হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হাক্ক
হাক্ক বা অধিকার দুই প্রকার (১) হাক্কুল্লাহ (২) হাক্কুল ইবাদ।
হাক্কুল্লাহ অর্থ আল্লাহর হক। (হাক্ক) ﺣَﻖّ অর্থ কয়েক রকম আছে তার মধ্যে এক অর্থ হলো অধিকার, হক, দাবি, পাওনা। এখানে হাক্কুল্লাহ অর্থ আল্লাহর হক, আল্লাহর পাওনা। আর ﻋِﺒَﺎﺩ (ইবাদ) শব্দটি ﻋَﺒْﺪ (আব্দ) শব্দের বহুবচন। যার অর্থ দাস, বান্দা। এখানে হাক্কুল ইবাদ অর্থ বান্দার হক, বান্দার অধিকার, বান্দার পাওনা।
নিচের আয়াতে হাক্কুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হক এবং হাক্কুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হাক্ক-এর কথা
মহান আল্লাহ বলেছেন;
ﻭَﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ۖ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻱِﻥْ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﻭَﺑِﺬِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻴَﺘَﺎﻣَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ ﺍﻟْﺠُﻨُﺐِ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺣِﺐِ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨْﺐِ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ۗ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺨْﺘَﺎﻟًﺎ ﻓَﺨُﻮﺭًﺍ
তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। (আন-নিসা, ৪/৩৬)
(১) হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হকঃ
আমরা সচরাচর যেই ক্ষমা প্রসঙ্গে জানি তাহলো, হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক। আল্লাহ বলেন;
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥْ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻼﻻ ﺑَﻌِﻴﺪًﺍ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল। আন-নিসা, ৪/১১৬
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন;
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥْ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﻓْﺘَﺮَﻯ ﺇِﺛْﻤًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল অবশ্যই সে মহাপাপ রচনা করল। আন-নিসা, ৪/৪৮
উল্লেখিত আয়াতে গুনাহ হচ্ছে সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত; যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করা যা আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারেন কারণ এগুলো আল্লাহ এখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ বলেন;
ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻷﺭْﺽِ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳُﻌَﺬِّﺏُ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
আর আসমান ও জমিনের কর্তৃত্ব আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-ফাত্হ, ৪৮/১৪
হাদীসে এসেছে;
ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫِ ﺑْﻦِ ﺟَﺒَﻞٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺭِﺩْﻑَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻠَﻰ ﺣِﻤَﺎﺭٍ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﻋُﻔَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺎﻝَ " ﻳَﺎ ﻣُﻌَﺎﺫُ ﺗَﺪْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﺣَﻖُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻭَﻣَﺎ ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ " ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻗَﺎﻝَ " ﻓَﺈِﻥَّ ﺣَﻖَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﺃَﻥْ ﻳَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻻَ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳُﻌَﺬِّﺏَ ﻣَﻦْ ﻻَ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ " . ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻓَﻼَ ﺃُﺑَﺸِّﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻗَﺎﻝَ " ﻻَ ﺗُﺒَﺸِّﺮْﻫُﻢْ ﻓَﻴَﺘَّﻜِﻠُﻮﺍ "
মুআয ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে রাসূলের সঙ্গী ছিলাম। যে উটকে ‘উফাইর’ বলা হয়। রাসূল ( ﷺ ) জিজ্ঞেস করলেন; ‘হে মুআয, তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার কি কি হক রয়েছে? এবং আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার কি কি হক রয়েছে? আমি উত্তর দিলাম; আল্লাহ এবং তার রাসূল ( ﷺ ) ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার হক হচ্ছে; তারা তাঁর এবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার হক হচ্ছে, যে তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দেবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( ﷺ ) আমি কি সকলকে এর সুসংবাদ জানিয়ে দেব না? তিনি বললেন তাদের সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করে থাকবে। ( বোখারি ও মুসলিম)
২। হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হাক্ক বা বান্দার অধিকার বা বান্দার পাওনাঃ
আমরা অনেকেই হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হকের ব্যাপারে সচেতন কিন্তু হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের ব্যাপারে গাফেল। যেমন; লেনদেনে ধোঁকা, বাটপারি, ছিটারি করা, কথা দিয়ে কথা না রাখা, কথার অভিশাপ দেওয়া, কথার খোটা বা গালি-গালাজ করা, হিংসা বা নিন্দা করা, হেয় মনে করে, মিথ্যা কথা বলা, কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা, অন্যের ছবি বিকৃত করা, অন্যের ক্ষতি করা, কাউকে ধোঁকা দেয়া, কারো সাথে প্রতারনা করা, অন্যের অর্থের লোভ করা, গীবত বা পরচর্চা করা, শত্রুতামী করা ইত্যাদি ইত্যাদি অর্থাৎ মানুষ মানুষের সাথে সম্পর্কিত যা কিছু আছে তার হক রক্ষা করা বা আদায় করার নামই হলো হাক্কুল ইবাদ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মানুষের জীবনে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যাবতীয় কার্যকলাপ, আচার-আচরণ বিধি সবই মানুষ মানুষকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। আল্লাহর ইবাদত (যেমন: সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি) ছাড়া বাকি সব যা মানুষকে কেন্দ্র করে ঘটে। কত বড় চিন্তার বিষয় ভাবতে পারেন হে মূমিন! মূসলীম!
বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেননি। যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১টি টাকাও নিয়ে রাখি কিংবা কোন কথা বা গালির মাধ্যমে কাউকে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক যার হক নষ্ট করলাম; সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
এবার চিন্তা করুন হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের কতটুকু গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আল্লাহর হকের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমন হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের গুরুত্ত্ব কোন অংশে কম নয় কিন্তু বর্তমান সময়ে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। তাই আমার লিখনিতে এই বিষয় উপস্থাপনা।
হাদীসে এসেছে;
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺻﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍَﺗَﺪْﺭُﻭْﻥَ ﻣَﺎ ﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻗِﻴْﻨَﺎ ﻣَﻦْ ﻻَ ﺩِﺭْﻫَﻢَ ﻟَﻪُ ﻭَﻻَ ﻣَﺘَﺎﻉَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲَ ﻣِﻦْ ﺍُﻣَّﺘِﻰْ ﻣَﻦْ ﻳَﺄْﺓِﻯْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺑﺼَّﻠَﻮﺓٍ ﻭَّﺻِﻴَﺎﻡٍ ﻭَﺯَﻛَﺎَﺓٍ ﻭَّﻳَﺄْﺗِﻰْ ﻗَﺪْ ﺷَﺘَﻢَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻗَﺬَﻑ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺃَﻛَﻞَ ﻣَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَ ﺳَﻔَﻚَ ﺩَﻡَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺿَﺮَﺏَ ﻫَﺬَﺍ ﻓﻴُﻌْﻄَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ﻓﺎِﻥْ ﻓَﻨِﻴَﺖْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗُﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺍَﻥْ ﻳَﻘْﻀَﻰ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍُﺧِﺬَ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻫُﻢْ ﻓَﻄُﺮِﺣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ... ﻃُﺮِﺡَ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন, ‘তোমরা কি জান অভাবী কে? ছাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে তো সেই অভাবী যার টাকা-পয়সা ও অর্থ-সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি অভাবী হবে, যে দুনিয়াতে সলাত, সিয়াম, যাকাত আদায় করে আসবে এবং সাথে সাথে সেই লোকেরাও আসবে, কাউকে সে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল-সম্পদ আত্মসাত করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে আবার মেরেছে। সুতরাং এই হক্বদারকে তার নেকী দেয়া হবে। আবার ঐ হকদারকেও (পূর্বোক্ত হক্বদার যার উপর যুলুম করেছিল) তার নেকী দেয়া হবে। এভাবে পরিশোধ করতে গিয়ে যদি তার (প্রথমতো ব্যক্তির) নেকী শেষ হয়ে যায় তবে তাদের (পরের হক্বদারের) গুণাহসমূহ ঐ ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম: ৬৪৭৩)
উপরের হাদীস থেকে বুঝা যায়, কোন ব্যক্তি সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত আদায় করেও বান্দার হক যথাযাথভাবে আদায় না করার কারণে জাহান্নামে যেতে পারে।
একটি প্রসিদ্ধ হাদীছে দুজন মহিলার কথা বর্ণিত হয়েছে, যাদের একজন মসজিদে ঝাড়ৃ দিতো ও বেশী বেশী নফল ইবাদত করত। কিন্তু মুর্খ হওয়ার কারণে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিত। অন্যজন নফল ইবাদত কম করলেও প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব রেখে চলত। রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) প্রথমোক্ত মহিলাকে জাহান্নামী ও দ্বিতীয় মহিলাকে জান্নাতী বললেন। (আহমাদ, বায়হাক্বী)
বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেনঃ
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮُ ﻣَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﻣَﺎ ﻧَﻬَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ
প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার যবান (কথা) ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে। সহীহুল বুখারী: ৬৪৮৪
বিদায় হজ্জের শেষ ভাষণে রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻓَﺈﻥْ ﺩِﻣَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻋْﺮَﺍﺿَﻜُﻢْ ﻋَﻠﻴْﻜُﻢْ ﺣَﺮَﺍﻡً
‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরষ্পরের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরষ্পরের জন্য হারাম’। (বুখারী, মুসলিম)
অন্যত্র রাসূল ( ﷺ ) বলেন:
ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﻛُﻞُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﺩَﻣُﻪُ ﻭَﻣَﺎﻟُﻪُ ﻭَﻋِﺮْﺿُﻪُ
একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫)
মহান আল্লাহ, সুরা হুজুরাত-এর পরপর তিনটি আয়াতে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হাক্ক সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছেন।
ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেওয়াঃ
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﺧْﻮَﺓٌ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧَﻮَﻳْﻜُﻢْ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ
নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও আর আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হয়। আল-হুজুরাত, ৪৯/১০
হাদীছে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে। (তিরমিযী, সনদ ছহীহ; ছহীহ আবু দাঊদ হা/৪৯৯২)
কোন বান্দা যেন কোন পুরুষ বা নারীকে নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রূপ বা উপহাস না করেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻ ﻳَﺴْﺨَﺮْ ﻗَﻮﻡٌ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻻ ﻧِﺴَﺎﺀٌ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺀٍ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻦَّ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ
হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে ঠাট্রা-বিদ্রূপ না করে; হতে পারে যাদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম, আর কোন নারী যেন অন্য নারীকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে হতে পারে যাদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে তারা বিদ্রূপকারিণীদের চেয়ে উত্তম। আল-হুজুরাত, ৪৯/১১
কোন বান্দা যেন অপর বান্দার দোষারোপ না করে এবং বিকৃত নামে না ডাকেঃ
ﻭَﻻ ﺗَﻠْﻤِﺰُﻭﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﻻ ﺗَﻨَﺎﺑَﺰُﻭﺍ ﺑِﺎﻷﻟْﻘَﺎﺏِ ﺑِﺌْﺲَ ﺍﻻﺳْﻢُ ﺍﻟْﻔُﺴُﻮﻕُ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻹﻳﻤَﺎﻥِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺘُﺐْ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ (বিকৃত) নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা ফাসেকী (গোনাহের) কাজ আর যারা এ ধরণের কাজ হতে বিরত না হয় তারাই যালিম। আল-হুজুরাত, ৪৯/১১
কোন বান্দা যেন অপর বান্দার গীবত না করেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ ﻭَﻻ ﺗَﺠَﺴَّﺴُﻮﺍ ﻭَﻻ ﻳَﻐْﺘَﺐْ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﺃَﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻟَﺤْﻢَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻣَﻴْﺘًﺎ ﻓَﻜَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺏٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা অত্যধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা পাপ; আর তোমরা কারো দোষ সন্ধান করো না এবং তোমরা একে অপরের গীবত করো না; তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? আসলে তোমরা তো একে ঘৃণাই কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। আল-হুজুরাত, ৪৯/১২
গীবত সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন;
ﻭَﻳْﻞٌ ﻟِﻜُﻞِّ ﻫُﻤَﺰَﺓٍ ﻟُﻤَﺰَﺓٍ
দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গীবতকারী। আল-হুমাযাহ, ১০৪/১
ﻭَﻻ ﺗُﻄِﻊْ ﻛُﻞَّ ﺣَﻼﻑٍ ﻣَﻬِﻴﻦٍ ﻫَﻤَّﺎﺯٍ ﻣَﺸَّﺎﺀٍ ﺑِﻨَﻤِﻴﻢٍ ﻣَﻨَّﺎﻉٍ ﻟِﻠْﺨَﻴْﺮِ ﻣُﻌْﺘَﺪٍ ﺃَﺛِﻴﻢٍ ﻋُﺘُﻞٍّ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺯَﻧِﻴﻢٍ
আর তুমি তার অনুসরণ কর না, যে বেশি বেশি শপথ করে, লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়, যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, কঠোর স্বভাবের, তদুপরি কুখ্যাত। আল-ক্বালাম, ৬৮/১০-১৩
বিনা অপরাধে কোন বান্দাকে কষ্ট দিলেঃ
মহান আল্লাহ বলেন;
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒُﻮﺍ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺣْﺘَﻤَﻠُﻮﺍ ﺑُﻬْﺘَﺎﻧًﺎ ﻭَﺇِﺛْﻤًﺎ ﻣُﺒِﻴﻨًﺎ
আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। আল-আহযাব, ৩৩/৫৮
অর্থাৎ কোন মানুষকে যে কোন ভাবে কষ্ট দিলে তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারবেন।
কোন বান্দাকে গালি দেয়া গুনাহের কাজঃ
রাসূল ( ﷺ )বলেছেন,
ﺳِﺒَﺎﺏُ ﺍﻟﻤُﺴْﻠﻢِ ﻓُﺴُﻮْﻕٌ ﻭَﻗِﺘَﺎﻟُﻪُ ﻛُﻔْﺮٌ
কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী (গুনাহের) কাজ এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। সহীহুল বুখারী: ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬, সহীহ মুসলিম: ১২৪
রাসূল ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺮْﻣِﻲ ﺭَﺟُﻞٌ ﺭَﺟُﻼً ﺑِﺎﻟْﻔُﺴُﻮﻕِ، ﻭَﻻَ ﻳَﺮْﻣِﻴﻪِ ﺑِﺎﻟْﻜُﻔْﺮِ، ﺇِﻻَّ ﺍﺭْﺗَﺪَّﺕْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺻَﺎﺣِﺒُﻪُ ﻛَﺬَﻟِﻚَ
কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তিকে ফাসিক বলে গালি না দেয় এবং কোন ব্যক্তি যেন আরেক ব্যক্তিকে কাফির বলে অপবাদ না দেয়। কেননা, যদি সে তা না হয়ে থাকে, তবে তা তার উপরই পতিত হবে। সহীহুল বুখারী: ৬০৪৫
কোন বান্দাকে অভিশাপ দেওয়া নিষেধঃ
রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻌَﻦَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﻬْﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺬَﻑَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺑِﻜُﻔْﺮٍ ﻓَﻬْﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ
কোন ব্যক্তি অন্য মুমিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করার শামিল হবে আর কোন মুমিনকে কাফির বলে অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করার শামিল হবে। সহীহুল বুখারী: ৬০৪৭
আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত,
ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳَﺒَّﺎﺑًﺎ ﻭَﻻَ ﻓَﺤَّﺎﺷًﺎ ﻭَﻻَ ﻟَﻌَّﺎﻧًﺎ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻷَﺣَﺪِﻧَﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻌْﺘَﺒَﺔِ " ﻣَﺎ ﻟَﻪُ، ﺗَﺮِﺏَ ﺟَﺒِﻴﻨُﻪُ
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) গালি-গালাজকারী, অশালীন ও অভিশাপদাতা ছিলেন না। তিনি আমাদের কারো উপর নারাজ হলে, কেবল এতটুকু বলতেন, তার কি হলো? তার কপাল ধুলাময় হোক। সহীহুল বুখারী: ৬০৩১, ৬০৪৬
কোন বান্দার মন্দ কথা প্রচার না করাঃ
ﻻ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺠَﻬْﺮَ ﺑِﺎﻟﺴُّﻮﺀِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝِ ﺇِﻻ ﻣَﻦْ ﻇُﻠِﻢَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻤِﻴﻌًﺎ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ
মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ ভালবাসেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। আন-নিসা, ৪/১৪৮
কোন বান্দা সম্পর্কে মিথ্যা পরিহার করাঃ
ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ
আর মিথ্যা কথা পরিহার কর। আল-হাজ্জ, ২২/৩০
