ্যাত আলেম, ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর ছাত্র ছিলেন। ইমাম মালেক এর পুরো নাম হচ্ছে মালেক বিন আনাস। ইমাম মালেক সর্বপ্রথম মদীনাতে নিয়মিত হাদীসের কিতাব “মুয়াত্তা” সংকলন করেছিলেন।
____________________________________
টিভি দেখা নিয়ে দুইটি ফতওয়ার অনুবাদঃ
প্রশ্নঃ আমার কাছে একটি ‘টিভি’ আছে, এটা বিক্রি করা কি আমার জন্যে জায়েজ হবে?
শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“আপনার জন্যে উত্তম হত আপনি যদি এই টিভি না কিনতেন বা আপনার কাছে এটা না থাকতো। যাই হোক,
‘এই টিভিটা বিক্রি করা আপনার জন্যে জায়েজ’, আমি আপনাকে এই ফতোয়া কখনোই দিতে পারবোনা। কারণ এটা দিয়ে আপনি মুসলিমদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন।”
.
প্রশ্নঃ টেলিভিশন দেখার হুকুম কি?
উত্তরঃ টেলিভিশনের ক্ষেত্রে হুকুম হচ্ছে গান-বাজনা, ছবি, খারাপ দৃশ্য এবং অন্যান্য খারাপ অনুষ্ঠান দেখা হারাম। অপরদিকে, ধর্মীয় লেকচার, বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক সংবাদ ইত্যাদি যেগুলো শরীয়াহ কর্তৃক নিষিদ্ধ নয়, সেইগুলো দেখা জায়েয বা বৈধ। যদি টিভি দেখার কারণে উপকারীতার চাইতে খারাপ বা মন্দ জিনিসটাই বেশি হয়, সেইক্ষেত্রে টিভি দেখা ‘হারাম’ বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সফলতা দান করুন। আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীদের উপর।
ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইয়ি’মাহঃ ফাতাওয়া নং-৪৫১৩।
ফাতাওয়া কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দঃ
(১) সদস্যঃ শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ক্বাউ’দ রাহিমাহুল্লাহ।
(২) সদস্যঃ শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু গুদায়্যান রাহিমাহুল্লাহ।
(৩) ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আ’ফিফী রাহিমাহুল্লাহ।
(৪) চেয়ারম্যানঃ আল-ইমাম, শায়খ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ।
0 Comments