==== বিষয়ঃ ইজমা বা সংখ্যাধিক্য লোকের মতামত ====
(ইজমা) إِجْمَاع এর শাব্দিক অর্থ ঐকমত্য, মতৈক্য, সব-সম্মত সিদ্ধান্ত। সুতরাং ইজমা হল কতিপয় লোকের কথা, অধিকাংশ বা সংখ্যাধিক্য মানুষের মতামত, অনুমোদন বা ধারণা। আসুন দেখি, সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যাধিক্য সম্পর্কে কুরআন কী বলে?
>>> অধিকাংশ লোক কুরআন হতে বিমুখ <<<
تَنْزِيلٌ مِنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ بَشِيرًا وَنَذِيرًا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لا يَسْمَعُونَ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালুর পক্ষ হতে নাযিলকৃত এমন এক কিতাব; আরবী ভাষায় কুরআন যার আয়াতসমূহ জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিমুখ হয়েছে তাই তারা শুনে না। ফুসসিলাত, ৪১/২-৪
لَقَدْ جِئْنَاكُمْ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ
নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্য হতে বিমুখ ছিলে। আয্-যুখরুফ, ৪৩/৭৮
بَلْ جَاءَهُمْ بِالْحَقِّ وَأَكْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ
বরং সে (রাসূল) তাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছিল তবে তাদের অধিকাংশ সত্য হতে বিমুখ ছিল। আল-মু’মিনুন, ২৩/৭০
>>> অধিকাংশই ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে <<<
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الأرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلا يَخْرُصُونَ
আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করেন তবে তারা আল্লাহর পথ থেকে আপনাকে পথভ্রষ্ট করে দেবে; তারা শুধু নিছক ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে, আর তারা ধারণা ও অনুমান ছাড়া কিছুই করছে না। আল-আন‘আম, ৬/১১৬
وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلا ظَنًّا إِنَّ الظَّنَّ لا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ
তাদের অধিকাংশই কেবল ধারণা অনুমান ছাড়া কিছুই অনুসরণ করে না, নিশ্চয় সত্যের মোকাবালায় ধারণা অনুমান কোন কাজে আসে না, নিশ্চয় আল্লাহ সবই জানেন তারা যা কিছু করছে। ইউনুস, ১০/৩৬
>>> অধিকাংশ মানুষ জানে না <<<
وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَعْلَمُونَ
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। ৭/১৮৭, ১২/২১, ১২/৪০, ১২/৬৮, ১৬/৩৮, ৩০/৬, ৩০/৩০, ৩৪/২৮, ৩৪/৩৬, ৪০/৫৭, ৪৫/২৬
وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لا يَعْلَمُونَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না। ৬/৩৭, ৭/১৩১, ৮/৩৪, ১০/৫৫, ২৮/১৩, ২৮/৫৭, ৩৯/৪৯, ৪৪/৩৯, ৫২/৪৭
بَلْ أَكْثَرُهُمْ لا يَعْلَمُونَ
বরং তাদের অধিকাংশ জানে না। ১৬/৭৫, ১৬/১০১, ২১/২৪, ২৭/৬১, ৩১/২৫, ৩৯/২৯
بَلْ أَكْثَرُهُمْ لا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ فَهُمْ مُعْرِضُونَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশ প্রকৃত সত্য জানে না, তাই তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২১/২৪
وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ। ৬/১১১
أَكْثَرُهُمْ لا يَعْقِلُونَ
তাদের অধিকাংশই বুঝে না (নির্বোধ)। ৫/১০৩, ২৯/৬৩, ৪৯/৪
بَلْ كَانُوا لا يَفْقَهُونَ إِلا قَلِيلا
বরং তারা খুব কমই বুঝে। ৪৮/১৫
>>> অধিকাংশই ঈমান আনে না কুফরী করে <<<
إِلا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَا هُمْ
কেবলমাত্র যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে আর তাদের সংখ্যা অল্পই। সোয়াদ, ৩৮/২৪
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلا وَهُمْ مُشْرِكُونَ
আর তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না কিন্তু তাদের অধিকাংশ মুশরিক। ইউসুফ, ১২/১০৬
كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُشْرِكِينَ
তাদের অধিকাংশ ছিল মুশরেক। ৩০/৪২
مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুমিন আর তাদের অধিকাংশ নাফরমান। ৩/১১০
إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। ২৬/৮, ২৬/৬৭, ২৬/১০৩, ২৬/১২১, ২৬/১৩৯, ২৬/১৫৮, ২৬/১৭৪, ২৬/১৯০
وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يُؤْمِنُونَ
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না। ১১/১৭, ১৩/১, ৪০/৫৯
بَلْ أَكْثَرُهُمْ لا يُؤْمِنُونَ
বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না। ২/১০০
وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
আর যদিও তুমি প্রবল আকাঙ্ক্ষা কর অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবার নয়। ইউসুফ, ১২/১০৩
لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لا يُؤْمِنُونَ
নিশ্চয় তাদের অধিকাংশের উপর আল্লাহর বাণী অবধারিত হয়েছে তাই তারা ঈমান আনবে না। ইয়া-সীন, ৩৬/৭
قَلِيلا مَا تُؤْمِنُونَ
তোমরা খুব কমই ঈমান আন। ৬৯/৪১
بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلا مَا يُؤْمِنُونَ
বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন তাই তারা খুব কমই ঈমান আনবে। ২/৮৮
وَلَكِنْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلا يُؤْمِنُونَ إِلا قَلِيلا
কিন্তু তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন সুতরাং স্বল্পসংখ্যক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না। ৪/৪৬
بَلْ طَبَعَ اللَّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلا يُؤْمِنُونَ إِلا قَلِيلا
বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন সুতরাং স্বল্পসংখ্যক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না। ৪/১৫৫
يَعْرِفُونَ نِعْمَةَ اللَّهِ ثُمَّ يُنْكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ
তারা আল্লাহর নি‘আমতসমূহকে চিনে তারপরও তারা তা অস্বীকার করে আর তাদের অধিকাংশই কাফির। আন-নাহাল, ১৬/৮৩
فَأَبَى أَكْثَرُ النَّاسِ إِلا كُفُورًا
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী না করে থাকেনি। ১৭/৮৯, ২৫/৫০
>>> অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না <<<
إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَشْكُرُونَ
নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহশীল কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। আল-বাকারাহ, ২/২৪৩, আল-মু‘মিন, ৪০/৬১
ذَلِكَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَشْكُرُونَ
এটি আমাদের ও সকল মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। ইউসুফ, ১২/৩৮
وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لا يَشْكُرُونَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। ১০/৬০, ২৭/৭৩
وَلا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
আর আপনি তাদের অধিকাংশকে শোকরকারী পাবেন না। ৭/১৭
قَلِيلا مَا تَشْكُرُونَ
তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা আদায় কর। ৭/১০, ২৩/৭৮, ৩২/৯, ৬৭/২৩
وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
আর আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা আদায় করে। ৩৪/১৩
>>> খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে <<<
قَلِيلا مَا تَذَكَّرُونَ
তোমরা খুব সামান্যই স্মরণ করে থাক। ৭/৩, ২৭/৬২, ৬৯/৪২
وَلا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلا قَلِيلا
আর তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। ৪/১৪২
قَلِيلا مَا تَتَذَكَّرُونَ
তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। ৪০/৫৮
>>> অধিকাংশই নাফরমান <<<
وَأَنَّ أَكْثَرَكُمْ فَاسِقُونَ
আর নিশ্চয় তোমাদের অধিকাংশই নাফরমান। ৫/৫৯
وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ
আর তাদের অধিকাংশই নাফরমান। ৯/৮
وَمَا وَجَدْنَا لأكْثَرِهِمْ مِنْ عَهْدٍ وَإِنْ وَجَدْنَا أَكْثَرَهُمْ لَفَاسِقِينَ
তাদের অধিকাংশকেই আমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি, বরং অধিকাংশই নাফরমান। আল-আ‘রাফ, ৭/১০২
>>> অধিকাংশই পথভ্রষ্ট <<<
وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الأوَّلِينَ
আর নিশ্চয় তাদের পূর্বে পূর্ববর্তী লোকদের অধিকাংশই পথভ্রষ্ট হয়েছিল। সাফফাত, ৩৭/৭১
ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلا قَلِيلا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ
অতঃপর তোমাদের মধ্য হতে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তোমরা সকলে উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিলে। ২/৮৩
يُلْقُونَ السَّمْعَ وَأَكْثَرُهُمْ كَاذِبُونَ
ওরা কান পেতে থাকে আর তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। শু’আরা ২৬/২২৩
وَلا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلا قَلِيلا مِنْهُمْ
আর তুমি তাদের খিয়ানত সম্পর্কে অবগত হতে থাকবে তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া। ৫/১৩
>>> অধিকাংশ মানুষ ইবলীসের অনুসারী <<<
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
আর অবশ্যই তাদের সম্বন্ধে ইবলীস তার ধারণাকে সত্য প্রমাণ করলো, ফলে তাদের মধ্যে একটি মুমিন দল ব্যতীত তারা সকলেই তার পথ অনুসরণ করল। সাবা, ৩৪/২০
মন্তব্যঃ আল্লাহর বাণীর পরে আমার কোন কথা থাকতে পারে না। তারপরও আমি আল্লাহর বাণীর সাথে একমত হয়ে বলব, যারা আল্লাহ ও রসূলের বাণী বাদ দিয়ে ইজমা করে তারা পথভ্রষ্ট, ইবলীসের অনুসারী, জাহেল, অজ্ঞ, নাফরমান, অকৃতজ্ঞ, তারা আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে, হক (সত্য) গ্রহণ না করার কারণে তারা কুরআন হতে বিমুখ হয়েছে। তাই তারা ইবলীসের মত অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান। সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক; প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স। নবম অধ্যায়ঃ ভ্রান্ত পথ ও মত; পৃষ্ঠাঃ ৩৩৭ হতে ৩৪২ পর্যন্ত।
0 Comments