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﺃَﻻَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺑِﺄَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮِ . " ﻗَﺎﻝَ " ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ . " ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ " ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ"
আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেন, মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। সহীহ মুসলিম: ১৬২
অপর বান্দার সাথে কথা ও কাজে মিল থাকাঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟِﻢَ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻻ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ ﻛَﺒُﺮَ ﻣَﻘْﺘًﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻻ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ
হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না? আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে, তোমরা এমন কথা বল যা তোমরা কর না। আস-সাফ, ৬১/২-৩
কোন বান্দার প্রতি হিংসা না করাঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
ﺃَﻡْ ﻳَﺤْﺴُﺪُﻭﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻫُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻦ ﻓَﻀْﻠِﻪِ
‘তবে কি তারা লোকদের প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন? (নিসা ৪/৫৪)
অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী বলেন,
ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪُ ﻣَﺬْﻣُﻮﻡٌ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒُﻪُ ﻣَﻐْﻤُﻮﻡٌ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺍﻟْﺤَﻄَﺐَ
‘হিংসা নিন্দনীয় এবং হিংসুক ব্যক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হিংসা সকল নেকী খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে’ (কুরতুবী)।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ( ﷺ ) বলেছেন,
ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﺴَﺪَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ، ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺍﻟْﺤَﻄَﺐَ
‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেকিকে খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন খেয়ে ফেলে কাঠের খড়ি’। (আবূ দাউদ: ৪৯০৩)
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺠْﺘَﻤِﻌَﺎﻥِ ﻓِﻰْ ﻗَﻠْﺐِ ﻋَﺒْﺪٍ ﺍﻹِﻳْﻤَﺎﻥُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪُ
‘কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না’। (নাসাঈ হা/৩১০৯, সনদ হাসান)
‘আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻟَﺎ ﺗَﺤَﺎﺳَﺪُﻭﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺎﻏَﻀُﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘَﺎﻃَﻌُﻮﺍ، ﻭَﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ
‘তোমরা কারও প্রতি বিদ্বেষভাব রেখ না। পরস্পর হিংসা করো না। বিচ্ছেদভাব রেখ না। বরং আল্লাহর বান্দা হয়ে একে অন্যের ভাই হয়ে যাও’। (মুসলিম: ২৫৫৯; বুখারী : ৫১৪৩)
যামরাহ বিন ছা‘লাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﺤَﺎﺳَﺪُﻭْﺍ
‘মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা না করবে’। (ত্বাবারাণী হা/৮১৫৭; ছহীহাহ হা/৩৩৮৬)
বান্দার দোষ গোপন করাঃ
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন;
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﺧُﻮ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ، ﻻَ ﻳَﻈْﻠِﻤُﻪُ ﻭَﻻَ ﻳُﺴْﻠِﻤُﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻓَﺮَّﺝَ ﻋَﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻛُﺮْﺑَﺔً ﻓَﺮَّﺝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻛُﺮْﺑَﺔً ﻣِﻦْ ﻛُﺮُﺑَﺎﺕِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﺘَﺮَ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন। (সহীহুল বুখারী: ২৪৪২, ৬৯৫১)
বান্দার হক নষ্ট করলে তা হতে ক্ষমা চাওয়ার উপায়ঃ
১. যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. এখন যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন; সেই ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। (এই নজীর মক্কা বিজয়-এর পরে দেখা যায়)
৩. এখন, যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছে বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না; অপরাধটি আর্থিক ক্ষতি বিষয়ক হয়; তবে সমপরিমাণ অর্থ কোন ভাল কাজে দিয়ে দিতে হবে। (যেমন; মসজিদ নির্মাণ) আর আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ হয় যেমন: অহংকার, হিংসা, ঘৃণা করা, গালি দেয়া, হেয় করা ইত্যাদি এর মত হয় তাহলেও সাদকায়ে জারিয়ায় কোন খাতে তার জন্য ব্যয় করতে হবে আর আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাসূল ( ﷺ ) বলেন: ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫)
৪. উপরের কোন ভাবেই ক্ষমা না চাইলে, তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে এবং বান্দার হক তাকে নিজের নেকী দেয়ার বিনিময়ে কিংবা ঐ বান্দার গুনাহের বোঝাা বহন করার বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে।
উপসংহারঃ অতএব অন্যের অধিকার খর্ব হতে পারে এরূপ অতীব ক্ষুদ্র কাজ হতেও বিরত থাকা মুমিন বান্দার অবশ্যই কর্তব্য। কোন ছোট খাট যুলুমকে মোটেই ছোট মনে করা উচিত নয়। প্রতিটি মুমিনকে বান্দার হকের প্রতি সচেনত হওয়া প্রয়োজন। কারণ বলা যায় না, সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত, আদায় করেও আপনিই হাদীসে ঐ অভাবী ব্যক্তির মতো জাহান্নামী হয়ে যান কিনা? আল্লাহু আলাম।
সংকলনঃ মোহাম্মাদ সাইদুর রহমান
এম. এ. (ইসলামিক স্টাডিজ)
হাক্ক বা অধিকার দুই প্রকার (১) হাক্কুল্লাহ (২) হাক্কুল ইবাদ।
হাক্কুল্লাহ অর্থ আল্লাহর হক। (হাক্ক) ﺣَﻖّ অর্থ কয়েক রকম আছে তার মধ্যে এক অর্থ হলো অধিকার, হক, দাবি, পাওনা। এখানে হাক্কুল্লাহ অর্থ আল্লাহর হক, আল্লাহর পাওনা। আর ﻋِﺒَﺎﺩ (ইবাদ) শব্দটি ﻋَﺒْﺪ (আব্দ) শব্দের বহুবচন। যার অর্থ দাস, বান্দা। এখানে হাক্কুল ইবাদ অর্থ বান্দার হক, বান্দার অধিকার, বান্দার পাওনা।
