==== বিষয়ঃ অল্প সংখ্যক লোক নাজাতপ্রাপ্ত ====
إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ إِذَا رُجَّتِ الأرْضُ رَجًّا وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا فَكَانَتْ هَبَاءً مُنْبَثًّا
যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। তখন কিয়ামত সংঘটনের কোনই অস্বীকারকারী থাকবে না। তা কাউকে ভূলুণ্ঠিত করবে এবং কাউকে সমুন্নত করবে। যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে। আর পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। তখন তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/১-৬
وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلاثَةً فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ أُولَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ ثُلَّةٌ مِنَ الأوَّلِينَ وَقَلِيلٌ مِنَ الآخِرِينَ
আর তোমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। ডান পার্শ্বের দল, ডান পার্শ্বের দলটি কত সৌভাগ্যবান! আর বাম পার্শ্বের দল, বাম পার্শ্বের দলটি কত হতভাগ্য! আর অগ্রবর্তীগণই অগ্রবর্তী। তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে। পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে বহু সংখ্যক, আর পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে অল্প সংখ্যক। আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/৭-১৪
আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلاَثِ طَرَائِقَ، رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ، وَثَلاَثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ، وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ، وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ، تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا، وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا، وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا، وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا
হাশরের ময়দানে মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে, একদল হবে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী এবং তাঁর ভয়ে ভীত, বান্দাদের দ্বিতীয় দল হবে দু'জন, তিনজন, চারজন অথবা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী আর অবশিষ্ট যারা থাকবে অগ্নি তাদেরকে একত্রিত করে নেবে, যেখানে তারা থামবে আগুনও তাদের সাথে সেখানে থামবে, তারা যেখানে রাত্রি যাপন করবে আগুনও সেখানে তাদের সাথে রাত্রি যাপন করবে, তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে তাদের সাথে সকাল করবে, যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে আগুনেরও সেখানে সন্ধ্যা হবে। সহীহুল বুখারী: ৬৫২২
لأصْحَابِ الْيَمِينِ ثُلَّةٌ مِنَ الأوَّلِينَ وَثُلَّةٌ مِنَ الآخِرِينَ وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ
ডান পার্শ্বের লোকেদের জন্য। তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/৩৮-৪১
فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّةُ نَعِيمٍ وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ فَسَلامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَالضَّالِّينَ فَنُزُلٌ مِنْ حَمِيمٍ وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ
অতঃপর যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, তাহলে তার জন্য থাকবে আরাম-শান্তি, উত্তম রিযক আর নিয়ামতে-ভরা জান্নাত। আর সে যদি ডান দিকের একজন হয়, তাহলে তাকে বলা হবে, ‘তোমার জন্য আছে শান্তি ও নিরাপত্তা, যেহেতু তুমি ডান দিকের লোকেদের একজন’। আর যদি সে মিথ্যারোপকারী ও পথভ্রষ্টদের একজন হয়, তবে তার আপ্যায়ন হবে প্রচন্ড উত্তপ্ত পানি দিয়ে, আর তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুনে দহন। আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/৮৮-৯৪
মন্তব্যঃ উপরের আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় পরকালে অল্পসংখ্যক লোক নাজাত পাবে। আল্লাহ বলেছেন, “পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে অল্প সংখ্যা”, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবাদের ১৪০০ বছর পর পৃথিবীতে আমরা এসেছি, আমাদের জন্য এ আয়াত আরও বেশি প্রযোজ্য।
>>> অল্প সংখ্যক লোক সম্বন্ধে কুরআনের আরও কিছু আয়াত- <<<
وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
আর আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যাকই কৃতজ্ঞ। সাবা, ৩৪/১৩
إِلا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَا هُمْ
তবে যারা ঈমান আনে আর সৎ আমল করে, এদের সংখ্যা অল্পই। সোয়াদ, ৩৮/২৪
بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلا مَا يُؤْمِنُونَ
বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন তাই তারা খুব স্বল্পসংখ্যাক ঈমান আনবে। আল-বাকারাহ, ২/৮৮
وَلَكِنْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلا يُؤْمِنُونَ إِلا قَلِيلا
বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন তাই তারা খুব স্বল্পসংখ্যাক ছাড়া ঈমান আনে না। আন-নিসা, ৪/৪৬
بَلْ طَبَعَ اللَّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلا يُؤْمِنُونَ إِلا قَلِيلا
বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন তাই তারা খুব স্বল্পসংখ্যাক ছাড়া ঈমান আনে না। আন-নিসা, ৪/১৫৫
ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلا قَلِيلا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ
এরপর তোমাদের মধ্য হতে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তোমরা সকলে উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিলে। আল-বাকারাহ, ২/৮৩
وَلا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلا قَلِيلا مِنْهُمْ
আর তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া, তুমি তাদের থেকে খিয়ানত সম্পর্কে অবগত হতে থাকবে। আল-মায়িদাহ ৫/১৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ
ইসলাম অচেনা ক্ষুদ্র পরিসরে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অতিসত্বর তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে, সুতরাং সুসংবাদ অচেনা দলের জন্য। সহীহ মুসলিম: ২৬৭
মন্তব্যঃ অনেকে সংখ্যাধিক্যকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “এত মানুষ করে, তারা কি ভুল করে?”, অধিক সংখ্য মানুষ করলেই যেন দলীল হয়ে যায়। এই ধারণাটি ভুল, দলীল হতে হবে আল্লাহর ওয়াহী, যা হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। আল্লাহ যখন আদম (আলাইহিস সালাম) ও শয়তানকে পৃথিবীতে পাঠান তখন ইবলিশ শয়তান মহান আল্লাহকে বলেছিল-
لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لأحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلا قَلِيلا
(ইবলিশ বলেছিল), যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেন, তাহলে অতি অল্প সংখ্যক ছাড়া তার (আদমের) বংশধরদেরকে অবশ্যই সমূলে বিনষ্ট করব। আল-ইস্রা, ১৭/৬২
উপরের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে, ইবলিশ শয়তানের প্রচেষ্টা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে মানুষকে তার দলে ফিরানো, শয়তানের কাছে হার মানলে আমরা পথভ্রষ্ট হবো। তাই আমাদেরকে সঠিক দীন অনুসরণ করতে হবে, তাহলো কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। তবেই পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে আর তাদের সংখ্যা অল্পই।
তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান। সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক; প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স। সপ্তম অধ্যায়ঃ পরকালে বিশ্বাস; পৃষ্ঠাঃ ২৭৫ হতে ২৭৭ পর্যন্ত।
0 Comments