নিচের আয়াতে হাক্কুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হক এবং হাক্কুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হাক্ক-এর কথা
মহান আল্লাহ বলেছেন;
ﻭَﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ۖ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻱِﻥْ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﻭَﺑِﺬِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻴَﺘَﺎﻣَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﺠَﺎﺭِ ﺍﻟْﺠُﻨُﺐِ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺣِﺐِ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨْﺐِ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ۗ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺨْﺘَﺎﻟًﺎ ﻓَﺨُﻮﺭًﺍ
তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। (আন-নিসা, ৪/৩৬)
(১) হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হকঃ
আমরা সচরাচর যেই ক্ষমা প্রসঙ্গে জানি তাহলো, হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক। আল্লাহ বলেন;
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥْ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻼﻻ ﺑَﻌِﻴﺪًﺍ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল। আন-নিসা, ৪/১১৬
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন;
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥْ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﻓْﺘَﺮَﻯ ﺇِﺛْﻤًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল অবশ্যই সে মহাপাপ রচনা করল। আন-নিসা, ৪/৪৮
উল্লেখিত আয়াতে গুনাহ হচ্ছে সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত; যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করা যা আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারেন কারণ এগুলো আল্লাহ এখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ বলেন;
ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻷﺭْﺽِ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳُﻌَﺬِّﺏُ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
আর আসমান ও জমিনের কর্তৃত্ব আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-ফাত্হ, ৪৮/১৪
হাদীসে এসেছে;
ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫِ ﺑْﻦِ ﺟَﺒَﻞٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺭِﺩْﻑَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻠَﻰ ﺣِﻤَﺎﺭٍ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﻋُﻔَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺎﻝَ " ﻳَﺎ ﻣُﻌَﺎﺫُ ﺗَﺪْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﺣَﻖُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻭَﻣَﺎ ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ " ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻗَﺎﻝَ " ﻓَﺈِﻥَّ ﺣَﻖَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﺃَﻥْ ﻳَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻻَ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳُﻌَﺬِّﺏَ ﻣَﻦْ ﻻَ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﺑِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ " . ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻓَﻼَ ﺃُﺑَﺸِّﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻗَﺎﻝَ " ﻻَ ﺗُﺒَﺸِّﺮْﻫُﻢْ ﻓَﻴَﺘَّﻜِﻠُﻮﺍ "
মুআয ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একটি গাধার পিঠে রাসূলের সঙ্গী ছিলাম। যে উটকে ‘উফাইর’ বলা হয়। রাসূল ( ﷺ ) জিজ্ঞেস করলেন; ‘হে মুআয, তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার কি কি হক রয়েছে? এবং আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার কি কি হক রয়েছে? আমি উত্তর দিলাম; আল্লাহ এবং তার রাসূল ( ﷺ ) ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার হক হচ্ছে; তারা তাঁর এবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার হক হচ্ছে, যে তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দেবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( ﷺ ) আমি কি সকলকে এর সুসংবাদ জানিয়ে দেব না? তিনি বললেন তাদের সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করে থাকবে। ( বোখারি ও মুসলিম)
২। হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হাক্ক বা বান্দার অধিকার বা বান্দার পাওনাঃ
আমরা অনেকেই হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হকের ব্যাপারে সচেতন কিন্তু হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের ব্যাপারে গাফেল। যেমন; লেনদেনে ধোঁকা, বাটপারি, ছিটারি করা, কথা দিয়ে কথা না রাখা, কথার অভিশাপ দেওয়া, কথার খোটা বা গালি-গালাজ করা, হিংসা বা নিন্দা করা, হেয় মনে করে, মিথ্যা কথা বলা, কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা, অন্যের ছবি বিকৃত করা, অন্যের ক্ষতি করা, কাউকে ধোঁকা দেয়া, কারো সাথে প্রতারনা করা, অন্যের অর্থের লোভ করা, গীবত বা পরচর্চা করা, শত্রুতামী করা ইত্যাদি ইত্যাদি অর্থাৎ মানুষ মানুষের সাথে সম্পর্কিত যা কিছু আছে তার হক রক্ষা করা বা আদায় করার নামই হলো হাক্কুল ইবাদ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মানুষের জীবনে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যাবতীয় কার্যকলাপ, আচার-আচরণ বিধি সবই মানুষ মানুষকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। আল্লাহর ইবাদত (যেমন: সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি) ছাড়া বাকি সব যা মানুষকে কেন্দ্র করে ঘটে। কত বড় চিন্তার বিষয় ভাবতে পারেন হে মূমিন! মূসলীম!
বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেননি। যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১টি টাকাও নিয়ে রাখি কিংবা কোন কথা বা গালির মাধ্যমে কাউকে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক যার হক নষ্ট করলাম; সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
এবার চিন্তা করুন হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের কতটুকু গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আল্লাহর হকের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমন হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের গুরুত্ত্ব কোন অংশে কম নয় কিন্তু বর্তমান সময়ে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হকের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। তাই আমার লিখনিতে এই বিষয় উপস্থাপনা।
হাদীসে এসেছে;
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺻﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍَﺗَﺪْﺭُﻭْﻥَ ﻣَﺎ ﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲُ ﻗِﻴْﻨَﺎ ﻣَﻦْ ﻻَ ﺩِﺭْﻫَﻢَ ﻟَﻪُ ﻭَﻻَ ﻣَﺘَﺎﻉَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺲَ ﻣِﻦْ ﺍُﻣَّﺘِﻰْ ﻣَﻦْ ﻳَﺄْﺓِﻯْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺑﺼَّﻠَﻮﺓٍ ﻭَّﺻِﻴَﺎﻡٍ ﻭَﺯَﻛَﺎَﺓٍ ﻭَّﻳَﺄْﺗِﻰْ ﻗَﺪْ ﺷَﺘَﻢَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻗَﺬَﻑ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺃَﻛَﻞَ ﻣَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَ ﺳَﻔَﻚَ ﺩَﻡَ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺿَﺮَﺏَ ﻫَﺬَﺍ ﻓﻴُﻌْﻄَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗِﻪِ ﻓﺎِﻥْ ﻓَﻨِﻴَﺖْ ﺣَﺴَﻨَﺎﺗُﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺍَﻥْ ﻳَﻘْﻀَﻰ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍُﺧِﺬَ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻫُﻢْ ﻓَﻄُﺮِﺣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ... ﻃُﺮِﺡَ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন, ‘তোমরা কি জান অভাবী কে? ছাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে তো সেই অভাবী যার টাকা-পয়সা ও অর্থ-সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি অভাবী হবে, যে দুনিয়াতে সলাত, সিয়াম, যাকাত আদায় করে আসবে এবং সাথে সাথে সেই লোকেরাও আসবে, কাউকে সে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল-সম্পদ আত্মসাত করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে আবার মেরেছে। সুতরাং এই হক্বদারকে তার নেকী দেয়া হবে। আবার ঐ হকদারকেও (পূর্বোক্ত হক্বদার যার উপর যুলুম করেছিল) তার নেকী দেয়া হবে। এভাবে পরিশোধ করতে গিয়ে যদি তার (প্রথমতো ব্যক্তির) নেকী শেষ হয়ে যায় তবে তাদের (পরের হক্বদারের) গুণাহসমূহ ঐ ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম: ৬৪৭৩)
উপরের হাদীস থেকে বুঝা যায়, কোন ব্যক্তি সলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত আদায় করেও বান্দার হক যথাযাথভাবে আদায় না করার কারণে জাহান্নামে যেতে পারে।
একটি প্রসিদ্ধ হাদীছে দুজন মহিলার কথা বর্ণিত হয়েছে, যাদের একজন মসজিদে ঝাড়ৃ দিতো ও বেশী বেশী নফল ইবাদত করত। কিন্তু মুর্খ হওয়ার কারণে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিত। অন্যজন নফল ইবাদত কম করলেও প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব রেখে চলত। রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) প্রথমোক্ত মহিলাকে জাহান্নামী ও দ্বিতীয় মহিলাকে জান্নাতী বললেন। (আহমাদ, বায়হাক্বী)
বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেনঃ
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮُ ﻣَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﻣَﺎ ﻧَﻬَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ
প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার যবান (কথা) ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে। সহীহুল বুখারী: ৬৪৮৪
বিদায় হজ্জের শেষ ভাষণে রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻓَﺈﻥْ ﺩِﻣَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻋْﺮَﺍﺿَﻜُﻢْ ﻋَﻠﻴْﻜُﻢْ ﺣَﺮَﺍﻡً
‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরষ্পরের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান পরষ্পরের জন্য হারাম’। (বুখারী, মুসলিম)
অন্যত্র রাসূল ( ﷺ ) বলেন:
ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﻛُﻞُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﺩَﻣُﻪُ ﻭَﻣَﺎﻟُﻪُ ﻭَﻋِﺮْﺿُﻪُ
একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫)
মহান আল্লাহ, সুরা হুজুরাত-এর পরপর তিনটি আয়াতে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হাক্ক সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছেন।
ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেওয়াঃ
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﺧْﻮَﺓٌ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧَﻮَﻳْﻜُﻢْ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ
নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও আর আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হয়। আল-হুজুরাত, ৪৯/১০
হাদীছে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে। (তিরমিযী, সনদ ছহীহ; ছহীহ আবু দাঊদ হা/৪৯৯২)
কোন বান্দা যেন কোন পুরুষ বা নারীকে নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রূপ বা উপহাস না করেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻ ﻳَﺴْﺨَﺮْ ﻗَﻮﻡٌ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻡٍ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻻ ﻧِﺴَﺎﺀٌ ﻣِﻦْ ﻧِﺴَﺎﺀٍ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻦَّ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ
হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে ঠাট্রা-বিদ্রূপ না করে; হতে পারে যাদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম, আর কোন নারী যেন অন্য নারীকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে হতে পারে যাদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে তারা বিদ্রূপকারিণীদের চেয়ে উত্তম। আল-হুজুরাত, ৪৯/১১
কোন বান্দা যেন অপর বান্দার দোষারোপ না করে এবং বিকৃত নামে না ডাকেঃ
ﻭَﻻ ﺗَﻠْﻤِﺰُﻭﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﻻ ﺗَﻨَﺎﺑَﺰُﻭﺍ ﺑِﺎﻷﻟْﻘَﺎﺏِ ﺑِﺌْﺲَ ﺍﻻﺳْﻢُ ﺍﻟْﻔُﺴُﻮﻕُ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻹﻳﻤَﺎﻥِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺘُﺐْ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ (বিকৃত) নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা ফাসেকী (গোনাহের) কাজ আর যারা এ ধরণের কাজ হতে বিরত না হয় তারাই যালিম। আল-হুজুরাত, ৪৯/১১
কোন বান্দা যেন অপর বান্দার গীবত না করেঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ ﻭَﻻ ﺗَﺠَﺴَّﺴُﻮﺍ ﻭَﻻ ﻳَﻐْﺘَﺐْ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﺃَﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻟَﺤْﻢَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻣَﻴْﺘًﺎ ﻓَﻜَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺏٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা অত্যধিক ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা পাপ; আর তোমরা কারো দোষ সন্ধান করো না এবং তোমরা একে অপরের গীবত করো না; তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? আসলে তোমরা তো একে ঘৃণাই কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। আল-হুজুরাত, ৪৯/১২
গীবত সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন;
ﻭَﻳْﻞٌ ﻟِﻜُﻞِّ ﻫُﻤَﺰَﺓٍ ﻟُﻤَﺰَﺓٍ
দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গীবতকারী। আল-হুমাযাহ, ১০৪/১
ﻭَﻻ ﺗُﻄِﻊْ ﻛُﻞَّ ﺣَﻼﻑٍ ﻣَﻬِﻴﻦٍ ﻫَﻤَّﺎﺯٍ ﻣَﺸَّﺎﺀٍ ﺑِﻨَﻤِﻴﻢٍ ﻣَﻨَّﺎﻉٍ ﻟِﻠْﺨَﻴْﺮِ ﻣُﻌْﺘَﺪٍ ﺃَﺛِﻴﻢٍ ﻋُﺘُﻞٍّ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺯَﻧِﻴﻢٍ
আর তুমি তার অনুসরণ কর না, যে বেশি বেশি শপথ করে, লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়, যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, কঠোর স্বভাবের, তদুপরি কুখ্যাত। আল-ক্বালাম, ৬৮/১০-১৩
বিনা অপরাধে কোন বান্দাকে কষ্ট দিলেঃ
মহান আল্লাহ বলেন;
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒُﻮﺍ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺣْﺘَﻤَﻠُﻮﺍ ﺑُﻬْﺘَﺎﻧًﺎ ﻭَﺇِﺛْﻤًﺎ ﻣُﺒِﻴﻨًﺎ
আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। আল-আহযাব, ৩৩/৫৮
অর্থাৎ কোন মানুষকে যে কোন ভাবে কষ্ট দিলে তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারবেন।
কোন বান্দাকে গালি দেয়া গুনাহের কাজঃ
রাসূল ( ﷺ )বলেছেন,
ﺳِﺒَﺎﺏُ ﺍﻟﻤُﺴْﻠﻢِ ﻓُﺴُﻮْﻕٌ ﻭَﻗِﺘَﺎﻟُﻪُ ﻛُﻔْﺮٌ
কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী (গুনাহের) কাজ এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। সহীহুল বুখারী: ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬, সহীহ মুসলিম: ১২৪
রাসূল ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺮْﻣِﻲ ﺭَﺟُﻞٌ ﺭَﺟُﻼً ﺑِﺎﻟْﻔُﺴُﻮﻕِ، ﻭَﻻَ ﻳَﺮْﻣِﻴﻪِ ﺑِﺎﻟْﻜُﻔْﺮِ، ﺇِﻻَّ ﺍﺭْﺗَﺪَّﺕْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺻَﺎﺣِﺒُﻪُ ﻛَﺬَﻟِﻚَ
কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তিকে ফাসিক বলে গালি না দেয় এবং কোন ব্যক্তি যেন আরেক ব্যক্তিকে কাফির বলে অপবাদ না দেয়। কেননা, যদি সে তা না হয়ে থাকে, তবে তা তার উপরই পতিত হবে। সহীহুল বুখারী: ৬০৪৫
কোন বান্দাকে অভিশাপ দেওয়া নিষেধঃ
রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻌَﻦَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﻬْﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺬَﻑَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺑِﻜُﻔْﺮٍ ﻓَﻬْﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ
কোন ব্যক্তি অন্য মুমিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করার শামিল হবে আর কোন মুমিনকে কাফির বলে অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করার শামিল হবে। সহীহুল বুখারী: ৬০৪৭
আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত,
ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳَﺒَّﺎﺑًﺎ ﻭَﻻَ ﻓَﺤَّﺎﺷًﺎ ﻭَﻻَ ﻟَﻌَّﺎﻧًﺎ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻷَﺣَﺪِﻧَﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻌْﺘَﺒَﺔِ " ﻣَﺎ ﻟَﻪُ، ﺗَﺮِﺏَ ﺟَﺒِﻴﻨُﻪُ
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) গালি-গালাজকারী, অশালীন ও অভিশাপদাতা ছিলেন না। তিনি আমাদের কারো উপর নারাজ হলে, কেবল এতটুকু বলতেন, তার কি হলো? তার কপাল ধুলাময় হোক। সহীহুল বুখারী: ৬০৩১, ৬০৪৬
কোন বান্দার মন্দ কথা প্রচার না করাঃ
ﻻ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺠَﻬْﺮَ ﺑِﺎﻟﺴُّﻮﺀِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝِ ﺇِﻻ ﻣَﻦْ ﻇُﻠِﻢَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻤِﻴﻌًﺎ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ
মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ ভালবাসেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। আন-নিসা, ৪/১৪৮
কোন বান্দা সম্পর্কে মিথ্যা পরিহার করাঃ
ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ
আর মিথ্যা কথা পরিহার কর। আল-হাজ্জ, ২২/৩০
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﺃَﻻَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺑِﺄَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮِ . " ﻗَﺎﻝَ " ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ . " ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ " ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ"
আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেন, মিথ্যা কথা বলা কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। সহীহ মুসলিম: ১৬২
অপর বান্দার সাথে কথা ও কাজে মিল থাকাঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟِﻢَ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻻ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ ﻛَﺒُﺮَ ﻣَﻘْﺘًﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻻ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ
হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না? আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে, তোমরা এমন কথা বল যা তোমরা কর না। আস-সাফ, ৬১/২-৩
কোন বান্দার প্রতি হিংসা না করাঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
ﺃَﻡْ ﻳَﺤْﺴُﺪُﻭﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻫُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻦ ﻓَﻀْﻠِﻪِ
‘তবে কি তারা লোকদের প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে কিছু দান করেছেন? (নিসা ৪/৫৪)
অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী বলেন,
ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪُ ﻣَﺬْﻣُﻮﻡٌ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒُﻪُ ﻣَﻐْﻤُﻮﻡٌ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺍﻟْﺤَﻄَﺐَ
‘হিংসা নিন্দনীয় এবং হিংসুক ব্যক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হিংসা সকল নেকী খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে’ (কুরতুবী)।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ( ﷺ ) বলেছেন,
ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﺴَﺪَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ، ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺍﻟْﺤَﻄَﺐَ
‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেকিকে খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন খেয়ে ফেলে কাঠের খড়ি’। (আবূ দাউদ: ৪৯০৩)
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺠْﺘَﻤِﻌَﺎﻥِ ﻓِﻰْ ﻗَﻠْﺐِ ﻋَﺒْﺪٍ ﺍﻹِﻳْﻤَﺎﻥُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﺪُ
‘কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না’। (নাসাঈ হা/৩১০৯, সনদ হাসান)
‘আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ( ﷺ ) বলেন,
ﻟَﺎ ﺗَﺤَﺎﺳَﺪُﻭﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺎﻏَﻀُﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘَﺎﻃَﻌُﻮﺍ، ﻭَﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ
‘তোমরা কারও প্রতি বিদ্বেষভাব রেখ না। পরস্পর হিংসা করো না। বিচ্ছেদভাব রেখ না। বরং আল্লাহর বান্দা হয়ে একে অন্যের ভাই হয়ে যাও’। (মুসলিম: ২৫৫৯; বুখারী : ৫১৪৩)
যামরাহ বিন ছা‘লাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন,
ﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﺤَﺎﺳَﺪُﻭْﺍ
‘মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা না করবে’। (ত্বাবারাণী হা/৮১৫৭; ছহীহাহ হা/৩৩৮৬)
বান্দার দোষ গোপন করাঃ
রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেছেন;
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﺧُﻮ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ، ﻻَ ﻳَﻈْﻠِﻤُﻪُ ﻭَﻻَ ﻳُﺴْﻠِﻤُﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻓَﺮَّﺝَ ﻋَﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻛُﺮْﺑَﺔً ﻓَﺮَّﺝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻛُﺮْﺑَﺔً ﻣِﻦْ ﻛُﺮُﺑَﺎﺕِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﺘَﺮَ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন। (সহীহুল বুখারী: ২৪৪২, ৬৯৫১)
বান্দার হক নষ্ট করলে তা হতে ক্ষমা চাওয়ার উপায়ঃ
১. যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. এখন যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন; সেই ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। (এই নজীর মক্কা বিজয়-এর পরে দেখা যায়)
৩. এখন, যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছে বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না; অপরাধটি আর্থিক ক্ষতি বিষয়ক হয়; তবে সমপরিমাণ অর্থ কোন ভাল কাজে দিয়ে দিতে হবে। (যেমন; মসজিদ নির্মাণ) আর আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ হয় যেমন: অহংকার, হিংসা, ঘৃণা করা, গালি দেয়া, হেয় করা ইত্যাদি এর মত হয় তাহলেও সাদকায়ে জারিয়ায় কোন খাতে তার জন্য ব্যয় করতে হবে আর আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাসূল ( ﷺ ) বলেন: ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫)
৪. উপরের কোন ভাবেই ক্ষমা না চাইলে, তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে এবং বান্দার হক তাকে নিজের নেকী দেয়ার বিনিময়ে কিংবা ঐ বান্দার গুনাহের বোঝাা বহন করার বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে।
উপসংহারঃ অতএব অন্যের অধিকার খর্ব হতে পারে এরূপ অতীব ক্ষুদ্র কাজ হতেও বিরত থাকা মুমিন বান্দার অবশ্যই কর্তব্য। কোন ছোট খাট যুলুমকে মোটেই ছোট মনে করা উচিত নয়। প্রতিটি মুমিনকে বান্দার হকের প্রতি সচেনত হওয়া প্রয়োজন। কারণ বলা যায় না, সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত, আদায় করেও আপনিই হাদীসে ঐ অভাবী ব্যক্তির মতো জাহান্নামী হয়ে যান কিনা? আল্লাহু আলাম।
সংকলনঃ মোহাম্মাদ সাইদুর রহমান
এম. এ. (ইসলামিক স্টাডিজ)
0 Comments